‘কান্তারা’—যে ছবি ভারতীয় সিনেমার দর্শককে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার স্বাদ দিয়েছিল, সেই ছবির প্রিকুয়েল ‘কান্তারা চ্যাপ্টার ১’ এখন তৈরি মুক্তির জন্য। অক্টোবর ২০২৫-এ মুক্তি পেতে চলা এই ছবি ইতিমধ্যেই শুটিং শেষ করে ফেলেছে। জাতীয় পুরস্কারজয়ী প্রথম কিস্তির পর স্বাভাবিকভাবেই এই ছবিকে ঘিরে প্রত্যাশা তুঙ্গে।

 

ঋষভ শেট্টি যে এ বার নিজের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে ইতিহাস গড়তে চলেছেন, তা ছবির স্কেল এবং কনটেন্ট—দুটোই স্পষ্ট করে দিচ্ছে। ‘কান্তারা চ্যাপ্টার ১’ শুধুই একটি সিনেমা নয়, এটি দক্ষিণ ভারতের কর্নাটকের তুলু অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন সংস্কৃতি ও ভক্তিপ্রথাকে পর্দায় তুলে ধরার এক প্রয়াস।

 

পাঞ্জুরলি  এবং গুলিগা—প্রাচীন ভৈতাল বিশ্বাসের দুই দেবতা ঘিরেই গল্পের মূল কেন্দ্রে। বলিউড হাঙ্গামার এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ছবিটি মূলত কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে পাঞ্জুরলি দাইভা এবং গুলিগা দাইভা—এই দুই আঞ্চলিক দেবতাকে ঘিরে। তুলু সংস্কৃতিতে এই দুই ভৈতাল দেবতাকে ঘিরে যে পৌরাণিক বিশ্বাস, তা বহু প্রজন্ম ধরে চলে আসছে।

 

পাঞ্জুরলি হলেন শূকর-সদৃশ এক ঈশ্বরসম ব্যক্তিত্ব, যিনি সুরক্ষা ও শান্তির প্রতীক। অন্যদিকে গুলিগা হলেন এক ভয়ংকর এবং শক্তিশালী আত্মা, যিনি রোগ, দুর্ভাগ্য এবং বিশৃঙ্খলার সঙ্গে যুক্ত। এই দুই বিপরীত মেরুর দেবতাকে একত্রিত করে গড়ে উঠছে কান্তারার নতুন অধ্যায়।
ঋষভ শেট্টি আগেই বলেছিলেন, “এই ছবি শুধু একটি গল্প নয়, বরং এটি আমাদের শিকড়, আমাদের অস্তিত্বের এক মহাকাব্যিক অনুসন্ধান।”

 

শোনা যাচ্ছে, পারিশ্রমিকেও  ইতিহাস গেছে এই ছবি! ১০০ কোটি টাকায় ঋষভ শেট্টি, সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ছবির লভ্যাংশেরও।  এই ঐতিহ্য ঘেরা ছবি শুধুই চিত্রনাট্যে নয়, প্রোডাকশনেও বিশাল। কোইমোই-র এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘কান্তারা’র তুলনায় প্রিকুয়েলে ঋষভ শেট্টি ২৫ শতাংশ বেশি পারিশ্রমিক পেয়েছেন। তাঁর মোট পারিশ্রমিক ছুঁয়েছে ১০০ কোটি টাকা—যা বর্তমানে ভারতের অন্যতম সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক।

 

শুধু তাই নয়, তিনি প্রফিট শেয়ারিং চুক্তিতেও ঢুকেছেন, যেটা এখনকার অনেক বড় তারকাদের রেওয়াজ। জানা গিয়েছে, ছবির জন্য অগ্রিম ৫০ কোটি টাকাও পেয়েছেন ঋষভ। ‘কান্তারা চ্যাপ্টার ১’ শুধু দক্ষিণ ভারত নয়, গোটা ভারতীয় সিনেমার দিগন্তে এক নতুন বিশ্বাস, ইতিহাস ও চেতনাকে পর্দায় ফিরিয়ে আনছে।

 

উল্লেখ্য, ঋষভ শেট্টির জন্মদিনে প্রকাশিত হয়েছে ‘কান্তারা: চ্যাপ্টার ১’-এর প্রথম ঝলক — যেখানে দেখা মিলল তাঁর আগুনচোখা, তরবারিধারী এক মধ্যযুগীয় যোদ্ধার রূপে! ২০২২-এর কানতারা যেখানে শেষ হয়েছিল, ‘চ্যাপ্টার ১’ শুরু হবে তার বহু আগে। এই গল্প তুলে ধরবে দেবতা, বিশ্বাস, জমি এবং মানুষের অস্তিত্বের লড়াই— যেখানে প্রকৃতি নিজেই হয়ে ওঠে সাক্ষী এবং শাস্তিকারী।

 

পোস্টারে ঋষভ শেট্টি যেন কোনও এক অতিপ্রাকৃত যুদ্ধের দেবতা, যেখানে বিশ্বাস আর রক্ত একাকার। এ ছবির শুটিংয়ের যাত্রা একেবারেই মসৃণ ছিল না — বন দফতরের নোটিস, নৌকাডুবি, এবং এক জুনিয়র আর্টিস্টের মর্মান্তিক মৃত্যু। তবু সব বাধা পেরিয়ে ঘোষণা এসেছে — ছবির মুক্তি দিন ঠিকই থাকবে। অভিনেতা ও পরিচালক রিশভ শেট্টি-র জন্মদিনে হোমবালে ফিল্মস প্রকাশ করল বহু প্রতীক্ষিত প্রিক্যুয়েল ‘কান্তারা: চ্যাপ্টার ১’-এর প্রথম পোস্টার— আর সেই মুহূর্তেই ঝড় উঠল সোশ্যাল মিডিয়ায়। পোস্টারে দেখা গেল, এক রহস্যঘন, চোখে আগুন ধরা যুদ্ধবাজ রিশভ শেট্টিকে— হাতে তরোয়াল, কাঁধে মহাকাব্যিক রাগ, আর পিছনে তাণ্ডবের আগুন। পোস্টের ক্যাপশনে ছবি প্রযোজনা সংস্থা লিখল — “যেখানে জন্ম নেয় কিংবদন্তিরা, আর জঙ্গলের গর্জন প্রতিধ্বনিত হয় — সেখানেই শুরু কান্তারার মহাকাব্য।”


ঋষভ শেট্টি নিজেই এই ছবির চিত্রনাট্য, পরিচালনা ও মুখ্য অভিনেতার ভূমিকায়। প্রযোজনা করেছেন বিজয় কিরাগান্দুর এবং চালুভে গৌড়া। ছবিতে থাকছে এমন সব যুদ্ধদৃশ্য, যা ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে নজিরবিহীন। সিনেমাটিতে রয়েছে এক বিশাল স্কেল-এ যুদ্ধদৃশ্য— জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কোরিওগ্রাফারের নেতৃত্বে ৫০০ যোদ্ধা এবং ৩০০০ জন অংশগ্রহণকারীর মাধ্যমে হবে সেই দৃশ্যায়ন।

 

চলতি বছরের ২ অক্টোবর, গান্ধী জয়ন্তী এবং দশেরা উপলক্ষে এই প্রিক্যুয়েল বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাবে বড়পর্দায়।