আজকাল ওয়েবডেস্ক: বৃহস্পতিবার সামনে এসেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের একটি নির্দেশিকা। তাতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এ বার থেকে স্কুলগুলিকে সকালের প্রার্থনায় গাইতেই হবে ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গানটি। সরকার এবং সরকার পোষিত সমস্ত স্কুলের জন্যই এই নিয়ম, স্পষ্ট উল্লেখ সেই বিষয়ে। 

 

এর আগেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক সিদ্ধান্তে বার বার প্রমাণিত হয়েছে, বাংলা ভাষার এবং বাঙালির সম্মান রক্ষার্থে, এই রাজ্যের সরকার তৎপর। দেশের বাইরে বাংলা ভাষাভাষীদের উপর অত্যাচার নিয়েও মমতা নিজে এবং তাঁর দল বারবার সরব হয়েছে। এবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গান, সরকার এবং সরকার পোষিত স্কুলগুলিতে সকালের প্রার্থনায় আবশ্যিক করল রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, 'বাংলার মাটি, বাংলার জল' গানটিকে ২০২৩ সালে, রাজ্যসঙ্গীত হিসেবে বেছে নিয়েছে রাজ্যসরকার। গানটির দুটি শব্দ বদল নিয়েও বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল।  তবে, সেসব বিতর্কের অবসানও ঘটেছে। 'বাংলার মাটি, বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল—পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক হে ভগবান। বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন— এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান।' রাজ্যসঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। এবার কার্যত রাজ্যসঙ্গীতকেই স্কুলের প্রার্থনায় আবশ্যিক করা হল। 

 

এই নির্দেশিকা সামনে আসার পর থেকে প্রশ্ন জাগছিল, তাহলে কি স্কুলে, প্রার্থনায় কেবল এই গান গাওয়া হবে? যদিও এ বিষয়ে সকল জল্পনার অবসান হয়েছে মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর পোস্টে। নয়া নির্দেশিকা প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্রাত্য বসু একটি পোস্ট করেছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, 'মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমত্যানুসারে, এখন থেকে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি সরকার ও সরকার পোষিত বিদ্যালয়ে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৯০৫ সালে রচিত বিখ্যাত "বাংলার মাটি বাংলার জল" গানটি বিদ্যালয়ের প্রারম্ভে প্রার্থনা সঙ্গীত হিসেবে গাওয়ার জন্য অনুমোদিত হল। কবি কর্তৃক রচিত ভারতের জাতীয় সঙ্গীত "জনমনগণ অধিনায়ক জয় হে"র প্রতি বিদ্যালয়ে নিয়মিত গাওয়ার পাশাপাশি, এই রাজ্যসঙ্গীত গীত হলে, তা সমগ্র রাজ্যের সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক ঐক্যর বিশেষ অনুঘটক হিসেবে সর্বদা সজাগ ও সক্রিয় থাকবে বলে আমরা দৃঢ়বিশ্বাসী।' 

 

সম্প্রতি, অসম সরকারের এক সিদ্ধান্ত নিয়ে বাঙালি মননে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আমার সোনার বাংলা' গানটি, যেটি স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতও বটে, সেটি গাওয়ায় সরকারি রোষের মুখে পড়তে হয় অসমের কংগ্রেস নেতাকে। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের মুখেও শোনা যায়, এই গান গাওয়ার বিষয়ে সাবধানবাণী ও হুমকি। সেই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাঙালি আবেগের পক্ষে এক জোরাল সওয়াল বলে মনে করা হচ্ছে। বাঙালি অস্মিতাকে তুলে ধরার তাগিদে, নেওয়া এই সিদ্ধান্ত, ভোটের মুখে রাজনৈতিকভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেও মনে করা যেতে পারে।