লন্ডনে অরিজিৎ সিংয়ের কনসার্টে রোমাঞ্চ আর ধাক্কা একসঙ্গে। ভারতের জনপ্রিয় গায়ক অরিজিতের সাম্প্রতিক লন্ডন কনসার্টে ভক্তরা যেমন মুগ্ধ হয়েছেন, তেমনই শেষে হতাশও হয়েছেন এক অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে।

শোয়ের আবহ চরমে পৌঁছায় যখন অরিজিতের কণ্ঠে ‘সাইয়ারা’ ছবির সাইয়ারা  গানটি শোনা যায়, যা মূলত ফাহিম আবদুল্লাহ গেয়েছিলেন। অগুনতি দর্শকও সেই সময় আবেগে আচ্ছন্ন হয়ে তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়েছিলেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো।

কিন্তু হঠাৎই সব পাল্টে যায়—একটি ভাইরাল ভিডিওয় দেখা যায়, গান চলার মাঝপথেই হঠাৎ মঞ্চের আলো নিভে যায়, আর শব্দ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। হতভম্ব দর্শকরা ধীরে ধীরে ভেন্যু ছেড়ে বেরিয়ে যেতে শুরু করেন, কারণ তাঁরা আরিজিতের বিদায় সম্ভাষণও শুনতে পাননি।

কিন্তু কেন এমন হল?
লন্ডন স্টেডিয়ামে নিয়ম, রাত সাড়ে দশটার মধ্যে বন্ধ করতে হবে অনুষ্ঠান। অর্থাৎ ‘কারফিউ’ সময় পেরিয়ে গেলেই যেনতেনপ্রকারেণ থামাতে হবে আসর।  জানা গিয়েছে, সেই নিয়ম মেনেই নাকি বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ পরিষেবা।

এই ঘটনাটি ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা। অনেক ভক্ত তাঁদের ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করেছেন, কারণ কনসার্টের সঠিক সমাপ্তি তাঁরা চাক্ষুষ করতে পারেননি। অনেকের মতে, এমন আকস্মিকভাবে আলো-শব্দ বন্ধ হয়ে যাওয়া তাঁদের সুন্দর অভিজ্ঞতাকে নষ্ট করে দিল।
অন্য দিকে, কিছু মানুষ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকেই সমর্থন করেছেন। তাঁদের যুক্তি, লন্ডনের স্টেডিয়ামগুলোতে রাতের কঠোর কারফিউ নিয়ম দীর্ঘদিনের প্রচলন, এবং তা মানা ভেন্যুর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। তাই আরিজিতের পারফরম্যান্স যতই জনপ্রিয় হোক না কেন, নিয়ম অমান্য করা সম্ভব নয়।

একজন লিখেছেন, ‘নিয়ম নিয়মই। তা মানতেই হবে’। আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘আর কোথাও যদি না-ও হয়, তবে এখানে অন্তত কর্তব্য পালন করতে দেওয়া উচিত।’ অন্য একজনের মতে, সেখানে শব্দদূষণকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়, রাতের কারফিউ ভাঙলেই অভিযোগ জানানো হয়। উপরন্তু, আরিজিতও দেরিতে মঞ্চে এসেছিলেন, যা অনুষ্ঠানের শেষ সময়কে আরও পিছিয়ে দেয়। 

অন্যদিকে, একজন ভক্ত দাবি করেছেন, এটা আসলে অরিজিতের কৌশল, কারণ তিনি ভারতে আয়োজিত প্রায় সব কনসার্টেই এমনভাবে অনুষ্ঠান শেষ করেন—সবচেয়ে জনপ্রিয় গান গাওয়ার পর দর্শকদের দিয়ে সমবেতভাবে শেষ অংশটি গাওয়ান, সঙ্গে থাকে আতশবাজি। আয়োজক এবং ভেন্যু কর্তৃপক্ষকে সমর্থন করে আরও মন্তব্য এসেছে। যেখানে বলা হয়েছে যে, নিয়মের বাইরে কিছুই হয়নি। হঠাৎ সমাপ্তি সত্ত্বেও আরিজিতের পরিবেশনা, বিশেষ করে তাঁর সাইয়ারা গানের অনবদ্য উপস্থাপনা সকলের মনে রেশ রেখে গিয়েছে। 

অরিজিতের কণ্ঠের জাদু ভক্তদের হৃদয়ে এমন এক আবেশ সৃষ্টি করেছে, যা হয়তো কোনও নিয়ম বা পরিস্থিতি থামিয়ে দিতে পারে না। একটি সন্ধ্যার হঠাৎ সমাপ্তি হয়তো কিছুটা অসন্তুষ্টি দিয়েছে, কিন্তু অরিজিতের সঙ্গীতের রেশ সেই সীমাবদ্ধতাকে নিমেষেই উড়িয়ে দিয়েছে। তাই এখনও মঞ্চে তাঁর গান আর উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা জারি।