প্রকাশ মণ্ডল, আলিপুরদুয়ার: রাতে ঘুমের সময় বাচ্চার কান্নায় বারবার ঘুমের ব্যাঘাত। ‘বিরক্ত’ মা শেষ পর্যন্ত নিজের সন্তানকে খুনের সিদ্ধান্ত নিল। শুক্রবার দুপুরে এমনই এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠল আলিপুরদুয়ার জংশন দক্ষিণ চ্যাচাখাতা এলাকায়।
জানা গিয়েছে, শুক্রবার দুপুর নাগাদ পূজা দে ঘোষ নামে ওই এলাকার এক মহিলা নিজের সাত মাসের শিশুকন্যা চুরি যাওয়ার অভিযোগ তোলে। তার দাবি, দুপুর নাগাদ শিশুকে ঘুম পাড়িয়ে তিনি স্নানে যান। সেই সময় শিশুর দাদু ঘরে খাওয়াদাওয়ার পর বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। শিশুর বাবা জয়দীপ ঘোষ পেশায় বেসরকারি কর্মী এবং সেইসময় কাজের জন্য বাইরে ছিলেন। পূজার দাবি, স্নান সেরে বেরিয়ে সে দেখে বিছানা থেকে তার একমাত্র শিশুকন্যা উধাও। শিশুর দাদু মলয় ঘোষকে সে ঘটনার কথা জানায়। প্রাথমিকভাবে পূজার দাবি ছিল, এরপর দু’জনে মিলে ঘরের আশপাশে অনেক খোঁজাখুজি করে না পেয়ে আশপাশের বাড়ির লোকজনকে বিষয়টি জানানো হয়। ঘটনা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। স্থানীয় আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশের কাছে বাচ্চা চুরির অভিযোগ করা হয়। পরিবার এবং আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে নিখোঁজ শিশুর তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। জানা গিয়েছে এলাকার আশপাশের বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ জানতে পারে ওই বাড়িতে কোনও বাইরের লোকের আসা–যাওয়ার কোনো চিহ্ন নেই। নিখোঁজ শিশুর খোঁজ করতে বনদপ্তরের কুকুর নিয়ে আসা হয়।
বেলা গড়াতেই তদন্তের মোড় ঘুড়ে যায়। দুপুর থেকে শিশুর মা এবং তার পরিবারের লোকেদের একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সেখানেই শিশুর মা পূজার কথায় অসঙ্গতি চোখে পড়ে পুলিশের। শেষপর্যন্ত শুক্রবার রাত ১২টা নাগাদ পুলিশের জেরায় নিজের শিশু খুনের কথা স্বীকার করে নেয় মা পূজা। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় দুপুর নাগাদ বৃদ্ধ দাদু মলয় ঘোষকে খেতে বসিয়ে সাত মাসের শিশুকন্যাকে বাড়ির পেছনে একটি পুকুরে ফেলে আসে পূজা। এরপরেই আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশ পূজাকে সঙ্গে নিয়ে মৃত শিশুটিকে পুকুর থেকে উদ্ধার করে। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, একাধিক পারিবারিক অশান্তি এবং সমস্যার জন্যই নিজের সাত মাসের শিশুকন্যাকে হত্যা করে তার মা। জীবনযাপন এবং স্বাচ্ছন্দ্যে নাকি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সাত মাসের কন্যা সন্তান। শিশুর কারণে নাকি তার খাওয়া, ঘুম কিছুই হচ্ছিল না। তাকে মাঝরাতে বারবার জেগে উঠতে হত। ফলে রাতে তার ঘুম হচ্ছিল না। সেই কারণে নিজের জীবনে ‘স্বাচ্ছন্দ্য’ ফিরিয়ে আনতে খুনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাকে পুকুরে ফেলে আসে।
এমন মর্মান্তিক ঘটনায় হতবাক পরিবার ও পাড়াপড়শিরা। শুক্রবার গভীর রাতে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মৃত শিশুটির দেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
