আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুক্রবার মার্কিন ডলারের বিপরীতে ভারতীয় টাকা রেকর্ড পতনের মুখে পড়ে ৮৭.৯৬৫০-তে নেমে আসে। ভারতের পণ্যের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর শুল্ক আরোপে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ এই পতনের প্রধান কারণ। সম্প্রতি ওয়াশিংটন ভারতীয় রপ্তানিপণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে, যা মিলিয়ে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০%, ফলে বাজারে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
তবে টাকার দুর্বলতা এখানেই শেষ নয়। অফশোর চিনা ইউয়ানের বিপরীতে টাকা আরও নেমে ১২.৩৩০৭-এ পৌঁছেছে, যা সাপ্তাহিক ভিত্তিতে ১.২% এবং মাসিক ভিত্তিতে ১.৬% পতন নির্দেশ করছে। গত চার মাসে টাকার মান ইউয়ানের তুলনায় প্রায় ৬% কমেছে।
আরও পডুন: খাটের নিচে কুকুরের সঙ্গে এ কী করছেন মহিলা, খবর প্রকাশিত হতেই চক্ষু চড়কগাছ
শুল্ক বৈষম্যের প্রভাব
অর্থনীতিবিদদের মতে, ভারত ও চিনের প্রতি মার্কিন শুল্ক নীতির বৈষম্য এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। যেখানে ভারতীয় রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক বসানো হয়েছে, সেখানে চিনা পণ্যের ওপর এখনও তুলনামূলকভাবে কম, ৩০% শুল্ক প্রযোজ্য এবং উচ্চতর শুল্ক আরোপ আপাতত স্থগিত।আইডিএফসি ফার্স্ট ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদ গৌরা সেন গুপ্তা বলেন, “টাকার ইউয়ানের বিপরীতে পতন আসলে শুল্ক ফারাকের প্রতিফলন। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে মার্কিন বাজারে চিনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা ভারতের টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও কেমিক্যাল খাতে।”
ইউয়ানের বিপরীতে দুর্বল টাকা মার্কিন শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত ভারতীয় রপ্তানিকারকদের আংশিক স্বস্তি দিতে পারে, কারণ এতে ভারতীয় পণ্য তুলনামূলকভাবে সস্তা হবে চিনা পণ্যের চেয়ে। একই সঙ্গে এটি ভারতের চিনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমাতেও সাহায্য করতে পারে।

আরবিআই-এর অবস্থান
ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) ঘনিষ্ঠভাবে টাকা-ইউয়ান বিনিময় হার পর্যবেক্ষণ করে। এএনজেড ব্যাংকের এফএক্স স্ট্র্যাটেজিস্ট ধীরাজ নিম বলেন, “টাকার ইউয়ানের বিপরীতে পতনকে আরবিআই স্বাগত জানাবে, কারণ এতে ডলারের বিপরীতে বড় কোনও অবমূল্যায়ন ঘটছে না। বরং টাকার ইউয়ানের তুলনায় দুর্বল হওয়া ভারতের জন্য ভালোই।”
এই সপ্তাহে টাকা ইউয়ানের বিপরীতে ১% এর বেশি হারালেও, ডলারের বিপরীতে পতন মাত্র ০.৩%, এবং এটি এখনও মানসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ৮৮ স্তরের ওপরে রয়েছে। ব্যাঙ্কারদের মতে, টাকার ওপর চাপ সামলাতে আরবিআই-এর হস্তক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
এই মুদ্রা অস্থিরতা ভারতের অর্থনীতিকে আরও জটিল অবস্থায় ফেলছে, যা ইতিমধ্যেই ট্রাম্প প্রশাসনের “কঠোর” শুল্কনীতির আঘাতে বিপর্যস্ত। জেফরিজ-এর গ্লোবাল হেড অফ ইকুইটি স্ট্র্যাটেজি ক্রিস উড বলেন, এই ধরনের শুল্কের কারণে ভারতের ক্ষতি ৫৫–৬০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে, যা বিশেষভাবে টেক্সটাইল, জুতা, অলংকার ও রত্ন শিল্পের মতো শ্রমনির্ভর খাতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কের বোঝা সামাল দিতে কার্যত ভেঙে পড়েছে ভারতীয় শেয়ার বাজার। শুক্রবার ফের একবার সকালে বাজার খুলতেই ধস নামল সেনসেক্স এবং নিফটিতে। সেনসেক্স একধাক্কায় নামল প্রায় ৬০০ পয়েন্ট। নিফটিতে পতন হয়েছে ৫০ পয়েন্ট। বাজার খোলার এক ঘণ্টার মধ্যে সেনসেক্স ৬০০ পয়েন্ট নেমে গিয়ে ৮০,৩০০ পয়েন্টে ট্রেড করতে থাকে। ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নিফটিও ৫০ পয়েন্ট নেমে গিয়ে ২৪, ৫৮০ পয়েন্টের আশেপাশে ট্রেড করতে শুরু করে। ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের মধ্যে ১৪টিই আর্থিক ক্ষতির মধ্যে চলছে। আশঙ্কা, বাজার থেকে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা উবে যেতে পারে।

অতিরিক্ত শুল্ক কার্যকর হওয়ার ঠিক আগে মঙ্গলবারেও ধাক্কা খেয়েছিল শেয়ার বাজার। সেনসেক্স ও নিফটি দুটোই ১ শতাংশ করে পড়ে গিয়েছিল। যা গত তিন মাসের মধ্যে সর্বাধিক পতন! বাজার থেকে প্রায় ৫ লক্ষ কোটি টাকা উবে যায়। উল্লেখ্য, ভারতের পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভারতীয় সময়, বুধবার সকাল ৯টা ৩১ মিনিটে তা কার্যকর হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, মার্কিন মুলুকের এই শুল্ক বৃদ্ধি ভারতের ৪৮.২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানিকে সরাসরি প্রভাবিত করবে। অন্যদিকে, শেয়ার বাজারে ইতিমধ্যেই ধস নামতে শুরু করেছে।
