বাংলা তথা ভারতীয় নাটকের নতুন অধ্যায় শুরু তাঁর হাত ধরেই। আরও ভাল করে বললে, দেশীয় নাটকের খোলনলচেই একা হাতে বদলে দিয়েছিলেন তিনি, বাদল সরকার। সেই নাট্যব্যক্তিত্ব বাদল সরকারকে গুরু মানেন অঞ্জন দত্ত। পরিচালক মৃণাল সেনেরও আগে 'পাগলা ঘোড়া'র স্রষ্টার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। অঞ্জন জানিয়েছেন, বাদল সরকারের কাছে কাজ শেখার জন্যেই মৃণাল সেনের নির্দেশে ক্যামেরার সামনে যখন তিনি প্রথমবার দাঁড়িয়েছিলেন, তখনই তাই আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিলেন।  চলতি বছর চলছে বাদল সরকারের জন্মশতবার্ষিকী। এই মহীরুহ নাট্যবক্তিত্বর জন্মশতবর্ষে তাঁকে সম্মান জানিয়ে তাঁকে নিয়ে একটি ছবি তৈরি করছেন অঞ্জন। ছবির নাম অঞ্জন দিয়েছেন, ‘সারা দিন, সারা রাত্তির।’ এই ছবিতে অঞ্জনকেই বাদল সরকারের চরিত্রে দেখা যাবে। তবে বাদলের ছোটবেলার চরিত্রে অভিনেতা বাছাইয়ে থাকছে চমক। গায়ক শ্রীকান্ত আচার্যর পুত্র পূরব শীল আচার্য অভিনয় করবেন এই ছবিতে। চলতি মাসেই শুরু হয়ে গিয়েছে শুটিং। এই ছবি মূলত বাদল সরকারের জীবনের নানান অজানা ঘটনা এবং তাঁর সঙ্গে অঞ্জনের সম্পর্কের গল্প-ই বলবে। 

 

এই ছবি নিয়ে যে অঞ্জন দারুণ আশাবাদী, সেকথা বলাই বাহুল্য। ৭২বছর বয়সে এসে, এই ছবিতে অঞ্জন তাঁর সেই যৌবনের বাদলকে শ্রদ্ধা জানাতে চাইছেন সম্পূর্ণ নিজের মতো করে। তাঁর বাদল সরকারকে। অঞ্জন দত্ত জানান, তাঁর যখন উনিশ বছর বয়স তখন বাদল সরকার ছিলেন তাঁর প্রথম অভিনয়ের গুরু। তাই পরিচালক-অভিনেতার মনে হয়েছে ওকে নিয়ে কাজ করতেই হবে, আর এটাই ওঁর শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে। অঞ্জনের বিশ্বাস, অনেকেই তাঁকে আবার নতুন করে ফিরে পাবেন। এই বিষয়ে সমাজমাধ্যমের পাতায় একটি নাতিদীর্ঘ পোস্টও করেছেন তিনি। 

 


অঞ্জন লিখছেন, “১৯ বছর বয়েসে আমার বাদল সরকার এর সঙ্গে প্রথম পরিচয়। ওনার বয়স তখন ৫০ ঊর্ধ হবে। আমি তার কাছে বায়না করেছিলাম আমকে অভিনয় শেখাতে। উনি প্রথমে ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিলেন। আমি কিছুতেই ওনাকে ছাড়তে চাইনি। উনি তারপর রাজি হয় আমাকে নানা রকম অদ্ভুত workshop এর মাধ্যমে অনেক কিছুই শিখিয়েছিলেন, যার দৌলতে আমি চিনতে পেরেছিলাম নিজেকে। আমি জানতে পেরেছিলাম আমি কি করতে চাই। ... আর আমাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমি যা কিছু করতে পেরেছি তার ভীত টা বাদল সরকার তৈরি করে দিয়েছিলেন। 

 

 

তিনি কেন তার নিজের মতো করে আমাকে কাছে টেনে নিয়ে আমাকে আমার ভেতরের “আমি” টাকে চিনিয়েছিলেন, আমি জানি না। তিনি কোনোদিন বলেননি তার নাটকের দল, অর্থাৎ শতাব্দী তে, যোগ দিতে। তার দলের সঙ্গে নানা workshop করা সত্ত্বেও। তিনি আমার জন্য একটা আলাদা জায়গা দিয়েছিলেন। আমি তাকে ভীষণ, খুব ভালবেসে ফেলি। জীবনে কাউকে অতটা ভালবাসিনি।

 

একটু একটু করে আমি আমার নিজেকে খুঁজে পাই। আমি কি চাই। কে আমি...বাদলের কাছ থেকে সরে আসার পর, আমার যৌবনের, বদলের জন্য চেপে রাখা অনেক ভালবাসা, ছেলেমানুষি বুকের ভেতরে নিয়ে আমি নিজের মতো করে চলেছি। নাটক, সিনেমা, গান...যদি ভাল বা বেপরোয়া কিছু করে থাকি তার কারণ বাদল।”  

 

 

 

পোস্টের একেবারে শেষে তাঁর সংযোজন, “এই বছর বাদল সরকারের নামে!”