আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুর্শিদাবাদ জেলার নাম শুনলে এতদিন রাজ্যের ভ্রমণ পিপাসু মানুষের চোখে ভেসে উঠত লালবাগ শহরের হাজারদুয়ারি প্রাসাদ এবং নবাবদের তৈরি বিভিন্ন স্মৃতি সৌধের ছবি। তবে খুব শীঘ্রই মুর্শিদাবাদের জেলার পর্যটন মানচিত্রে যুক্ত হতে চলেছে আরও দু'টি নতুন পালক। জঙ্গিপুরে তৃণমূল বিধায়ক জাকির হোসেনের উদ্যোগে তাঁর বিধানসভা এলাকায় তৈরি হবে সুদৃশ্য একটি মসজিদ এবং একটি মন্দির।
শনিবার বিকেলে সুতির বংশবাটি গ্রামে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা ঘোষণা করেন তৃণমূল বিধায়ক। মন্দির এবং মসজিদ তৈরি করার জন্য তৃণমূল বিধায়ক নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৫০ লক্ষ টাকা করে মোট ১ কোটি টাকা দান করবেন বলে ঘোষণা করেছেন।
জঙ্গিপুর বিধানসভা এলাকার মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, তৃণমূল বিধায়কের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন জেলার পর্যটন মানচিত্রে একসঙ্গে নতুন দু'টি পালক যুক্ত হবে, তেমনি ধর্মপ্রাণ মানুষেরা দু'টি নতুন উপাসনাস্থল পাবেন। মন্দির এবং মসজিদ তৈরি হলে তা দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ মুর্শিদাবাদ জেলায় আসবেন। ফলে পর্যটনের প্রসার এবং আরও বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলেও আশা করছেন তাঁরা।
তবে শনিবারের জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাকির হোসেন পরিষ্কার জানিয়েছেন, তিনি ধর্মের রাজনীতি করেন না। তাই প্রস্তাবিত মন্দির এবং মসজিদ নির্মাণের কাজ আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পরই শুরু হবে।
শনিবারের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাকির হোসেন বলেন, "অনেক ধর্মপ্রাণ মানুষ চান একটা ভালো মসজিদ হোক এবং একটা ভালো মন্দির হোক। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার বিধানসভা এলাকায় একটি সুন্দর মহম্মদী মসজিদ এবং একটি সুন্দর শ্রীকৃষ্ণের মন্দির নির্মাণ করা হবে। শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের জন্য একটি ট্রাস্ট এবং মহম্মদী মসজিদের জন্য অপর একটি ট্রাস্ট তৈরি করা হবে।" তিনি আরও বলেন, "মন্দির এবং মসজিদ নির্মাণ করার জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের যথাযথ অনুমোদন নিয়ে সরকারি নিয়ম মেনে দু'টি পৃথক ধর্মীয় উপাসনাস্থল তৈরি করা হবে।"
জাকির হোসেন রাজ্য সরকারকে অনুরোধ করেন, মসজিদের জন্য ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে একটি জমি এবং শ্রীকৃষ্ণ মন্দির নির্মাণের জন্য কোনও একটি খাস জমি যেন ট্রাস্টের নামে বরাদ্দ করা হয়। তবে দু'টি পৃথক ধর্মীয় উপাসনাস্থলের জন্য কেউ ব্যক্তিগতভাবে জমি দানে ইচ্ছুক হলে তাও গ্রহণ করা হবে বলে তৃণমূল বিধায়ক শনিবার জানিয়েছেন। জাকির হোসেন বলেন, " আমি মনে করি ধর্ম অনেক উঁচু স্থানে রয়েছে। মানুষে-মানুষে যাতে ভালোবাসা তৈরি হয় সেই কারণেই মন্দির এবং মসজিদ তৈরির এই উদ্যোগ। তবে রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে যাতে কেউ বলতে না পারে ধর্ম নিয়ে আমি রাজনীতি করছি তাই মন্দির এবং মসজিদ নির্মাণের কাজ আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচন মিটে গেলে তারপরেই শুরু হবে। যদিও খুব শীঘ্রই মন্দির এবং মসজিদ নির্মাণের জন্য একটি ট্রাস্ট আমরা গঠন করে ফেলব।" শনিবার তিনি আরও জানিয়েছেন,"মন্দির এবং মসজিদ নির্মাণের জন্য আমি ৫০ লক্ষ টাকা করে মোট ১ কোটি টাকা দেব। দরকার হলে আমি নিজের জমি বিক্রি করে এই টাকা দেব।"
তৃণমূল বিধায়কের এই উদ্যোগে প্রচুর সাধারণ মানুষের সঙ্গে স্বাগত জানিয়েছেন রঘুনাথগঞ্জ-১ ব্লক তৃনমূল কংগ্রেস সভাপতি গৌতম ঘোষ। তিনি বলেন,"মন্দির এবং মসজিদ নির্মাণ হলে একদিকে যেমন প্রচুর ধর্মপ্রাণ মানুষ উপাসনার জন্য সেখানে আসবেন, তেমনি সেই মন্দির এবং মসজিদ দেখার জন্য প্রচুর পর্যটক এই জেলায় আসবেন।"
