বর্তমানে টলিপাড়ায় মঞ্চের পাশাপাশি ধারাবাহিকে একসঙ্গে কাজ করতে গেলেই বড়সড় বিপাকে পড়ছেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। ধারাবাহিক থেকে আচমকা বাদ পড়ে যাচ্ছেন তাঁরা। অভিনেত্রী তুলিকা বসু, অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তীর ধারাবাহিক থেকে কাজ হারানো সেই দিকেই ইঙ্গিত করে। এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে সমাজমাধ্যমে মুখ খুলেছিলেন অভিনেত্রী রূপাঞ্জনা মিত্র। অবশ্য সেখানেই থেমে থাকেননি অভিনেত্রী। একবার এক বাংলা নন-ফিকশন শো-এ কাজ করে কী দুরবস্থা হয়েছিল তাঁর সেকথাও সমাজমাধ্যমে সোজাসাপটা জানিয়ে দিলেন অভিনেত্রী।  

 

আরও পড়ুন: দেশ থেকে বহু দূরে শীতের শহরে প্রেমে ভেজা হৃতিক–সাবা! রোম্যান্টিক ছবির সঙ্গে যৌথভাবে কী ঘোষণা করলেন দু’জনে?

 

সমাজমাধ্যমে অভিনেত্রী তিনি লিখেছেন, “একটি ননফিকশন শো হতো দশ অবতার.. তাতে একটি অবতার ছিলাম আমি সীতা রূপে..কমেডি শো..কিন্তু সীতা কে স্লীভলেস, Halter পড়াতো আমার অদ্ভুত লাগায়ে ডিরেক্টর দাদা আরেক বড়ো হনু আমাকে যা নয় তাই বলে..” 
(পোস্টের বানান অপরিবর্তিত রাখা হল) 

 


গোটা বিষয়টি জানতে রূপাঞ্জনা মিত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আজকাল ডট ইন। অভিনেত্রী বললেন, “২০০৪ বা ২০০৫ সালে রূপসী বাংলা চ্যানেলে একটি নন-ফিকশন শো চালু হয়েছিল ‘দশ অবতার’। মূলত কমেডি শো ছিল সেটি। সেই শো-তে অনেক নামকরা শিল্পীর একটি করে অবতার তৈরি করা হয়েছিল। তবে সেখানে শুধু দুইজন মহিলা অবতার ছিল- সীতা এবং বুলা দি। বাকি আরও সব নানান চরিত্র যেমন অরণ্যদেব, রামদেব-কে কামদেব করা হয়েছিল...এরকম আর কী।”

“এটি মূলত ছিল একটি কমেডি শো এবং প্রতিযোগিতা। তখন আমি ইন্ডাস্ট্রিতে একেবারে নতুন। সবে বছর চারেক কাজ করেছি। তাই ওই শো-এর পরিচালকের কথার উপর পাল্টা কথা বলার সাহস ছিল না। যাই হোক, প্রথমে বুঝতাম না কেন এই শো-টি করে অস্বস্তি হচ্ছে। পরে বুঝলাম, ওই শো-তে সংলাপের উপর অবাধ ছাড় ছিল। অর্থাৎ আমার অভিনীত চরিত্রের সংলাপে প্রচুর চটুল শব্দ থাকত, দ্ব্যর্থবোধক অর্থাৎ ‘ডাবল মিনিং লাইন’ বহনকারী শব্দও থাকত! মানে রাখা হত।  এছাড়াও ওই শো-তে ছিল সংঘাতিক চাপ। আসলে, প্রতিযোগিতা ছিল তো তাই কে হবে সেরা কমেডিয়ান -সেই স্ট্রেস। ওই শোয়ের ফাইনালে আমি চতুর্থ স্থানে শেষ করেছি। সবশেষে আমার মানসিক টানাপোড়েন এই জায়গায় চলে গিয়েছিল যে আমার নার্ভ ফেইল হয়েছিল, কারণ আমাকে সেই টেলিভিশন শো-এর সীতা অবতার নিয়ে নানানভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছিল। স্লিভলেস পোশাক পরতে হত। সেই দেবী সীতা, যাকে আমরা ছোটবেলা থেকে চিনি, তার প্রকৃতি থেকে একেবারে আলাদা এবং অদ্ভুত!”

প্রশ্ন ছিল, আটের দশকের শেষে ‘মহাভারত’ ধারাবাহিকে দ্রৌপদী চরিত্রে অভিনয় করাকালীন রূপা গাঙ্গুলিও স্লিভলেস পোশাক পরেছেন? তাহলে পোশাকে ক্ষেত্রে সমস্যাটা কী ছিল? অভিনেত্রীর উত্তর, “রুপা গাঙ্গুলি যে পিরিয়ড-ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলেন, তা মহাকাব্যের নির্যাস থেকে তৈরি ছিল, কমেডি নয়। আমার শো-টা কমেডি ছিল।”


এরপর রূপাঞ্জনার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছিল, কে সেই পরিচালক? আজও কি তিনি টলিপাড়ায় পরিচালক হিসেবে কাজ করে চলেছেন? সেই পরিচালকের নাম ফাঁস না করলেও রূপাঞ্জনা দাবি করলেন টলিপাড়ায় ধারাবাহিক, শো-এর শুটিংয়ে কাজ করা একজন শিল্পীর পক্ষে মোটেই সহজ নয়। শুটিংয়ের পরিবেশে শিল্পীদের সঙ্গে নির্মাতাদের অসহযোগিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। অভিনেত্রীর কথায়, “ওই পরিচালক এখনও সিরিয়ালের মতো সিনেমা বানান, এবং তার নীতি হল ‘হেনস্থা করা’। সেই সময়ে আমি যদি আজকের রূপাঞ্জনা হতাম, তাহলে সেই পরিচালকের গালে দু’টো চড় কষিয়ে মারতাম! তখন বাংলায় বাম জমানা ছিল বলে অত সাহস পেয়েছিল সেই পরিচালক।”


তা এত বছর পর কেন এই বিষয়টি নিয়ে আওয়াজ তুললেন তিনি? জবাবে রূপাঞ্জনা বললেন, “অবশ্যই তিক্ত অভিজ্ঞতার স্মৃতি-ই এর মূল কারণ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এই ধরনের এই ধরনের অপদার্থ এবং দু'মুখো সাপদের-ই ছবি বানাতে বলা হয়। এরা যতই খাজা ছবি বানাক না কেন!” তারপরেই সেই পরিচালকের উদ্দেশ্যে ভেসে আসে অভিনেত্রীর তীব্র শ্লেষ, “উনি একজন মহান অভিনেতা, তাই শাহরুখ খানকে নকল করে অভিনয় করেন এবং পরিচালনার সময় কথার ভাঁজে মানুষকে বোকা বানাতে, হাতের পুতুল বানাতে ভাল-ই পারেন। আর এই ধরনের মানুষকেই ইন্ডাস্ট্রির কিছু মানুষ মাথায় নিয়ে নাচে। জানিয়ে রাখি, সেই পরিচালকের স্ত্রী কিন্তু একজন সাংবাদিক। 

কে সেই পরিচালক, যাঁরা বোঝার তাঁরা বুঝতে পারবেন।”