নিজস্ব সংবাদদাতা: ৭২ বছর পেরোল উত্তম-সুচিত্রার ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। মধ্যে সত্তরে পৌঁছেও আজও এই ছবির আবেদনে বুঁদ বাঙালি। ১৯৫৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত একটি ভারতীয় বাংলা কমেডি চলচ্চিত্র। এই ছবিটির পরিচালক ছিলেন নির্মল দে এবং কাহিনিকার ছিলেন বিজন ভট্টাচার্য। ছবিতে মুখ্যভূমিকায় অভিনয় করেন তুলসী চক্রবর্তী, মলিনা দেবী, উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন। ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায় ও সনৎ সিংহ – এই পাঁচজন সমসাময়িক গায়কও এই ছবিতে অভিনয় করেন। আরও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় ও জহর রায়। এই ছবি থেকেই উত্তম-সুচিত্রার আইকনিক জুটির। এবার এই ছবিকেই মঞ্চস্থ করলেন ডা. রামাদিত্য রে।  জগতে ডন নামেই বেশি পরিচিত।  তাঁর পরিচালনায় এই নাটকে দুই প্রধান ভূমিকায় দেখা গেল কুশল চক্রবর্তী এবং বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীকে।  

 

 

সোমবার সন্ধ্যায় দক্ষিণ কলকাতার উত্তম মঞ্চে মঞ্চস্থ হল এই নাটক। বিভিন্ন নাট্যদল মিলে ফি বছরের মতো এবারও তাঁদের এই সম্প্রীতি নাট্যোৎসবে মেতেছে। গতকাল প্রথম দিনেই মঞ্চে 'সাড়ে  চুয়াত্তর' নিয়ে হাজির হয়েছিলেন রামাদিত্য। তিনি নিজেও এই ছবিতে অভিনয় করেছেন। পরিচালককে দেখা গেল 'অন্নপূর্ণা বোর্ডিং হাউজ'-এর সেই বিখ্যাত চাকর ‘মদন’-এর ভূমিকায় হাজির হয়েছিলেন তিনি।  তা কেন এই নাটকটিকেই উৎসবের জন্য বাছাই করলেন রামাদিত্য? পরিচালক-অভিনেতার কথায়, “এই ছবির গল্প কিন্তু চিরকালীন। এই যে সম্প্রতিমূলক অনুষ্ঠানটি উৎসবটি আমরা এতগুলো নাট্যদল মিলে করি, তাদের জন্য একটি পুরনো সময়ের নিটোল ভালবাসার গল্পের ভীষণ প্রয়োজন ছিল। এবং ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিটি কিন্তু অদ্ভুত স্মৃতিমেদুরতায় আমাদের আজও ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এত বড় একটি ছবিকে ১ ঘন্টার সময়ের মধ্যে আনাটা দুরূহ প্রয়াস। কিন্তু আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি।”

 

 

নাটকের ফরম্যাটে এই ছবির চিত্রনাট্য প্রথম লিখেছিলেন অভিনেত্রী রত্না ঘোষাল। তবে এই এক ঘন্টার চিত্রনাট্য লিখেছেন খোদ রামাদিত্য। তবে তাঁর কথায়, “বলা ভাল, খুব বেশি কিন্তু আমি লিখিনি, কেটেছি বেশি।” জানা গেল, তিনি কিন্তু তথকথিত মহড়ার মতো এই নাটকের মহড়া করেননি। এক-একজন করে ওয়ার্কশপ করেছেন। তারপর বাকিরা একে একে যোগ দেয়। এই মহড়া চলেছে মোট চার মাস। সবাইকে নিয়ে পরিপূর্ণ মহড়া দিয়েছেন মাত্র একদিন। তবে তাতে কোনও অসুবিধে হয়নি বলেই দাবি পরিচালকের। নিজস্ব ছন্দে তিনি বলে উঠলেন, “সবাইকে শুধু মিলিয়ে দিয়েছি। এর  বাইরে আমার তেমন কোনও কাজ ছিল না। কথাশেষে জানালেন, পুরনো নাটকের ভাবনা বাঁচিয়ে রেখেছে এই ক্লাবগুলো-ই। সুতরাং বাংলার নানান স্বর্ণযুগের ছবিকে নাট্যরূপ দিয়ে বারে বারে দর্শকের সামনে তাঁরা হাজির করবেন।” 

 


থার্ড বেল ততক্ষণে পড়ে গিয়েছে। পর্দা উঠছে। একটু একটু করে ফুটে উঠছে আলো। দর্শক ঠাসা প্রেক্ষাগৃহে হাততালির চোটে তখন কান পাতা দায়।