আজকাল ওয়েবডেস্ক: সপ্তম বেতন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে চলতি বছরের ৩১শে ডিসেম্বর শেষ হবে। নতুন বছর থেকেই অষ্টম বেতন কমিশনের ভিত্তিতে মিলবে বেতন ও পেনশন। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের মধ্যে অষ্টম বেতন কমিশন নিয়ে প্রত্যাশা ক্রমশ বাড়ছে। অষ্টম বেতন সংশোধনের প্রাথমিক রূপরেখা তৈরির প্রক্রিয়া চললেও, এর সময়সীমা এবং কত করে বেতন বাড়ছে সেই সম্পর্কে স্পষ্ট করে কেন্দ্র কিছু জানায়নি।
২০২৫ সালের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অষ্টম বেতন কমিশনের কার্যপরিধি অনুমোদন করে। এই প্যানেলকে নভেম্বর ২০২৫ থেকে বেতন, ভাতা এবং পেনশন সংক্রান্ত সুপারিশ জমা দেওয়ার জন্য প্রায় ১৮ মাস সময় দেওয়া হয়েছে।
পূর্ববর্তী প্রথা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ১লা জানুয়ারি তারিখটিকে কাগজে-কলমে নতুন বেতন কাঠামোর কার্যকর তারিখ হিসেবে গণ্য করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, কর্মচারীদের অবিলম্বে তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বর্ধিত বেতন জমা হওয়ার আশা করা উচিত নয়।
কর্মা ম্যানেজমেন্ট গ্লোবাল কনসাল্টিং সলিউশনসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং চিফ ভিশন অফিসার প্রতীক বৈদ্যের মতে, বর্ধিত বেতনের আনুষ্ঠানিক কার্যকর তারিখ এবং প্রকৃত অর্থ প্রদানের মধ্যে সাধারণত একটি ব্যবধান থাকে। তিনি বলেন, "কাগজে-কলমে অষ্টম বেতন কমিশনকে ১লা জানুয়ারি, ২০২৬ থেকে কার্যকর একটি বেতন সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাস্তবে, পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে টকার্যকর তারিখট এবং প্রথম বর্ধিত বেতন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হওয়ার মধ্যে সাধারণত একটি ব্যবধান থাকে।"
বৈদ্য সপ্তম বেতন কমিশনকে একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। যদিও বেতন সংশোধন ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছিল, মন্ত্রিসভার অনুমোদন এসেছিল সেই বছরের জুন মাসে। ফলে কর্মীদের বেতন ও পেনশনবোগীদের বকেয়া পরবর্তী মাসগুলোতে পরিশোধ করা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, "বাস্তবিকভাবে, কর্মচারীদের ২০২৬-২৭ অর্থবছরের কোনও এক সময়ে প্রকৃত অর্থ প্রদানের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত, যদি কোনও বকেয়া থাকে, তবে তা বিজ্ঞাপিত কার্যকর তারিখ থেকে জমা করা হবে।"
কর্মচারীরা কতটা বেতন বৃদ্ধির আশা করতে পারেন?
এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক সংখ্যা ঘোষণা করা হয়নি, তবে পূর্ববর্তী বেতন কমিশন এবং বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে প্রাথমিক অনুমান করা হচ্ছে।
ষষ্ঠ বেতন কমিশনের ফলে গড় বেতন প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। সপ্তম বেতন কমিশন ২.৫৭ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করে প্রায় ২৩-২৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি হয়েছিল। অষ্টম বেতন কমিশনের জন্য প্রাথমিক পূর্বাভাস অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধির হার ২০ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশের মধ্যে হতে পারে। ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর ২.৪ থেকে ৩.০-এর মধ্যে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বিশেষ করে নিম্ন ও প্রবেশিকা স্তরের গ্রেডগুলিতে মূল বেতনে বড় বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
তবে বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলছেন যে, এগুলো প্রত্যাশা মাত্র, কোনও নিশ্চয়তা নয়।
চূড়ান্ত বৃদ্ধি কীসের উপর নির্ভর করবে?
চূড়ান্ত সংখ্যাটি আগামী ১২-১৮ মাসের মুদ্রাস্ফীতি, ১৬তম অর্থ কমিশনের পর রাজস্বের সুযোগ, কর আদায় বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর নির্ভর করবে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বেতন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার একটি ভারসাম্য বজায় রাখবে। কর্মা ম্যানেজমেন্ট গ্লোবাল কনসাল্টিং সলিউশনসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং চিফ ভিশন অফিসার প্রতীক বৈদ্যের মতে, "আমার ধারণা, সরকার একটি দৃশ্যমান, সন্তোষজনক বেতন বৃদ্ধির সঙ্গে ভাতা এবং মহার্ঘ ভাতার সমন্বয়ের একটি আরও সুচিন্তিত কাঠামোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করবে।"
আপাতত, কাগজে-কলমে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি তারিখটি ভিত্তি বছর হিসেবে বিবেচিত হলেও, প্রকৃত বেতন সংশোধন এবং বকেয়া কার্যকর হতে সময় লাগতে পারে। পূর্ববর্তী বেতন কমিশনগুলোর মতোই, কর্মচারীদের একটি অপেক্ষার সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
এই পর্যায়ে যা বেশি সম্ভাব্য বলে মনে হচ্ছে তা হল, একটি মাঝারি কিন্তু অর্থপূর্ণ বেতন বৃদ্ধি, এবং অষ্টম বেতন কমিশন তার প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর এবং সরকার বাস্তবায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই আরও স্পষ্ট উত্তর পাওয়া যাবে।
