থমথমে সেট! চোখে জল নাটোরের রাণী ভবানীর। সঙ্গে কেঁদে চলেছেন রাজা রামকান্তর মা বৌদি সকলে। আসলে এই পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের কেউ। কী চলছে স্টার জলসার 'রাজরাজেশ্বরী রাণী ভবানী'র শুটিং ফ্লোরে? জানতে আজকাল ডট ইন পৌঁছে গিয়েছিল ইন্দ্রপুরী স্টুডিওতে। 

 

হাসি-কান্নায় জমজমাট 


সেটে ঢুকতেই থমথমে ব্যাপার! তবে পরিচালক কাট বলার পরই সম্পূর্ণ অন্য ছবি। হাসির রোল উঠল সেটের মধ্যে। একদিকে মজার গান গাইছেন রাজা রামকান্তর মা অর্থাৎ অভিনেত্রী অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে একে অপরের সঙ্গে খুনসুটি করে চলেছেন মানসী সেনগুপ্ত এবং রাজনন্দিনী পাল, সঙ্গ দিচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা মিত্র। যদিও পর্দায় তাঁরা একে অপরকে একেবারেই সহ্য করতে পারেন না কিন্তু বাস্তবের সবচেয়ে বেশি খুনসুটি চলে মানসী এবং রাজনন্দিনীর। সকলের কথায়, "আমরা এই ভাবেই শুটিং করি, সারাক্ষণ দারুণ মজা করি। তবে শুটিং শুরু হলেই আমাদেরকে আর চেনা যাবে না।" 

 

অ্যাকশন-বিভ্রাট


চোখে গ্লিসারিন দিয়ে বারবার কান্নার দৃশ্যে অভিনয় করতে গিয়ে চোখ লাল হয়ে উঠেছে 'ভবানী' ওরফে অভিনেত্রী রাজনন্দিনীর। প্রথমবার এমন একটি চরিত্রে অভিনয়। তাঁর কান্না দেখে নাকি কান্না পায়ে মায়েরও, হেসে জানালেন রাজনন্দিনী। নায়িকার কথায়, "আমার কান্না দেখলে মায়ের খুব কান্না পায়, আসলে মা আমাকে সেই ভাবে কখনও কাঁদতে দেখেননি। বাবা-মা আমাকে যেভাবে মানুষ করেছেন সত্যি কথা বলতে কী যে কোনও কঠিন পরিস্থিতি আমি পেরিয়ে আসতে পারি। খুব সহজে আমাকে ভেঙে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে জীবনে দু'বার এরকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। প্রথম হল দাদুর চলে যাওয়া, দ্বিতীয় হল কোভিডের সময় মা যখন অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন, আমি সত্যিই তখন ঠাকুরের কাছে সারাক্ষণ চেয়ে যেতাম মা যেন সুস্থ হয়ে যায়। কারণ মা ছাড়া আমি সত্যিই কিছু বুঝিনা। পর্দার মতোই ঠাকুরের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক, তবে সেই সময়টা আমি বদলে গিয়েছিলাম। এই দুটো পরিস্থিতি আমাকে আগের থেকে অনেকটা পরিণত করেছে। এরপর যে কঠিন সময় আসুক, হার্ট ব্রেক, বন্ধুর চলে যাওয়া, বা কাজের ক্ষেত্রেও যে কোনওকিছু, সবকটাই আমি সামলে উঠতে পারব।" তবে অ্যাকশন দৃশ্যে শুটিং করতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে অভিনেত্রী রাজনন্দিনী পালকে। তাঁর কথায়, "আসলে আমি লেফটি অর্থাৎ বা হাতে সব কাজ করি। স্বাভাবিকভাবেই যুদ্ধের দৃশ্যের সময় আমার বাঁ হাত আগে এগিয়ে যায়, কিন্তু শুটিংয়ে তো সেটা করা যাবে না। বাঁ হাতে ভবানী তলোয়ার চালাচ্ছেন একি আর সম্ভব? বাঁ হাতে ভবানী খাবার দিচ্ছেন, এগুলো তো সেই সময়ের কুসংস্কার এবং প্রায় অনর্থ হওয়ার মতো! তাই মাথায় রেখে সব কিছু করা আমার জন্য খুব কঠিন। যদিও এখন অনেকটাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। এমনকী বাড়িতেও আমি ডান হাতে খাবার বেড়ে দিই।" 

 


ছোটপর্দায় প্রথমবার 


এই ধারাবাহিকের মাধ্যমেই ছোটপর্দায় প্রথমবার অভিনয় করছেন রাজনন্দিনী পাল। এর আগে বিভিন্ন মাধ্যমে অভিনয় করলেও এই ধরনের চরিত্র তার জন্য প্রথমবার। দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কেটে যাচ্ছে স্টুডিওতে, প্রথমদিকে রোজ দিন শুটিং করা তার স্কুল যাবার মত মনে হলেও পরে রাজনন্দিনী বলেন, "যখন দেখি অভিনয় করতে পারছি, অথচ কত মানুষ কাজের অভাবে ভুগছেন, শিল্পী হোক বা কলাকুশলী কাজ করতে চেয়েও করতে পারছেন না। তখন মনে হয় যেটা করতে পারছি সেটা আমার কাছে আশীর্বাদ। তখন আর শুটিংয়ে আসতে মন খারাপ লাগে না।" সেটের প্রত্যেকের সঙ্গে এই কয়েক মাসেই দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে রাজনন্দিনীর। মাঝেমধ্যে অবশ্য দেখা যাচ্ছে 'রামকান্ত' ওরফে অভিনেতা সায়ন বসুকেও। কারণ রাজা স্বপ্নে দেখা দিচ্ছেন ভবানীকে। সেই দৃশ্যের শুটিংয়ের জন্য সেটে থাকছেন সায়ন। সায়নের সঙ্গেও বেশ ভাল সম্পর্ক রাজনন্দিনীর। অনেকেই প্রশ্ন করছেন এরপর কী রাজা ফিরে আসবে, বা ফিরলেও কীভাবে ফিরবেন। সেই সম্বন্ধে রাজনন্দিনীর তেমনভাবে কিছু জানা না থাকলেও আপাতত পর্দায় তিনি অন্তঃসত্ত্বা। নায়িকার কথায়, "সেই সময় মহিলারা নিজেদের দুঃখ কেন, কোনও অনুভূতি প্রকাশ করতে পারতেন না। তাই সেই ভাবেই সেই মানুষদের কথা মাথায় রেখে আমাকে অভিনয় করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি বা এই চরিত্র আমার জন্য প্রথমবার। অনেক কিছু শিখতে পারছি।"