আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্য সরকার এবং মুর্শিদাবাদ পুলিশের তৎপরতায় অবশেষে ওড়িশা পুলিশের হাত থেকে বন্দিদশা ঘুচল আটকে থাকা পশ্চিমবঙ্গের ফেরিওয়ালাদের। 


ওড়িশায় গিয়ে এই রাজ্যের ফেরিওয়ালাদের আটকে পড়ার খবর গোচরে আসতেই তৎপর হয় পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এর পরই রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের তরফে ভদ্রক পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুর্শিদাবাদ এবং মেদিনীপুরের আটকে থাকা ফেরিওয়ালাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। 

ওড়িশা পুলিশের হাত থেকে মুক্ত মুর্শিদাবাদের একাধিক পরিযায়ী ফেরিওয়ালা জানিয়েছেন, বুধবার রাত দশটার মধ্যেই বেশিরভাগ পরিযায়ী ফেরিওয়ালাকে ওড়িশা পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। আটকে থাকা বাকি কয়েকজন বৃহস্পতিবার মুক্তি পাবে বলে ওড়িশা পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, গত অক্টোবর মাসে মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি এবং সামশেরগঞ্জ থানা এলাকার কয়েকটি গ্রাম থেকে প্রায় ১০ জন ফেরিওয়ালা ওড়িশার ভদ্রক জেলায় কাজ করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁরা টাকলু খান নামে এক ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন এবং ওই বাড়ি থেকেই রোজ ফেরির প্রয়োজনে কেনা জামাকাপড় এবং প্লাস্টিকের জিনিস বিক্রি করার জন্য সকালবেলায় বেরোতেন। 

মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী ফেরিওয়ালাদের বাংলা ভাষায় কথা বলতে দেখে গত চার দিন আগে ভদ্রক জেলার পুলিশ সামশেরগঞ্জ এবং সুতি থানা এলাকার ১০ জন এবং মেদিনীপুর জেলার সাতজন ফেরিওয়ালাকে ‘‌বাংলাদেশি’‌ সন্দেহে আটক করে। ওড়িশা পুলিশের হাতে আটক পশ্চিমবঙ্গের ফেরিওয়ালারা তাঁদের যাবতীয় নথি সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশকে দেখালেও তাঁদেরকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ। পশ্চিমবঙ্গের পরিযায়ী ফেরিওয়ালাদের প্রায় তিন দিন সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে একটি ছোট্ট বাড়ির মধ্যে  আটকে রাখা হয়েছিল এবং তাঁদের দু’‌বেলা পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হত না বলেও অভিযোগ উঠেছে। 

আটকে থাকা ফেরিওয়ালাদের মধ্যে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের মহিষাসস্থলী এলাকার বাসিন্দা কাবিরুল হক বলেন, ‘‌পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম আমাদের আটকে থাকার বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হওয়ার পরেই বুধবার সন্ধের পর আমাকে, সামাউল শেখ, বাসু শেখ, হাবিবুর শেখ এবং শফিকুল শেখকে মুক্তি দিয়েছে ওড়িশা পুলিশ।’‌ ওড়িশা পুলিশের হাতে বেআইনিভাবে তিন দিন আটক থাকার পর মুক্তি পাওয়ার আনন্দে কাবিরুল ইতিমধ্যেই সেই রাজ্য ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গের পথে পাড়ি দিয়েছেন। 

ফোনে তিনি বলেন, ‘‌আমাদের গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর শেখের অধীনে আমরা কয়েকজন ওড়িশায় ফেরিওয়ালার কাজ করতাম। হাবিবুরের থেকেই আমরা জিনিস নিয়ে ওড়িশার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করতাম। নিজেদের ভারতীয় হওয়ার প্রমাণ পুলিশকে দেখানো সত্ত্বেও এভাবে যে আমাদেরকে দিনের পর দিন সেখানে পুলিশ আটকে রাখবে তা কোনওদিন দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করিনি।’‌ তিনি বলেন, ‘‌পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পরই আমি এবং শঙ্করপুর গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ওড়িশা ছেড়েছি।  বৃহস্পতিবারই আমরা হাওড়া হয়ে মুর্শিদাবাদে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাব।’‌ তবে কিছুদিনের জন্য বাড়ি ফিরলেও ফের কাবিরুল ওড়িশায় ফিরবেন কি না এই প্রশ্নের উত্তরে তাঁকে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত শোনায়। তিনি বলেন, ‘‌আমরা ছোট স্কুটারে করে ওড়িশার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ফেরি করতাম। সেই স্কুটারগুলো ওড়িশায় আমাদের বাড়ির মালিক টাকলু খানের কাছে থেকে গিয়েছে। এর পাশাপাশি আমরা যে জিনিসগুলো বিক্রি করতাম সেগুলোও ওই বাড়িতে রয়েছে। পরিবারের লোকের সঙ্গে কথা বলে আমরা ঠিক করব ফের ওড়িশায় কাজ করতে যাব কি না।’‌


ওড়িশা পুলিশের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া অপর এক ফেরিওয়ালা সামাউল শেখ বলেন, ‘‌বুধবার রাত দশটা নাগাদ আমাদের পুলিশ ছেড়েছে। দু’‌দফায় আমরা প্রায় ১০ জন ফেরিওয়ালা ওড়িশা পুলিশের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। স্থানীয় পুলিশ আমাদের জানিয়েছে মুর্শিদাবাদের ৫ জন–সহ বাকি মোট ৭ জন ফেরিওয়ালাকে বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে তারা ছেড়ে দেবে। সমস্ত ফেরিওয়ালা পুলিশের হাত থেকে মুক্তি পেলে আমরা একসঙ্গে বসে ভবিষ্যতে কী করবো সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’‌ সামশেরগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘‌ভারতের সংবিধান অনুযায়ী এই দেশের যে কোনও নাগরিক যে কোনও রাজ্যে গিয়ে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন। ওড়িশা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ–সহ প্রায় সব রাজ্যের মানুষ পশ্চিমবঙ্গে নিশ্চিন্তে থাকেন এবং কাজ করেন। কেবল মাত্র বিজেপি শাসিত রাজ্যে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সঙ্গে ‘‌বেআইনি’‌ আচরণ প্রমাণ করে তারা বাংলা এবং বাঙালি বিদ্বেষী।’‌ তিনি বলেন, ‘‌পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার ‘‌পরিযায়ী শ্রমিক কল্যাণ বোর্ড’‌ তৈরি করেছে। দেশের যেকোনও প্রান্তে পরিযায়ী শ্রমিকরা বিপদে পড়লে রাজ্য সরকার মানবিক মুখ নিয়ে তাদের সকলের পাশে দাঁড়াচ্ছে।’‌