আজকাল ওয়েবডেস্ক: ডিমের দাম বাড়ছে হু-হু করে। ভারতের বেশ কয়েকটি শহরে ডিমের দাম অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ডিমের দামে ক্রেতা বিক্রেতা- উভয়ই অবাক! কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই থেকে শুরু করে পাটনা, রাঁচি সর্বত্র, খুচরা বাজারে এখন প্রতি পিস ডিমের দাম সাড়ে আট টাকা। অনেক জায়গায় তারও বেশি। কেন শীতে এতটা বাড়ল ডিমের দাম?
যে ডিম সাধারণত প্রতি পিস সাত থেকে সাড়ে সাত টাকায় বিক্রি হয়, তার দাম এই বছর অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে। ডিসেম্বর মাস চলছে, জানুয়ারি মাস এখনও বাকি, তাই অনেকেরই আশঙ্কা অস্বস্তির আরও বাকি আছে। আরও বাড়তে পারে ডিমের দাম।
ইতিমধ্যেই দাম আগের মাসগুলোর তুলনায় অনেকটা বেশি:
আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের তুলনায় বড় শহরগুলোতে ডিমের দাম ইতিমধ্যেই ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের বাকি আরও কয়েক সপ্তাহ, তাই স্বল্প মেয়াদে দাম স্থিতিশীল থাকতে পারে বা আরও বাড়তে পারে।
পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে বর্তমান এই বৃদ্ধি হঠাৎ করে ঘটেনি। গত বছর কিছু অঞ্চলে সরবরাহ এতটাই কম ছিল যে, ভোক্তাদের ডিম খুঁজে পেতেই হিমশিম খেতে হয়েছিল। দীর্ঘ সময় ধরে কম দাম থাকার পর- এই বছরের চড়া দাম ডিম ব্যবসায়ীদের হাহাকার পুষিয়ে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাড়তি চাহিদা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে:
দাম বাড়ার নেপথ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হল চাহিদা বৃদ্ধি। উত্তরপ্রদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট নবাব আকবর আলির কথায, ডিসেম্বর মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ডিমের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। তার মতে, এই প্রবণতা কোনও একটি রাজ্য বা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশেই প্রতিদিন প্রায় সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় কোটি ডিমের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি ডিম অন্য রাজ্য থেকে আনা হয়। উত্তরপ্রদেশের খুচরা বাজারে ডিম প্রতি পিস আট থেকে দশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যেখানে পাইকারি দাম প্রতি ডিম প্রায় সাড়ে সাত টাকায় পৌঁছেছে।
অনেক শহরে পরিবহন খরচ আরও চাপ বাড়িয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ডিমের পাইকারি দাম প্রতি পিস ডিমে আরও ১৫ থেকে ২০ পয়সা বাড়তে পারে। জানুয়ারি মাসে ডিম প্রতি পিস প্রায় সাড়ে আট টাকায় বিক্রি হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দাম কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডিম ব্যবসায়ীরা বলছেন বর্তমান দাম ন্যায্য
ডিম ব্যবাসায়ীদের যুক্তি, প্রতি পিস ডিমের দাম আট টাকা হওয়া উচিত নয়। পোল্ট্রি ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি রণপাল ধান্ধা বলেছেন, এই দাম অবশেষে পোল্ট্রি খামারিদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে পশুখাদ্যের দাম বেশি থাকলেও ডিমের দাম কম ছিল। ফলে অনেক খামারি তাদের পোল্ট্রি ইউনিট বন্ধ করে দেন। সেই কারণে উৎপাদন কমে যায়। ধান্ধা বলেন, এই বছর খামারিরা যদি ভাল দাম না পেতেন, তাহলে ভবিষ্যতে ডিমের সহজলভ্যতা আরও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারত।
ধান্ধা আরও উল্লেখ করেছেন যে, পোল্ট্রি খাদ্যের প্রধান উপাদান ভুট্টা ও সয়াবিনের দাম প্রায় প্রতি বছর বাড়লেও ডিমের দাম বাড়ে না। সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধি সত্ত্বেও, ভারতে ডিমের দাম পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সস্তা।
পাইকারি বাজারে ডিম সবচেয়ে সস্তা কোথায়?
ন্যাশনাল এগ কো-অর্ডিনেশন কমিটির (এনইসিসি) তথ্য অনুযায়ী, নামাক্কাল এবং হসপেক্ট- ভারতের এই দুই জায়গায় সর্বনিম্ন পাইকারি দামে ডিম বিক্রি হয়। এই বাজারগুলোতে প্রতি ১০০টি ডিম প্রায় ৬৪০ থেকে ৬৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দু'টি কেন্দ্র ভারতের বৃহত্তম ডিমের বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিশেষ করে নামাক্কাল একটি প্রধান কেন্দ্র এবং দেশ থেকে ডিম রপ্তানির একটি বড় অংশই এখান থেকে হয়ে থাকে।
আপাতত, আম জনতাকে শীতের বাকি সময়টা বেশি দামেই ডিম কিনতে হবে। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে গরম বাড়লে ডিমের চাহি দা কমতে পারে, তখন ডিমের দামে কিছুটা স্বস্তি মেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
