আজকাল ওয়েবডেস্ক: রিয়া-রাখি। মন্দিরবাজারের রিয়া সর্দার ও বকুলতলার রাখি নস্কর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন কয়েকদিন আগেই। তাঁদের এই সিদ্ধান্তে তুমুল আলোচনা, প্রশস্তিও। সুন্দরবনের দুই মেয়ের সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানিয়ে সংবর্ধনা দিল তৃণমূল কংগ্রেস। উপস্থিত ছিলেন সাংসদ বাপী হালদার, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ফোনে বার্তা দিলেন খোদ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। তিনি বলেন, 'রিয়া ও রাখি, এই দুই সাহসী তরুণীর উদ্দেশে আমি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শুভকামনা জানাই।'
আমাদের সমাজে চেনা ছকের বাইরে গিয়ে, ভালবাসার সত্যিকারের অর্থকে সামনে এনেছে রিয়া ও রাখি। তারা প্রমাণ করেছে ভালবাসা কখনও কোনও সীমারেখার মধ্যে আটকে থাকে না। ভালবাসা কোনও বাধা মানে না, না ধর্মে, না লিঙ্গে, না জাতিতে, না সমাজে না নিয়মে। দু'জনে জানত কাজটা সহজ হবে না। সমাজ থেকে নানা বাধা বিপত্তি, প্রতিকূলতা আসবে। কটাক্ষ, কটুক্তি আসবে, তাও তারা একসঙ্গে থাকার লড়াই থেকে পিছিয়ে আসেনি। আমি তাঁদের কুর্নিশ জানাই এবং গ্রামবাসীরা প্রত্যেকে, যাঁরা তাদের এই বন্ধনে আবদ্ধ হতে উৎসাহিত করেছেন, তাঁদের আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।' অভিষেক বলেন, রিয়া এবং রাখীর সাহস, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁদের সিদ্ধান্ত আগামী কয়েক প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বলেন, 'তাঁরা গোটা সমাজকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভালবাসা মানেই মানবতা এবং মানবতাই হল সমাজের আসল পরিচয়।'
সোশ্যাল মিডিয়াতেও পোস্ট করেছেন অভিষেক। তিনি লিখেছনে, 'সামাজিক বেড়াজাল ছিন্ন করে সুন্দরবনের দুই তরুণী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন, যা বাংলা তথা দেশের কাছে দৃষ্টান্ত স্বরূপ উদাহরণ - স্বাধীন ভারতের স্বাধীন মানসিকতার, মানবিকতার, মুক্ত চিন্তা ভাবনার ও সাহসিকতার। সারাজীবন একসাথে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে তাঁরা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তা বাংলার কাছে ও বাঙালির কাছে গর্বের।সংকীর্ণতার গণ্ডি পেরিয়ে সামাজিক মতভেদ, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং সাংস্কৃতিক বাধা এসব অতিক্রম ক'রে লক্ষ্যে স্থির থেকেছেন- প্রকৃত ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিয়েই। তাঁদের এই পবিত্র ভালোবাসা চিরঅক্ষয় থাকুক। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারের বাসিন্দা রিয়া সরদার ও বকুলতলার বাসিন্দা রাখি নস্কর এই নবদম্পতিকে আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং হার্দিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। পরমেশ্বরের আশীর্বাদ বর্ষিত হোক ওদের জীবনে। রঙিন হয়ে উঠুক আগামীর পথ। বাংলাই আগামীকে পথ দেখায়। এই সাহসিকতার জোরেই আমাদের সমাজ অচলায়তন ভেঙে ও সংকীর্ণতাকে পিছনে ফেলে মুক্ত চিন্তাভাবনার অঙ্গন হয়ে উঠবে।'
মন্দিরবাজারের রিয়া সর্দার ও বকুলতলার রাখি নস্কর। ছোটবেলাতেই মা-বাবাকে হারিয়ে মাসি-মেসোর কাছে বড় হয়েছেন রিয়া। অন্যদিকে রাখি নিজের পরিবারেই বেড়ে ওঠেন। দুজনেই পেশায় নৃত্যশিল্পী। প্রায় দুই বছর আগে পরিচয় হয় তাঁদের। ফোনালাপে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। তারপর ধীরে ধীরে গভীর সম্পর্ক।
রিয়া যখন পরিবারের কাছে সম্পর্কের কথা জানান, তারা তা মেনে নেয়নি। বাধ্য হয়ে রিয়া বাড়ি ছাড়েন এবং রাখির বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। রাখির পরিবার শুরু থেকেই পাশে দাঁড়ায়। প্রতিবেশীদের সঙ্গে আলোচনা করেই তাঁদের বিয়ের আয়োজন হয় স্থানীয় এক মন্দিরে। পরস্পরের গলায় মালা পরিয়ে জীবনের নতুন অধ্যায়ে পা রাখেন তাঁরা।
