অনুরাগ কাশ্যপ মানেই সোজাসাপটা, কাটা-কাটা কথাবার্তা। শিল্পীর আপোষহীন মেজাজ বারবার উঠে এসেছে খবরের শিরোনামে। ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’-এর পরিচালক রাখঢাক না রেখে জানিয়েছেন, বলিউডের উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে হিন্দি ছবির ইন্ডাস্ট্রি ছাড়ছেন তিনি! পাশাপাশি এও জানালেন এবার থেকে তাঁকে দেখা যাবে দক্ষিণী ছবির জগতে। বলিপাড়ার ছবি তৈরির মানসিকতাকে তীব্র নিন্দা করেছিলেন তিনি। এবার এক বলি-তারকাকে একহাত নিলেন অনুরাগ! 


আজকের বলিউড যেন আলো–আড়ম্বরের এক জাঁকজমক রাজ্য। একেকটি ছবির বাজেট এখন আকাশছোঁয়া, অথচ পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপের চোখে এই ঝলমলে দুনিয়ার ভিতরে লুকিয়ে আছে এক গভীর অসুখ - ‘অপ্রয়োজনীয় খরচ আর অহংকারে মোড়া সংস্কৃতি’। সম্প্রতি  এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে মুখ খুলে ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’-এর পরিচালক জানালেন, এখন ফিল্ম সেটে সৃজনশীলতার চেয়ে বাড়তি ভ্যানিটি আর ম্যানেজমেন্টের চাপই বেশি। অনুরাগের কথায়, “আগে ছবিতে রূপটান, রূপসজ্জা ছিল একটা বিভাগ, কিন্তু এখন প্রত্যেক অভিনেতার নিজস্ব মেক-আপ আর্টিস্ট, হেয়ারস্টাইলিস্ট, পিআর, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার লাগে। আগে এক ভ্যানেই সবাই বসত, এখন একটাই অভিনেতার তিনটে ভ্যান! একটা বিশ্রামের, একটা আড্ডা-বৈঠকের আর একটা সহকারীদের জন্য!”

কাশ্যপের কথায়, এই ‘এনটুরাজ কালচার’ এতটাই গ্রাস করেছে ইন্ডাস্ট্রিকে যে কাজের চেয়ে নিয়ম বড় হয়ে উঠেছে। একবার এক অভিনেতাকে তিনি সরাসরি ভাষা নিয়ে ওয়র্কশপ করার জন্য ফোনে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন। অভিনেতা সে টেক্সটের পাল্টা কোনও উত্তর দেননি, বরং তাঁর সাতজন ম্যানেজার এসে হাজির হয়েছিলেন অনুরাগের কাছে। “তাঁরা আমাকে হাবভাব দেখিয়ে বলল, 'আপনি কী করে সরাসরি অভিনেতাকে মেসেজ করেন?' তখনই বুঝলাম, সিনেমা নয়, এখন ‘ম্যানেজমেন্ট’ই আসল নায়ক।” সেই ঘটনার ফল কী হল? অনুরাগ কাশ্যপ সেই প্রজেক্টই ছেড়ে দেন! “চিত্রনাট্যটা লিখেছিলাম, কিন্তু ওদের উপহার দিয়ে দিলাম। ওই বড় তারকাটি কে ছিল, তাঁর নাম এখন নেব না।”

তবে এই প্রথম নয়, আগেও আনুরাগ বলেছিলেন, তারকাদের বাড়তি চাহিদা কীভাবে বাজেট ফুলিয়ে দেয়। এক সাক্ষাৎকারে হাসতে হাসতে অনুরাগ বলেছিলেন, “একজন অভিনেতার জন্য রাঁধুনি এসেছিল, দিনে দু’লাখ টাকা চার্জ! খাবারটা এত ছোট ছিল যে মনে হচ্ছিল পাখির খাবার!”
তাঁর মতে, সমস্যা টাকায় নয়, মানসিকতায়- “আগে সবাই একসঙ্গে কাজ করত, এখন সবাই আলাদা ভ্যানে বসে। সিনেমা এখন আর শিল্প নয়, এক লজিস্টিক প্রজেক্ট।”

কাশ্যপের সোজাসাপটা বক্তব্য যেন এক আয়না যেখানে আজকের বলিউড নিজেরই প্রতিচ্ছবি দেখে। বিলাসিতার চকচকে মোড়কে হারিয়ে যাচ্ছে সেই সহজ, দলবদ্ধ, নিখাদ সিনেমা, যেখান থেকে একদিন উঠে এসেছিল ওয়াসেপুর, দেব ডি, আগলি-র মতো সব বাস্তবধর্মী মনকেমন করা ছবি আর এক খাঁটি গল্প বলিয়ে অনুরাগ কাশ্যপ।