৮২ বছর বয়সেও বাহাদুরগড় জান্ডিয়া গ্রামের বৃদ্ধা মহিন্দর কউর। পিঠ বেঁকে গিয়েছে বছরের পর বছর মাঠে কাজ করতে করতে, হাঁটেন ধীরে ধীরে — তবুও মনোবল একটুও কমেনি। কারণ, তিনি লড়ে যাচ্ছেন বলিউড অভিনেত্রী এবং হিমাচল প্রদেশের মান্ডি থেকে বিজেপি সাংসদ কঙ্গনা রানাউতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানহানির মামলাটি শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে।
২০২০-২১ সালের কৃষক আন্দোলনের সময় এক টুইটে মহিন্দর কৌরকে ‘১০০ টাকার প্রতিবাদকারী’ বলে ব্যঙ্গ করেছিলেন কঙ্গনা। সেই বিতর্কিত মন্তব্যের জেরেই মামলাটি। সোমবার ভাটিন্ডা আদালতে হাজির হয়ে কঙ্গনা নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ৫০ হাজার টাকার জামিননামায় জামিন পান।
অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির হতে না পারলে দৃঢ় কণ্ঠে মহিন্দর কৌর বলেন, “ও (কঙ্গনা) আমাকে কখনও দেখেনি, আমার সঙ্গে কখনও কথা বলেনি। আমি ওকে ক্ষমা করব না। ও একজন বড় অভিনেত্রী, রাজনীতিকও বটে, আর আমি একজন সাধারণ কৃষক। অথচ এই বয়সে আমাকে আদালতে আসতে হচ্ছে ওর কারণে। ওর একবার আদালতে আসা মানে সরকারের হাজার হাজার টাকা খরচ হয়, সাধারণ মানুষকেও অসুবিধা পোহাতে হয়। ও বলে ওর মন্তব্য ভুল বোঝা হয়েছিল, কিন্তু সেটা মিথ্যে।”
মহিন্দরের পক্ষ থেকে আদালতে হাজির ছিলেন তাঁর স্বামী লভ সিং। দম্পতি এখন তাঁদের একমাত্র ছেলে গুরদাসের সঙ্গে একটি পুরনো ঘরে থাকেন, যা গ্রামের বাসস্ট্যান্ডের কাছেই। তাঁদের প্রায় ১৩ একর জমি আছে, আর কিছু গরু-মোষ রাখেন সংসার চালানোর জন্য।
গুরদাসের গুরুতর শারীরিক সমস্যা আছে। সব সময় মূত্রনালি ব্যাগ ব্যবহার করতে হয়। তিনি বলেন, “মা সারাজীবন মাঠে কাজ করেছেন, এখন খুব দুর্বল হয়ে পড়েছেন। বাবা-ও বৃদ্ধ। আমি যতটা পারি, সাহায্য করি। আমরা একজন শ্রমিক রেখেছি জমিতে কাজের জন্য।”
লভ সিংয়ের কথায়, “লড়াইটা তো লড়তেই হবে। ও (কঙ্গনা) আদালতে ক্ষমা চেয়েছে ঠিকই, কিন্তু কী হবে, সেটা ঈশ্বরই জানেন। ঈশ্বর সাহস আমাদের দিয়েছেন, নইলে আমরা কিছুই না।”
অনেকেই মনে করছেন, এই সাধারণ কৃষক পরিবারের কাছে এই মামলা খ্যাতি বা রাজনীতির বিষয় নয় — এটি মর্যাদার লড়াই। বয়স, অসুস্থতা, বা অভাব— কোনও কিছুই মহিন্দরকে থামাতে পারেনি। নিজের সম্মান রক্ষার জন্য তিনি এখনও লড়ে যাচ্ছেন।
কঙ্গনা বলিউডের অন্যতম প্রতিভাবান এবং বিতর্কিত অভিনেত্রী হিসাবে পরিচিত। ২০০৬ সালে ‘গ্যাংস্টার’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেকের পর তিনি ‘কুইন’, ‘তনু ওয়েডস মনু’, ‘ফ্যাশন’, ‘মণিকর্ণিকা’ এবং ‘থালাইভি’র মতো চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী এই অভিনেত্রী নিজের স্পষ্টভাষী মনোভাব এবং রাজনৈতিক মন্তব্যের জন্য প্রায়ই শিরোনামে থাকেন। বর্তমানে তিনি হিমাচল প্রদেশের মান্ডি কেন্দ্র থেকে বিজেপি সাংসদ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।
