বলিউডে ছবি মুক্তি মানেই বক্স অফিসের দাপাদাপি। কিন্তু সেই টাকার লভ্যাংশের সংখ্যার আড়ালে কতটা সত্যি, কতটা সাজানো? এই চিরচর্চিত প্রশ্ন নিয়েই এবার সরব হলেন আমির খান। খোলাখুলি জানালেন, তিনি নিজের ছবির সাফল্য বা ব্যর্থতা নিয়ে কোনও দিনই মিথ্যে বলেন না। যদিও স্বীকার করলেন, ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই ভুয়ো কর্পোরেট বুকিং কিংবা ফাঁপা প্রচারণার মাধ্যমে সাফল্যের ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করতে দ্বিধা করেন না!

সম্প্রতি, দেওয়া সাক্ষাৎকারে আমির বলেন,“আমার ছবির ব্যবসার যে অঙ্কটা আসে, ঠিক সেটাই প্রকাশ্যে দিই। নিজের টিমকে সোজাসাপটা  নির্দেশ দিয়ে দিই যেন কোনও ভুল বা মিথ্যে সংখ্যা বাইরে না যায়। ব্যবসায় মিথ্যে বলে কোনও লাভ নেই।”

কর্পোরেট বুকিংয়ের ভাঁওতা নিয়ে সোজাসুজি আলোচনা করেন ‘মিঃ পারফেকশনিস্ট’। সেই সাক্ষাৎকারে যখন প্রশ্নকর্তা ইঙ্গিত দেন যে ইন্ডাস্ট্রির ৯০ শতাংশ প্রযোজক-পরিবেশক কর্পোরেট বুকিং করেন, তখনও কাউকে সরাসরি আক্রমণ করতে চাননি আমির। তবে যুক্তি খাড়া করলেন, “প্রত্যেকের নিজস্ব বাধ্যবাধকতা আছে। মানুষ ভাবে—আমি ছবি বানিয়েছি, ব্যবসা আমার, কেন বলব এটা চলেনি? যদি সবাই ভাবে ছবি হিট হয়েছে, তবে আরও বিনিয়োগ আসবে। কিন্তু এটা খুবই স্বল্পস্থায়ী। জনতাকে এক-দু’বার বোকা বানানো যায়, ইন্ডাস্ট্রিকে নয়। শেষমেশ সবাই আসল সত্যিটা জেনেই যায়।”

নিজের সাফল্য নিয়েও খোলাখুলি মন্তব্য করেছেন ‘লগান’ ছবির নায়ক-প্রযোজক। আমিরের সাম্প্রতিক ছবি সিতারে জমিন পার (পরিচালনা: আর. এস. প্রসন্ন)—স্প্যানিশ ব্লকবাস্টার ক্যাম্পিয়নস–এর অফিশিয়াল হিন্দি রিমেক। এখানে আমিরকে দেখা গিয়েছিল গুলশন অরোরা নামে এক বাস্কেটবল কোচের ভূমিকায়, যিনি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্কদের দলকে প্রশিক্ষণ দেন। ছবিটি বিশ্বব্যাপী ২৬৩.৪২ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে।

এরপর রাজিনীকান্ত অভিনীত 'কুলি'–তে বিশেষ উপস্থিতি এবং এখন সামনে রয়েছে আরিয়ান খানের পরিচালনায় প্রথম ছবি ‘ব্যা*ডস অফ বলিউড–এ একটি ক্যামিও চরিত্র, যা মুক্তি পাবে ১৮ সেপ্টেম্বর নেটফ্লিক্সে।

আমির খানের স্পষ্ট বার্তা—বক্স অফিসের মিথ্যে ঝলকানি দিয়ে কেউই স্থায়ী বিশ্বাস জিততে পারে না। সত্যিই যদি দর্শকের ভালবাসা পেতে হয়, তা আসবে খাঁটি সিনেমার শক্তি থেকেই।

অন্যদিকে, ভ্যানিটি ভ্যান থেকে জিম ট্রেনার— অতিরিক্ত খরচের বোঝা প্রযোজকদের ঘাড়ে চাপানো লজ্জাজনক, বলি-তারকাদের কড়া সমালোচনায় আমির।  প্রযোজকদের ঘাড় ভেঙে বলিউডে তারকাদের বাড়াবাড়ি রকমের বিলাসিতা নিয়ে রাখঢাক না রেখেই এবার মুখ খুললেন আমির খান। সম্প্রতি, এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা স্পষ্ট জানালেন— অনেক তারকা আছেন যাঁরা প্রযোজকদের ঘাড়ে এমন সব খরচ চাপিয়ে দেন, যার সঙ্গে সিনেমা বানানোর কোনও যোগই নেই।ভ্যানিটি ভ্যান, লাইভ কিচেন, এমনকী  ব্যক্তিগত ড্রাইভার বা ঘরোয়া সাহায্যকারীদের বেতন পর্যন্ত প্রযোজকদের দিয়ে দেওয়ানো হচ্ছে বলে দাবি আমিরের। এই প্রবণতাকে তিনি আখ্যা দিলেন “লজ্জাজনক ও ইন্ডাস্ট্রির জন্য ক্ষতিকর”।

“আমার ড্রাইভার, আমার দায়িত্ব”, সোজাসাপটা মন্তব্য আমিরের। মিঃ পারফেকশনিস্ট-এর কথায়, “আমি নিজের উপার্জনে দিব্যি আছি। আমার গাড়িচালক বা সহকারীকে কেন প্রযোজক টাকা দেবেন? তারা তো আমার জন্য কাজ করছে, ছবির জন্য নয়। এখন তো শুনছি তারকাদের জিম ট্রেনার, কুক, এমনকী টিভির  বিলও প্রযোজক দিচ্ছেন! আগামীতে কি আমার ছেলের স্কুল ফিও প্রযোজক দেবেন?”