যৌন হয়রানি, প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেলের অভিযোগে চাঞ্চল্য কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। আরও ভাল করে বললে, এক অভিনেত্রীর গুরুতর অভিযোগে তোলপাড় কন্নড় ইন্ডাস্ট্রি। যৌন হয়রানি, জোরজবরদস্তি এবং আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক হেমন্তকে গ্রেফতার করেছে রাজাজিনগর থানার পুলিশ।
দক্ষিণী বিনোদন জগতে নেমেছে তীব্র আলোড়ন। কন্নড় অভিনেতা, পরিচালক ও প্রযোজক হেমন্তকে গ্রেফতার করেছে বেঙ্গালুরুর রাজাজিনগর থানার পুলিশ, এক অভিনেত্রীর দায়ের করা বিস্ফোরক অভিযোগের ভিত্তিতে। অভিনেত্রী অভিযোগ করেছেন, হেমন্ত তাঁকে যৌন হয়রানি, জোরজবরদস্তি, আর্থিক প্রতারণা এবং হুমকি দিয়েছিলেন।
অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২২ সালে এক প্রযোজকের মাধ্যমে ওই অভিনেত্রীর সঙ্গে হেমন্তের পরিচয় হয়। এরপর হেমন্ত তাঁর পরবর্তী ছবি ‘রিচি’-তে নায়িকার ভূমিকায় তাঁকে অফার দেন।চুক্তি অনুযায়ী, অভিনেত্রীকে ২ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা ছিল— যার মধ্যে অগ্রিম ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। তবে অভিযোগ, ছবির শুটিং বিলম্বিত হওয়ার পর থেকেই হেমন্তের আচরণ বদলে যায়। তিনি অভিনেত্রীকে " অশ্লীল পোশাক" পরতে বলেন এবং "অশ্লীল দৃশ্য" শুট করতে জোর করতে থাকেন। অভিনেত্রীর দাবি, তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও হেমন্ত বারবার শারীরিকভাবে তাঁর ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন এবং মুম্বই সফরের সময় তাঁকে মানসিকভাবে হেনস্তা করেন।
মুম্বই ট্রিপ নিয়েও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার দাবি করেছেন ওই অভিযুক্ত। অভিনেত্রীর অভিযোগ, ছবির প্রচারের অজুহাতে হেমন্ত তাঁকে মুম্বই নিয়ে যান।সেখানে একদিন হেমন্ত তাঁর অজান্তে মকটেলে অ্যালকোহল মিশিয়ে দেন এবং পরে তাঁর ব্যক্তিগত ভিডিও ও ছবি তুলে রাখেন। অভিনেত্রীর দাবি, যখন তিনি এর প্রতিবাদ করেন, তখন হেমন্ত দুষ্কৃতী দিয়ে তাঁকে ও তাঁর মাকে হুমকি দেন, এমনকী পারিশ্রমিকের বাকি টাকার চেকও বাউন্স করিয়ে দেন।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ, অভিনেত্রীর অনুমতি ছাড়াই হেমন্ত ছবির কিছু ‘আনসেন্সরড’ দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করেন, যা অভিনেত্রীর সম্মানহানির সমান।ওই অভিনেত্রী অভিযোগ করেছেন, “ওই দৃশ্যগুলো আমার সম্মতি ছাড়াই ছড়ানো হয়েছে। এটা শুধু পেশাগত নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও আমাকে গভীরভাবে আঘাত করেছে।”
অভিনেত্রীর এই অভিযোগের ভিত্তিতে রাজাজিনগর থানায় এফআইআর দায়ের হয়েছে।পুলিশ হেমন্তকে গ্রেপ্তার করে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠিয়েছে।এক তদন্তকারী আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমরা অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। অভিনেত্রীর দেওয়া ডিজিট্যাল প্রমাণ—ভিডিও, মেসেজ ও কল রেকর্ড—সবকিছু পরীক্ষা করা হচ্ছে।” সূত্রের খবর, অভিনেত্রী ও হেমন্তের মধ্যে ছবির প্রচার ও আর্থিক বকেয়া নিয়ে আগেও বিবাদ তৈরি হয়েছিল, যা পৌঁছেছিল ফিল্ম চেম্বার অফ কমার্স পর্যন্ত।
ঘটনাটি সামনে আসতেই কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সিনিয়র প্রযোজক বলেন, “এই ধরনের অভিযোগ ইন্ডাস্ট্রির ভাবমূর্তি নষ্ট করে। যদি প্রমাণিত হয়, কঠোর শাস্তি প্রাপ্য।”অন্যদিকে, অভিনেত্রীর সহকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। অনেকেই লিখেছেন, “সাহস করে এগিয়ে আসা সহজ নয়। ওর পাশে আছি।”
আপাতত যা জানা যাচ্ছে, তা এক ঝলকে -
অভিযুক্ত: অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজক হেমন্ত
অভিযোগ: যৌন হয়রানি, প্রতারণা, ডিজিটাল ব্ল্যাকমেল, হুমকি
মামলা: রাজাজিনগর থানায় এফআইআর
বর্তমান পরিস্থিতি: বিচারবিভাগীয় হেফাজতে, তদন্ত চলছে
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কন্নড় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন করে শুরু হয়েছে নারী-সুরক্ষা ও নৈতিকতার আলোচনাও। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও পক্ষের মন্তব্যে ভরসা না করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পুলিশ আরও জানিয়েছে, অভিযোগের সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিনেত্রীর দাবি ও ডিজিটাল প্রমাণের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
