আজকাল ওয়েবডেস্ক: অনেক বিনিয়োগকারী নির্ভরযোগ্য ও স্বল্প-ঝুঁকির বিনিয়োগ হিসেবে ফিক্সড ডিপোজিট বেছে নেন। এতে মূলধন নিরাপদ থাকে এবং মাঝারি হারে সুদ মেলে। সাধারণত এই ধরনের বিনিয়োগে উচ্চ মুনাফার প্রত্যাশা কেউ করেন না; বরং লক্ষ্য থাকে স্থিতিশীল রিটার্ন ও সুরক্ষা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সুদের হার কমে যাওয়ায় এমনকি সবচেয়ে সন্তুষ্ট বিনিয়োগকারীরাও চাপ অনুভব করছেন। এই প্রেক্ষাপটে, একটি কার্যকর উপায় হলো “FD ল্যাডারিং” বা ধাপে ধাপে বিনিয়োগের কৌশল, যা ঝুঁকি কমিয়ে রিটার্ন সর্বাধিক করতে সাহায্য করে।


FD ল্যাডারিং কী?
FD ল্যাডারিং বলতে বোঝায় আপনার মোট বিনিয়োগকে একাধিক ফিক্সড ডিপোজিটে ভাগ করা—বিভিন্ন মেয়াদ ও সুদের হারে—একক জমার পরিবর্তে। এর ফলে আপনার কিছু অংশ স্বল্পমেয়াদে পরিপক্ব হয় এবং প্রয়োজনে সহজলভ্য থাকে। পাশাপাশি, সুদের হারের ওঠানামা অনুযায়ী আপনি নতুন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেন ও উচ্চতর হারে বিনিয়োগ “লক-ইন” করতে পারেন।


এটি কীভাবে কাজ করে?
ধরা যাক, আপনার হাতে বিনিয়োগের জন্য ৫ লক্ষ টাকা রয়েছে। সব টাকা একসাথে এক বছরের FD-তে না রেখে সেটিকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করুন—১, ২, ৩, ৪ ও ৫ বছরের মেয়াদে। এক বছর পর প্রথম FD পরিপক্ব হবে; তখন আপনি চাইলে অর্থটি তুলে নিতে পারেন, অথবা পুনরায় নতুন FD-তে বিনিয়োগ করতে পারেন। এভাবে প্রতি বছর একটি করে FD পরিপক্ব হবে—আপনাকে নিয়মিত নগদ প্রবাহ ও নতুন হারে পুনঃবিনিয়োগের সুযোগ দেবে।


সুদের হার হ্রাসে কেন উপকারী
এসবিআই-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে FD-এর সুদের হার ৩০–৭০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমেছে। তবে সব মেয়াদের ক্ষেত্রে সমান হারে নয়। কিছু নির্দিষ্ট মেয়াদে এখনও আকর্ষণীয় হার পাওয়া যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে FD ল্যাডারিং আপনাকে বর্তমানের উচ্চ হারে বিভিন্ন মেয়াদে বিনিয়োগ করার সুযোগ দেয়, যাতে ভবিষ্যতের নিম্ন হারের প্রভাব থেকে পুরোপুরি বাঁচা যায়। আবার, সুদের হার বাড়লে পরবর্তী পরিপক্ব FDs পুনঃবিনিয়োগের সময় আপনি সেই বৃদ্ধিরও সুবিধা পাবেন।


FD ল্যাডারিং-এর তিনটি প্রধান সুবিধা
তরলতা ও নমনীয়তা
একটি FD ভাঙলে সুদ হারাতে হয় ও জরিমানা দিতে হয়। কিন্তু ল্যাডারিং পদ্ধতিতে এমন প্রয়োজন হয় না, কারণ নিয়মিত একটি FD পরিপক্ব হয়, যা থেকে প্রয়োজনে অর্থ সহজেই তোলা যায়।


উচ্চতর সামগ্রিক রিটার্ন
বিভিন্ন মেয়াদের FD-তে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘমেয়াদি অংশে সাধারণত বেশি সুদ পাওয়া যায়। ফলে সামগ্রিকভাবে রিটার্নের গড় বাড়ে। এখন বড় ব্যাংকগুলো ৩–৫ বছরের FD-তে ৭.২৫–৭.৫% দিচ্ছে। আমরা সম্ভবত সুদের চক্রের শীর্ষে আছি, তাই এখন ৬০–৭০% অর্থ দীর্ঘমেয়াদে লক করে বাকিটা তরল রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।


সুদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা
সুদের হার সময়ে সময়ে ওঠানামা করে। ল্যাডারিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন মেয়াদে বিনিয়োগ ছড়িয়ে দেওয়ায় এই ঝুঁকি অনেকটা কমে যায়। হার কমলে কেবল পরিপক্ব FD পুনঃবিনিয়োগে প্রভাব পড়ে, পুরো টাকায় নয়। আবার হার বাড়লে, প্রতিটি FD পরিপক্ব হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনি নতুন হারে বিনিয়োগ করতে পারেন।


সব মিলিয়ে, FD ল্যাডারিং শুধু নিরাপত্তা নয়, একটি বুদ্ধিদীপ্ত কৌশল—যা আপনাকে দেয় তরলতা, স্থিতিশীল রিটার্ন ও পরিবর্তনশীল বাজারে মানসিক নিশ্চয়তা।