আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে বিহার ভোটের পর ২৭ অক্টোবর থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১২টি রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (Special Intensive Revision, SIR) অভিযান শুরু হবে। কমিশনের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছে অভিযানটি কি সত্যিই ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণই লক্ষ্য করছে, নাকি কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক এজেন্ডার সঙ্গেই এর মিল রয়েছে।

নাগরিক স্বাধীনতা ও নির্বাচনস্বচ্ছতা নিয়ে সরব সিপিএম নেতা এবং প্রাক্তন সংসদ শামীক লাহিড়ী এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “এসআইআর হওয়া মানেই ভোটার তালিকা পরিষ্কার করা নয়—এটি ব্যাপারটা এখন একটা রাজনৈতিক তৎপরতায় রূপ নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।” লাহিড়ীর কথায়, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে নাগরিকত্ব যাচাই ও পুরনো তালিকার সাথে লিঙ্ক জরুরি শর্ত করা হচ্ছে, সেখানে নির্দিষ্ট সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আংশিকতার সম্ভাবনা উড়ে যাওয়া কঠিন।

কমিশনের নির্দেশিকায় এবার তালিকার শুদ্ধতার সঙ্গে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত যাচাইকরণও যুক্ত হওয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া বেড়েছে। ২০০২ সালের শেষ এসআইআর-এর তালিকার সাথেই নাম লিংক করার অনুরোধ কেন করা হচ্ছে, আর কেন আধার কার্ডকে শুধুমাত্র পরিচয়পত্র হিসেবে গণ্য করে নাগরিকত্ব প্রমাণ বিবেচিত হচ্ছে না—এসব বিষয়ে কমিশন এখনও সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেয়নি। লাহিড়ী বলেছেন, “নিজেরা যে নথি দিয়েছে, যেন সেটাকেই কমিশন স্বীকৃতি দিতে অনিচ্ছুক — এহেন অসঙ্গতি প্রকাশ্য উদ্বেগের কারণ।”

এছাড়া রেশন কার্ড, প্যান কার্ড ইত্যাদি সরকারি নথিগুলোকে কেন নাগরিকত্ব-প্রমাণ হিসেবে বাদ দেওয়া হচ্ছে, তারও কোনো যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। শিক্ষাগত সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, জন্ম সার্টিফিকেট ইত্যাদি নথি থাকলেও কমিশন কেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলাদা পদক্ষেপ নেবে তা নিয়ে প্রশ্ন জাগছে। লাহিড়ী উল্লেখ করেছেন, “নাগরিকত্ব যাচাই করার কাজ সংবিধান অনুসারে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এবং রেজিস্ট্রার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার দায়িত্ব—নির্বাচন কমিশন এই ভূমিকা কিভাবে দখল করছে, তাতে সন্দেহ আছে।”

নিয়োগের  সময়সীমাও এবার তীব্রভাবে সংকুচিত করা হয়েছে—যেখানে ২০০৩ সালের মতো দীর্ঘ সময় দেওয়া হয়নি, বরং প্রায় ৩ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুত সময়সীমা কার্যকর প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তুলতে পারে এবং নির্ভুল যাচাই-বাছাই বাধাগ্রস্ত হতে পারে। লাহিড়ী সাবধান করে বলেছেন, “কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে যাতে একটি তাড়াহুড়ো করা প্রক্রিয়া রুটিন ভোটারের নাম হারিয়ে দিয়ে রাজনৈতিকভাবে উপেক্ষিত মানুষ তৈরি না করে।”

নাগরিকদের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে—এসআইআর যদি সত্যিই ভোটার তালিকা শুদ্ধিকরণেই সীমাবদ্ধ থাকে, তাহলে অভিযানের মাধ্যমে কোনো যোগ্য ভোটারের নাম অনিচ্ছাকৃতভাবে বাদ পড়বে না। কিন্তু যদি এ প্রক্রিয়া নাগরিকত্ব যাচাই ও বিচ্ছিন্নকরণে ব্যবহৃত হয়, তাহলে তা গণতান্ত্রিক অধিকার ও নির্বাচন স্বচ্ছতার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। শামীক লাহিড়ীর ভাষায়, “যে কাজটা সংসদীয় আইন এবং কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্ব—তার সঙ্গে নির্বাচন-প্রক্রিয়াকে মিশিয়ে দেওয়া হলে তা গ্রহণযোগ্য নয়।”

নাগরিক সংগঠন ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এখন কমিশনকে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করছেন—এসআইআর-এর উদ্দেশ্য, ব্যবহৃত নথিপত্রের বৈধতা, এবং নাগরিকত্ব যাচাইকরণের সীমা সম্পর্কে। তারা বলছেন, নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো যোগ্য ভোটারের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হবে না এবং প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছ, ন্যায়সঙ্গত ও সংবিধান সম্মত হবে।