বলিউডের ইতিহাসে প্রেমের যত রহস্যময় গল্প আছে, অমিতাভ বচ্চন আর রেখার সম্পর্ক তার মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘজীবী এবং চর্চিত এক কাহিনি। বছর কেটে গেছে, যুগ বদলেছে, কিন্তু তাঁদের অনির্বচনীয় রসায়ন ও সম্পর্কের গুজব আজও ভক্তদের কৌতূহলের শেষ নেই।যদিও দু’জনের কেউই কখনও প্রকাশ্যে এই সম্পর্কের কথা স্বীকার করেননি, তবু সময়ের পর সময় নানা ঘটনার মাধ্যমে গুজবের আগুন আবারও জ্বলে উঠেছে। একসময় প্রয়াত রাজনীতিক অমর সিং এক ঘটনায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন—অমিতাভ-রেখার মধ্যে সত্যিই ‘কিছু’ ছিল।
আরও পড়ুন: জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল না মেজর মোহিত শর্মা, ‘ধুরন্ধর’-এ কার চরিত্রে রয়েছেন রণবীর?

প্রয়াত অমর সিং ছিলেন তাঁর সমসাময়িক ভারতীয় রাজনীতির প্রভাবশালী ও বিতর্কিত এক নাম। সমাজবাদী পার্টির শীর্ষ নেতাদের অন্যতম, যিনি রাজনৈতিক কূটচালে ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ইয়াসির উসমানের লেখা বই ‘রেখা: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’-তে অমর সিং মন্তব্য করেছিলেন, “একবার শাবানা আজমির জন্মদিনে আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। আমি, জয়া আর অমিতাভ তিনজনে একসঙ্গে পৌঁছেছিলাম ওঁর বাড়িতে। তখনও সন্ধ্যা গড়ায়নি। অমিতাভ তাঁর গাড়িচালককে বলেছিলেন—‘তুমি গিয়ে খেয়ে নাও, আমাদের সময় লাগবে।’ কিন্তু বাড়ির ভেতরে ঢুকেই আমরা দেখি, সেই অনুষ্ঠানে ইতিমধ্যেই হাজির হয়েছেন রেখা।”
তারপরই ঘটে সেই অপ্রত্যাশিত ঘটনা। “রেখাকে দেখেই অমিতাভ ঘুরে বাইরে বেরিয়ে গেলেন,” দাবি করেছিলেন অমর সিং। “গাড়িচালক তখন খেতে গিয়েছেন, তাই আমরা তাড়াহুড়ো করে ট্যাক্সি ডাকলাম, উঠে পড়লাম ট্যাক্সিতেই, আর সোজা বাড়ি ফিরে এলাম।”

অমর সিং জানান, তিনি সরাসরি অমিতাভকে কিছু জিজ্ঞেস করেননি, কিন্তু মনে মনে প্রশ্নটা ঘুরছিলই যে কেন তিনি অন্তত শাবানা আজমিকে একবার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে পারলেন না? তাঁর কথায়, “এতে স্পষ্টই বোঝা যায়, ওঁদের মধ্যে কিছু একটা ছিল... যদি কিছু না-ই থাকত, তাহলে অন্তত রেখার সঙ্গে বন্ধুসুলভভাবে কথাবার্তা তো বলতেই পারতেন অমিতাভ!”
এই ঘটনাই আবারও বলিউডের অন্যতম বড় রহস্যকে জিইয়ে তোলে -অমিতাভ আর রেখার সম্পর্ক আসলে কতটা গভীর ছিল?
অমর সিং আরও জানিয়েছিলেন, একবার হেমা মালিনী তাঁকে এই বিষয়ে সাহায্য করতে অনুরোধ করেছিলেন। “হেমাজি একদিন বলেছিলেন, ‘তুমি তো অমিতাভকে ভাইয়ের মতো মানো, আর রেখা আমার বন্ধু। তুমি এই বিষয়টি নিয়ে কিছু করতে পারবে?’” কিন্তু অমর সিং জানান, যতই অমিতাভের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকুক না কেন, তিনি এই বিষয়টিতে জড়াতে চাননি। আর অমিতাভ বচ্চনও এত বছর পরেও এই প্রসঙ্গে কখনও মুখ খোলেননি।
উল্লেখ্য, রেখা ও অমিতাভের সম্পর্কের গুঞ্জন প্রথম শুরু হয় সাতের দশকের শেষ দিকে, যখন দু’জনেই বলিউডের শীর্ষ তারকা। ‘দো অঞ্জানে’ (১৯৭৬), ‘মুকাদ্দর কা সিকন্দর’ (১৯৭৮), ‘মি. নটবরলাল’ (১৯৭৯) প্রতিটি ছবিতেই তাঁদের অনস্ক্রিন রসায়ন ছিল আগুনের মতো। কিন্তু সেই আগুনের ছায়া বাস্তব জীবনেও পড়েছিল বলে মনে করেন অনেকেই।
১৯৮১ সালে যশ চোপড়া পরিচালিত ‘সিলসিলা’ ছবিতে যখন অমিতাভকে দেখা গেল নিজের স্ত্রী জয়া বচ্চন এবং প্রেমিকা রেখার সঙ্গে একই ফ্রেমে, তখন গুজবের আগুনে যেন পেট্রোল ঢেলে দিয়েছিলেন খোদ পরিচালক। ছবির গল্পটা অনেকের কাছেই বাস্তব জীবনের প্রতিবিম্ব মনে হয়েছিল।
এবং এটাই ছিল অমিতাভ-রেখার শেষ ছবি একসঙ্গে। আর সেদিনের শাবানা আজমির জন্মদিনের অনুষ্ঠানের সেই পার্টির রাত যেখানে রেখাকে দেখেই কেন নীরবে বেরিয়ে গিয়েছিলেন অমিতাভ, রয়ে গেল বলিউডের ইতিহাসে আজও এক রহস্য হয়ে।
