আজকাল ওয়েবডেস্ক: দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের হার গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সহজ অনবোর্ডিং প্রক্রিয়া, আকর্ষণীয় রিওয়ার্ড সিস্টেম এবং ভোক্তাদের ক্রমবর্ধমান খরচ করার প্রবণতা এই বৃদ্ধির মূল কারণ। তবে এই দ্রুত সম্প্রসারণের সঙ্গে উঠে আসছে একটি পুরনো প্রশ্ন—ক্রেডিট কার্ড কি ব্যবহারকারীদের জন্য ঋণের ফাঁদ তৈরি করছে?


এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় বলা কঠিন। কারণ, সমস্যাটি মূলত নির্ভর করে ব্যবহারকারী কীভাবে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন তার উপর। নিচে ধাপে ধাপে ঝুঁকিগুলো এবং সেগুলো মোকাবিলার উপায় তুলে ধরা হলো, যাতে পাঠকরা আরও সচেতনভাবে আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।


কেন ক্রেডিট কার্ডকে ঋণের ফাঁদ মনে হয়?
১. উচ্চ সুদের হার
দেশের বেশিরভাগ ক্রেডিট কার্ড বকেয়া টাকা বহন করলে বা রোলওভার করলে বার্ষিক ৩০% থেকে ৪২% পর্যন্ত সুদ ধার্য করে। ফলে সামান্য বকেয়া টাকাও কয়েক মাসের মধ্যে বড় অঙ্কে পরিণত হয়।


২. ‘মিনিমাম পেমেন্ট’–এর ভুল ধারণা
ক্রেডিট কার্ডে ন্যূনতম পরিমাণ পরিশোধ করলে কার্ডটি সচল থাকে ঠিকই, কিন্তু অবশিষ্ট বকেয়া চলতে থাকে উচ্চ সুদে। এতে ব্যবহারকারী অজান্তেই দীর্ঘমেয়াদি ব্যয়বহুল ঋণে জড়িয়ে পড়েন।


৩. তাৎক্ষণিক খরচের প্রবণতা
ট্যাপ-এন্ড-পে, ওয়ান-ক্লিক পেমেন্ট বা ইএমআই অপশন অনেক সময় ব্যবহারকারীকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচে উৎসাহিত করে। যদি খরচ নিয়ন্ত্রণ না থাকে, তবে বাজেট ভেঙে পড়া সময়ের ব্যাপার।


ব্যবহারকারীরা কীভাবে সমস্যায় পড়েন?
১. ব্যালান্স বহন করে চলা
প্রতি মাসে বকেয়া রাখা বা ‘রিভলভ’ করা ক্রেডিট কার্ড ঋণ বাড়ার সবচেয়ে দ্রুত পথ। সুদে–সুদে দায় বাড়তে থাকে।


২. ক্রেডিট সম্পর্কে অজ্ঞতা
ক্রেডিট স্কোর, সুদের হার, বিলিং সাইকেল বা ডিউ ডেট সম্পর্কে অজ্ঞ থাকা ব্যবহারকারীদের ঝুঁকিতে ফেলে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে মৌলিক ধারণা থাকা জরুরি।


৩. একাধিক কার্ড, শূন্য পর্যবেক্ষণ
একাধিক ক্রেডিট কার্ড থাকা খারাপ নয়, কিন্তু সেগুলির খরচ এবং ডিউ ডেট ট্র্যাক না করলে সহজেই মিসড পেমেন্ট এবং জরিমানার ফাঁদে পড়তে হয়।


৪. ক্যাশ উইথড্রয়াল
এটিএম থেকে টাকা তোলা ক্রেডিট কার্ডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ব্যবহার। প্রথম দিন থেকেই সুদ গণনা শুরু হয়, তার সঙ্গে যুক্ত হয় অতিরিক্ত ফি।


কীভাবে এড়াবেন ক্রেডিট কার্ডের ঋণ ফাঁদ?
প্রতিমাসে বকেয়া সম্পূর্ণ পরিশোধ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
কখনোই শুধু ‘মিনিমাম অ্যামাউন্ট ডিউ’ পরিশোধ করে সন্তুষ্ট হবেন না।
ক্রেডিট লিমিটকে অধিকার নয়, বরং সর্বোচ্চ খরচের সীমা হিসেবে বিবেচনা করুন।
খরচ কোথায় হচ্ছে তা জানতে অ্যাপ বা ব্যাংক স্টেটমেন্ট দিয়ে নিয়মিত হিসাব রাখুন।
রিওয়ার্ড ব্যবহার করুন, কিন্তু কখনো রিওয়ার্ড পাওয়ার লোভে অপ্রয়োজনীয় খরচ করবেন না।


ক্রেডিট কার্ড নিজে থেকে কোনোভাবেই ঋণের সমস্যা সৃষ্টি করে না। বরং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ভুল ধারণা এবং বেখেয়ালি খরচ ব্যবহারকারীকে ঋণের ফাঁদে ফেলে। দেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের জন্য সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো—কার্ডকে লেনদেন সহজ করার উপায় এবং ক্রেডিট স্কোর উন্নত করার টুল হিসেবে ব্যবহার করা, কখনোই দীর্ঘমেয়াদি ঋণের উৎস হিসেবে নয়।