আজকাল ওয়েবডেস্ক: টাটা ট্রাস্টসে সাম্প্রতিক অস্থিরতা ভারতের কর্পোরেট দুনিয়ায় নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ট্রাস্টির একাংশ, মেহলি মিস্ত্রির নেতৃত্বে, টাটা ট্রাস্টসের সহ-সভাপতি ও ট্রাস্টি বিজয় সিংহকে পুনর্নিয়োগের বিরোধিতা করেছেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে ১৩৩ বছর পুরনো টাটা ট্রাস্টসের ভিতরেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বিভাজনের রেখা। ঘটনাটি টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রতন টাটা এবং প্রয়াত সাইরাস মিস্ত্রির মধ্যে দীর্ঘদিনের আইনি লড়াইয়ের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।


২০১৬ সালের অক্টোবরে সাইরাস মিস্ত্রিকে টাটা সন্সের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন, তবে ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্ট টাটাদের পক্ষে রায় দেয়। এখন, রতন টাটার মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ না হতেই ট্রাস্টের অভ্যন্তরে নতুন ক্ষমতার দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে—এবার মিস্ত্রি পরিবারেরই অন্য সদস্য মেহলি মিস্ত্রির নেতৃত্বে।


এখনও পর্যন্ত এই দ্বন্দ্ব আদালতে পৌঁছায়নি, তবে কেন্দ্রের নজরে এসেছে। ৭ অক্টোবর, টাটা ট্রাস্টসের চেয়ারম্যান নোয়েল টাটা, টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেখরন এবং দুই ট্রাস্টিকে সঙ্গে নিয়ে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সরকারের লক্ষ্য ছিল ভারতের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম কর্পোরেট সংস্থাগুলির একটির এই অস্থিরতা থামানো।

আরও পড়ুন: সাপের কামড় নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিল এই রাজ্য, কী সুবিধা হবে সকলের


টাটা ট্রাস্টস বর্তমানে টাটা সন্সে ৬৬ শতাংশ অংশীদারিত্ব রাখে। নোয়েল টাটার শিবিরে রয়েছেন টিভিএস গ্রুপের ভেনু শ্রীনিবাসন এবং বিজয় সিংহ, অন্যদিকে মেহলি মিস্ত্রির শিবিরে আছেন প্রমিত ঝাভেরি, জাহাঙ্গীর এইচ.সি. জাহাঙ্গীর ও আইনজীবী দারিয়াস খামবাটা।


বিতর্কের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হল টাটা সন্সের পাবলিক লিস্টিং বা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তি। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) টাটা সন্সকে “Upper Layer NBFC” হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে, যার ফলে কোম্পানিটিকে শেয়ারবাজারে নামতে হবে। কিছু ট্রাস্টি আশঙ্কা করছেন, তালিকাভুক্ত হলে তাদের ভেটো ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং কোম্পানি বাইরের নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকিতে পড়বে।


অন্যদিকে, ১৮.৩৭ শতাংশ অংশীদারিত্বধারী শাপুরজি পালোনজি (এসপি) গ্রুপ ১০ অক্টোবর পুনরায় জানিয়েছে যে, টাটা সন্সের পাবলিক হওয়া উচিত। তাদের মতে, এটি প্রতিষ্ঠাতা জেমসেটজি টাটার স্বচ্ছতা ও আস্থা বজায় রাখার আদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। এসপি গ্রুপের মতে, তালিকাভুক্ত হলে টাটা ট্রাস্টসও উপকৃত হবে, কারণ এতে লাভের বণ্টন আরও স্বচ্ছ ও নিয়মিত হবে, যা সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা সম্ভব হবে।


উভয় শিবিরই রতন টাটার ঐতিহ্য ও নীতিকে নিজেদের পক্ষেই দাবি করছে। বিজয় সিংহ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “রতন টাটা সর্বদা ঐক্যমত্যে বিশ্বাস করতেন। ভোটাভুটি তাঁর আমলে কখনোই হতো না।” তবে এখন পরিস্থিতি বদলেছে—মেহলি মিস্ত্রি ও তাঁর সমর্থকরা সিংহের পুনর্নিয়োগ আটকে দিয়েছেন এই যুক্তিতে যে, তাঁর বয়স ৭৫ ছুঁয়েছে। যদিও টাটা ট্রাস্টসে ট্রাস্টিদের জন্য কোনো অবসর বয়স নির্ধারিত নেই।


১০ অক্টোবর টাটা ট্রাস্টস বোর্ডের বৈঠকে মূলত টাটা সন্সের অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হয়, তবে সূত্রের দাবি, সরকারী হস্তক্ষেপের ফলে একটি সমঝোতার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। যদি দুই পক্ষ নিজেদের অবস্থান নরম করে, তাহলে অস্থিরতা কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু যদি মেহলি মিস্ত্রির শিবির বিজয় সিংহের পুনর্নিয়োগে অনড় থাকে, তবে টাটা ট্রাস্টসের এই ক্ষমতার লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।