প্রায়শই শিরোনামে থাকেন অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। তাঁকে ঘিরে নিরন্তর চর্চা চলে সমাজমাধ্যমেও।  শুধু পর্দায় নয়, বাস্তব জীবনেও নিজস্ব শর্তে চলতেই পছন্দ করেন অভিনেত্রী। অবশ্য বেশিরভাগ সময়েই তাঁর ইমেজ একেবারে পাশের বাড়ির মেয়ের মতো। স্টারডমের পরোয়া করেন না কণামাত্র। কখনও খানিক আলুথালুভাবেই নিজের পোষ্যকে নিয়ে চিকিৎসা করাতে যান, তো কখনও অবলীলায় মুম্বইয়ের রাস্তায় অটো করে ঘুরে বেড়ান। বোনের সঙ্গে আবার টুক করে উঠে পড়েন কলকাতার বুকে চলতে থাকা কোনও রিক্সায়। সমাজমাধ্যমে প্রায়শই খোলাখুলিভাবেই নিজের মনের কথা জানান স্বস্তিকা।  বড়দিন তারকারা যখন চুটিয়ে উপভোগ করেন, জমজমাটভাবে কাটান, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় তখন জনপ্রিয় অভিনেত্রী হয়েও এই দিনটি কাটান একটু অন্যভাবে। এই উৎসব তিনিও পালন করেন তবে ঘরোয়াভাবে, একটু অন্যরকমভাবে। সারাদিন জুড়ে তো নয়-ই। এদিন তাঁর কেমন গেল, তাঁর সান্তা-ই বা হলেন কে -সেসব কিছুই ফেসবুকের পাতায় তিনি ভাগ করে নিয়েছেন তিনি অনুরাগীদের সঙ্গে।

 


ব্যস্ত সকালের ঝক্কি–ঝামেলা সামলে একের পর এক কাজ সারতে বেরিয়েছিলেন তিনি। প্রথমে মিটিং, তারপর বন্ধুর বাড়ি যাওয়া, এরপর সাবিত্রী ও দময়ন্তীকে নিয়ে পেট কার্নিভালে যাওয়া, পুরো দিনটাই যেন ছুটতে থাকা সময়ের সঙ্গে দৌড়। এরপর হাতে পার্স আর পেপারব্যাগ নিয়ে উবেরে উঠতেই, তাঁকে দেখে চালকের মুখে একগাল হাসি। যাত্রাপথেই জানা গেল, চালকের নাম সৈকত দাস। তিনি তাঁর কাজ, সিনেমা দেখা আর প্রিয় অভিনেত্রীকে নিয়ে গল্প করলেন; যাত্রা শেষেও সেই উষ্ণতা থেকেই গেল।

 

সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু দুই ঘণ্টা পর হঠাৎ ঝটকা লাগে স্বস্তিকার, তাঁর জিনিসপত্র ঠাসা দু’টি ব্যাগের একটি কই? মুহূর্তে আতঙ্ক গ্রাস করল অভিনেত্রীকে। ক্যাফেতে কি ফেলে এলেন? না কি বাড়িতেই রয়ে গিয়েছে?  শেষে নিশ্চিত হওয়া গেল, ব্যাগ রয়ে গেছে সেই উবেরেই। সেই গাড়ি থেকে নামার সময় পরপর ফোনকল আসায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন অভিনেত্রী। খানিক তাড়াহুড়ো করেই চালককে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে নেমে পড়েন। আর গাড়ির আসনে ফেলে আসেন দু'টি ব্যাগের একটি। গাড়ির পরিষেবার দপ্তরের  হেল্পলাইনে কল, চেষ্টা, উৎকণ্ঠা কিন্তু মিলছিল না কোনও উত্তর। অথচ ব্যাগে ছিল সাবিত্রী ও দময়ন্তীর জন্য জমিয়ে রাখা ট্রিটস, বিশেষ কিছু মিষ্টি, উপহার -এক কথায় অনেক যত্নের জিনিস। ধীরে ধীরে মনখারাপ হয়ে যাচ্ছিল অভিনেত্রীর। 

 

ঠিক তখনই জ্বলে ওঠে আশার আলো। এক অচেনা নম্বর থেকে ফোন। অপর প্রান্তে সেই মানুষটি, উবেরের চালক সৈকত। জানালেন, ব্যাগ তিনি নিরাপদেই রেখেছেন। বুঝতেই পেরেছিলেন, বারবার কল মানেই নিশ্চয়ই স্বস্তিকা-ই তাঁকে খুঁজছেন। তাই তিনিও চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন যোগাযোগের। ঠিক হল বেহালার নির্দিষ্ট একটি জায়গায় দেখা হবে। দিনভর দৌড়ঝাঁপ শেষে পৌঁছে দেখা গেল, একগাল হাসি, হাতে সেই ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সৈকত। ব্যাগ পেয়ে স্বস্তিকা ফের পেলেন এক অসাধারণ আশ্বাস, যা তিনি ফেসবুকের পাতায় লিখলেন, “মানুষের প্রতি মানুষের ভরসা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। তাই তো তিনি লিখলেন, আমাদের রোজকার জীবনে সৈকত-রাই সান্তা ক্লজ। যারা মানুষের প্রতি মানুষের আস্থা, ভরসা, ভালবাসা বাঁচিয়ে রাখে।
ভাগ্যিস মাটির কাছেই থাকি, নাহলে এমন সব সৈকত–রূপী সান্তাদের সঙ্গে দেখা হতো কই?
সবাইকে জানাই - মেরি ক্রিসমাস”

 

 

 

এরপর  সৈকতের সঙ্গে অভিনেত্রী ছবি তুলতে চাইলে, পাল্টা প্রশ্ন করেন সৈকত, “আমার সঙ্গে ছবি তুলবেন কেন?” স্বস্তিকার মতে,কারণটা সহজ। সমাজের ভুল, অসভ্যতা, অনিয়ম আমরা যত দ্রুত ভাইরাল করি, তত দ্রুত কি আমরা উদ্‌যাপন করি সঠিকতা, সততা, মানবিকতা? সৈকতদের গল্পও তো ছড়িয়ে পড়া উচিত। কারণ এঁরাই প্রতিদিন আমাদের জীবনের অদেখা সান্তা যারা আস্থা ফেরায়, ভালবাসা বাঁচিয়ে রাখে।

 

 

ক্রিসমাসের ঠিক আগে এমন ঘটনা যেন উৎসবের আসল অর্থটা নতুন করে মনে করিয়ে দিল মানুষের ভালোত্ব এখনও বেঁচে আছে। স্বস্তিকার কথায়, “আর সুযোগ পেলেই আমরাও যেন কারও জীবনে একটা ছোট্ট সান্তা হয়ে উঠতে পারি।”