হিন্দি সিনেমার প্রথম সারির পরিচালকরা তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চাইতেন না—এমনই অকপট স্বীকারোক্তি করলেন আমির খান। এক লিডারশিপ সামিট-এ অভিনেতা বলেন, ‘কয়ামত সে কয়ামত তক’ সুপারহিট হওয়ার পর রাতারাতি তারকা হয়ে উঠলেও তিনি পছন্দের পরিচালকদের কাছ থেকে কাজের প্রস্তাব পাননি।

আমিরের কথায়, “অনেক ছবির প্রস্তাব পেতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু যাঁদের সঙ্গে সত্যি কাজ করতে চেয়েছিলাম, তাঁদের কাছ থেকে কোনও প্রস্তাবই আসছিল না। আমার একটি লিস্ট ছিল—কিন্তু তাঁদের কেউই আমাকে ডাকেননি।”

সেই সময় সুপারহিট ডেবিউয়ের পরও পরিচালকরা এ-গ্রেড কোনও তারকা হিসাবে তাঁকে ভাবতে চাননি বলেই জানান অভিনেতা। ফলে বাধ্য হয়েই আট-ন’টি ছবিতে সই করেছিলেন তিনি। কিন্তু শুটিং শুরু হতেই বুঝেছিলেন, বড় ভুল করেছেন। “আমি একই সময়ে দু’তিনটে কাজ করতে পারি না,” বলেন আমির। ‘লাভ লাভ লাভ’, ‘অওয়াল নম্বর’, ‘তুম মেরে হো’, ‘জওয়ানি জিন্দাবাদ’—কেরিয়ারের প্রথম দিকে একটির পর একটি ফ্লপ আসে তাঁর ঝুলিতে।

এই সময় আমিরকে ‘ওয়ান ফিল্ম ওয়ান্ডার’-এর তকমা দেয় মিডিয়া। অভিনেতার কথায়, তিনি নিজেই কর্মজীবনের সিদ্ধান্ত নিয়ে এতটাই অসন্তুষ্ট ছিলেন যে প্রতিদিন সন্ধ্যায় শুটিং থেকে ফেরার পর কেঁদে ফেলতেন। তখনই সিদ্ধান্ত নেন—পরিচালক, চিত্রনাট্য ও প্রযোজকের ওপর বিশ্বাস না থাকলে আর কখনও কোনও ছবি করবেন না।

কেরিয়ারের সেই নিম্নমুখী সময়েই মহেশ ভাট একটি ছবির প্রস্তাব দেন। তাঁকে নিয়ে কাজ করতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত চিত্রনাট্য ভাল না লাগায় প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন আমির। “ভাট সাহেবকে ‘না’ বলা তখন অনেক বড় ঝুঁকি ছিল। কিন্তু মন মেনে নেয়নি,” বলেন তিনি। সেই সিদ্ধান্তই পরে তাঁকে ‘লগান’, ‘তারে জমিন পর’-এর মতো ছবিতে কাজ করার সাহস দিয়েছে বলে মত অভিনেতার।

আমিরের মতে, “আমার কেরিয়ার একসময় শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেই মনে হয়েছিল। সেই অবস্থায়ও নিজের বিশ্বাসের সঙ্গে আপোস করিনি—এটাই আমার টার্নিং পয়েন্ট।”

উল্লেখ্য, শেষবার আমির খানকে দেখা গিয়েছে আর এস প্রসাদ পরিচালিত ‘সিতারে জমিন পার’-এ। সিনেমাটি থিয়েটারে মুক্তির পরে ওটিটি এড়িয়ে ইউটিউবে পে-পর-ভিউ মডেলে প্রকাশ করেছিলেন অভিনেতা।

বলিউডে ‘স্টার’ হওয়া যত কঠিন, তার থেকেও কঠিন সৎ থাকা নিজের পছন্দ আর বিশ্বাসের প্রতি। ‘ওয়ান ফিল্ম ওয়ান্ডার’ ট্যাগ থেকে আজ বিশ্বের অন্যতম বিশিষ্ট ভারতীয় অভিনেতায় পরিণত হওয়ার এই পথচলায় তিনি উপলব্ধি করেছেন, সাফল্য কখনওই শর্টকাটে আসে না। ভুল সিদ্ধান্ত, ব্যর্থতা, হতাশা—সব কিছুর মধ্য দিয়েই তৈরি হয় প্রকৃত পথ। ঠিক যেভাবে তিনি ‘থ্রি ইডিয়টস’-এ বলেছিলেন, “সাফল্যকে তাড়া কোরো না। উপযুক্ত তৈরি হও। সাফল্য নিজেই তোমার কাছে ধরা দেবে।”