অরিন্দম মুখার্জি: ওড়িশার সিমলিপালে নিজের আস্তানায় ফিরেছে বাঘিনি জিনত। তার মধ্যেই নতুন করে বাঘের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল পুরুলিয়া-ঝাড়খণ্ড সীমানায়। ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলে অর্থাৎ চান্ডিল শহরের বালিডিহ জঙ্গলের সংলগ্ন গ্রামগুলিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আতঙ্কে ভুগছে গ্রামবাসী। ঝাড়খণ্ডের বনদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাণ্ডিলের বালিডিহ-সহ প্রায় ১০-১২টা গ্রামে সতর্কতা জারি করেছে। ইতিমধ্যেই বেশ একটি গবাদি পশুকে শিকার করেছে। কিন্তু গলায় রেডিও কলার না থাকায় বাঘের সন্ধান পায়নি বনদপ্তর। অপেক্ষা দ্বিতীয় শিকারের। 

চান্ডিল শহর সবসময় জমজমাট। সাধারণত বেশি রাত অবধি দোকান বাজার খোলা থাকে। কিন্তু এখন সন্ধ্যা জনমানবহীন হয়ে পড়ছে শহর। বাঘের আতঙ্কে শীতকালে সেভাবে কেউ চড়ুইভাতি করতে আসছেন না। শহরের কাছে বাধের পাশের পূর্ণবাস, ভালুকাচার এবং গাঙ্গুডি গ্রামগুলির মানুষজন ঘর থেকে একদম বেরোচ্ছেন না। নিজেদের গৃহবন্দি করে রেখেছেন। চৌকা সদরের চা বিক্রেতা নকূলচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ''আমি সাধারণত রাত ৯-১০টায় দোকান বন্ধ করতাম। কিন্তু বাঘের ভয়ে আগেই দোকান বন্ধ করে দিচ্ছি। কেউ বাইরে বেরোচ্ছে না।''  বাঘের ভয়ে চান্ডিল প্রশাসনের তরফ থেকে ১৮৯(৪) ধারা জারি করা হয়েছে ঝাড়খণ্ডের খরশোয়া এবং সরাইকেলা জেলাগুলোতে। 

বালিডিহ গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গল সিং মুন্ডা বলেন, ''ঝাড়খন্ডের বনদপ্তর জঙ্গলে যেতে বারণ করেছে। কিন্তু আমরা এই জঙ্গল থেকে কাঠ সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি এবং তার ফলে আমাদের সংসার চলে। কিন্তু কবে জঙ্গলে যাব আমরা খুব চিন্তিত আছি।'' গ্রামের অপর বাসিন্দা দেবনাথ সিং মুন্ডা বলেন, ''আমাদের গ্রাম থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের জঙ্গলে বাঘ গরুকে মেরেছে।'' 

১৮৯(৪) ধারা অনুযায়ী, একসঙ্গে পাঁচ জনের বেশি কেউ জঙ্গলে প্রবেশ করতে পারবেন না বাঘের আতঙ্কে বালিডিহ, তুলগ্রাম, কুরলি খুঁটি চৌকা, ঘোরালিঙ্গী রাইডি এবং দুলমির এইসব এলাকার মানুষের জঙ্গলে প্রবেশ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে বন্ধ বনজ সম্পদ সংগ্রহ। গবাদিপশু বেঁধে রাখা হচ্ছে বাড়ির মধ্যেই। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাঁরা কাজে যেতেন তাঁদের যেতে হচ্ছে ঘুরপথে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, জঙ্গলের পাশে বাঘ উপস্থিত। কিন্তু সারা গ্রাম জুড়ে অন্ধকার, রাস্তায় আলো নেই। প্রশাসন এবং এলাকার প্রধানদের বলেও সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি। 

বাঘের প্রথম শিকারের পরে কেটে গিয়েছে চার দিন। কিন্তু বনদপ্তর এখনও কোনও সুবিধা করতে পারেনি। শুধুই পায়ের ছাপ পেয়েছে।  বনদপ্তরের ক্যামেরায় এখনও বাঘের ছবি ধরা পড়েনি। ঝাড়খন্ডের চান্ডিল রেঞ্জের আধিকারিক শশীরঞ্জন প্রকাশ বলেন, ''আমরা এখনও ট্রাপ ক্যামেরায় বাঘের চলাচল ধরা পড়তে দেখিনি। কিন্তু আমাদের ধারণা বাঘটি সম্ভবত বালিডিহ-র জঙ্গলে আছে। বাঘের অবস্থান কোথায় ঠিক সেটা জানার জন্য আমরা দ্বিতীয় শিকারের জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছি।'' তিনি আরও বলেন, ''সাধারণত রয়েল বেঙ্গল টাইগার একবার পেট ভর্তি করে খাওয়ার পর প্রায় ৬ থেকে ৮ দিন পর আবার শিকারে বেরোয়।'' 

বালিডিহ গ্রামের কিশোর সুমিত মাহাতো জঙ্গলে পাতা সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘ দেখতে পায়। সে বাড়ি ফিরে সেই কথা তার মাকে জানায়। খবর দেওয়া হয় বনদপ্তরে। ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে পুরুলিয়ার রেঞ্জগুলি যুক্ত। এর ফলে পুরুলিয়ার বনবিভাগ উদ্বিগ্ন। বাগমুন্ডি, বলরামপুর বনাঞ্চলে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। চান্ডিল সংলগ্ন সুবর্ণরেখা নদীর চরে বাঘটি জলপান করতে এসেছিল। সেই পদচিহ্ন পেয়েছে ঝাড়খণ্ডের। 

ঝাড়খন্ডের ব্যাঘ্র বিশেষজ্ঞদের মতে সম্ভবত বাঘটি পালামৌ জঙ্গল থেকে এসেছে। পুরুলিয়ার ডিএফও বলেন, ''জিনাতের ক্ষেত্রে আমরা যেভাবে হয়রান হয়েছি তার যেন পুরনাবৃত্তি না ঘটে এবং সেই জন্য আমরা পুরুলিয়ার জঙ্গলগুলিতে আগেভাগেই সর্তকতা অবলম্বন করা হচ্ছে। ''