আজকাল ওয়েবডেস্ক: রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া এমন এক সময়ে নতুন করে জোগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন গত সপ্তাহে টাকা রেকর্ড সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গিয়েছিল। বাজারের অস্থিরতার মধ্যে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমানো, ডিসেম্বরে ১ লক্ষ কোটি টাকার ওপেন মার্কেট অপারেশন এবং ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাই-সেল সুয়াপ—এই তিনটি পদক্ষেপই RBI-র সাম্প্রতিক লিকুইডিটি প্যাকেজের মূল স্তম্ভ। উদ্দেশ্য একটাই—বাজারের মনোভাব স্থিতিশীল রাখা ও অপ্রয়োজনীয় অস্থিরতা কমানো। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, কেবল লিকুইডিটি বাড়ালেই কি মুদ্রাকে চাঙ্গা করা সম্ভব?
RBI-র নীতির বিশ্লেষণ
দুটি বড় আকারের OMO-র মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় বিপুল পরিমাণ নগদ ঢোকানো হবে। RBI যখন সরকারি বন্ড কেনে, তখন সরাসরি ব্যাঙ্কগুলিকে অর্থ পরিশোধ করে। এর ফলে সিস্টেমে তারল্য বাড়ে, মানি মার্কেটের সুদের হার নরম হয় এবং হঠাৎ কোনও লিকুইডিটি সংকটের আশঙ্কা কমে।
সাধারণত এই পরিস্থিতিতে টাকার ওপর চাপ বেড়ে যায়। কারণ, স্বল্পমেয়াদি তহবিলের দামে অস্থিরতা এলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে। ১ লক্ষ কোটি টাকার OMO-র মাধ্যমে RBI বাজারকে বার্তা দিচ্ছে যে অর্থায়নের পরিস্থিতি মসৃণই থাকবে।
OMO এবং সুয়াপ মিলিয়ে এই পদক্ষেপ GDP বৃদ্ধির লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে। তাঁর মতে, এটি মুদ্রাস্ফীতি বা টাকার অবনতিকে ঘিরে আতঙ্ক থেকে নয়, বরং “ইতিবাচক মনোভাব ও আশার” প্রতিফলন।
৫ বিলিয়ন ডলারের বাই-সেল সুয়াপ সরাসরি মুদ্রা বাজারে প্রভাব ফেলে। RBI এখন ডলার কিনে ভবিষ্যতে তা বিক্রি করার প্রতিশ্রুতি দেয়। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থায়ীভাবে কমে না, অথচ বাজারে টাকার পরিমান বেড়ে যায়। এর ফলে তাত্ক্ষণিক চাপ কমে এবং বাজারে ধারণা তৈরি হয় যে RBI প্রয়োজনে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে প্রস্তুত।
মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি কমেছে, ফলে RBI-র হাতে সুদ কমানোর জায়গা তৈরি হয়েছে। প্রায় ৬৮৬ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ দেখিয়ে দিচ্ছে যে RBI দুর্বলতা থেকে নয়, নিয়ন্ত্রিতভাবে অস্থিরতা সামলাচ্ছে।
টাকা রেকর্ড নিম্নস্তরে পৌঁছেও সুদের হার কমানোয় অনেক বিশ্লেষক অবাক হলেও, এটি একটি স্পষ্ট বার্তা—বর্তমান দরপতন “অতিরঞ্জিত” এবং রুপি এই স্তরে “আন্ডারভ্যালুয়েড”।
তবে বাস্তবতা হল, লিকুউডিটি বাড়ালে টাকা সরাসরি শক্তিশালী হয় না। এটি কেবল বিশৃঙ্খল পতন ঠেকায়। মসৃণ অর্থায়ন ও বৃদ্ধির সমর্থন থাকলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা হঠাৎ বাজার ছাড়তে চান না, ফলে অস্থিরতা কমে।
তবুও, চূড়ান্ত দিশা নির্ভর করবে বিশ্বের পরিস্থিতির উপর—মার্কিন সুদের হার, মূলধন প্রবাহ ও রাজনৈতিক টানাপড়েন। RBI অস্থিরতা কমাতে পারে, কিন্তু বাহ্যিক ধাক্কা পুরোপুরি ঠেকাতে পারে না।
মুদ্রাস্ফীতি বহু বছরের নিম্নস্তরে থাকায় RBI আপাতত একটি বিরল সুযোগ পেয়েছে—বৃদ্ধিকে সহায়তা করা এবং একইসঙ্গে মুদ্রাকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা। আপাতত এই জোগান মূলত স্থিতি ও আস্থা কেনার প্রচেষ্টা। টাকা ঘুরে দাঁড়াবে কি না, তা ভবিষ্যতের গতিপ্রকৃতিই ঠিক করবে।
