আজকাল ওয়েবডেস্ক: পার্কস্ট্রিট কাণ্ডের ছায়া এবার কসবা হত্যাকাণ্ডে, পুলিশে তদন্ত চাঞ্চল ও তথ্য এলো প্রকাশ্যে! অভিযুক্ত প্রেমিক-প্রেমিকা (ধ্রুব-কমল),  একাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন সম্পর্ক, যৌথ ভাবে অপরাধ সংগঠিত করেছে পুলিশ সূত্রে খবর!  ডেটিং অ্যাপে আলাপ, হোটেলে দেখা, তারপর খুন! আদর্শ লোসাল্কার হত্যাকাণ্ডে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে তদন্তে। কলকাতার কসবা এলাকার একটি হোটেলে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট আদর্শকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে যুগল ধ্রুব মিত্র ও কোমল সাহা।

সোমবার লালবাজারে সাংবাদিক বৈঠক করে গোটা ঘটনার বিবরণ দেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার এবং ডেপুটি কমিশনার (সাউথ সাবার্বান) বিদিশা কলিতা দাশগুপ্ত।

ডেটিং অ্যাপে আলাপ, পরদিনই হোটেলে দেখা?

পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার একটি জনপ্রিয় ডেটিং অ্যাপে আদর্শের সঙ্গে পরিচয় হয় কোমলের। দু’জনে পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁরা শান্তিপল্লির ওই হোটেলে চেক–ইন করেন। আদর্শ একসঙ্গে ৫ তলার দুটি ঘর বুক করেছিলেন। ধ্রুব ও আদর্শের পরিচয়পত্রের জেরক্স জমা দেওয়া হয়েছিল রিসেপশনে। অনলাইন ডেলিভারি অ্যাপের মাধ্যমে খাবারও অর্ডার করা হয়।

রাতের খাবারের পর ভয়ঙ্কর মোড়

রাতে খাওয়াদাওয়ার পর কোনও কারণে শুরু হয় তর্কাতর্কি। সেই বচসা মুহূর্তে রূপ নেয় হিংসায়। গোয়েন্দাদের দাবি— অভিযুক্ত ধ্রুব ও কোমল মিলে আদর্শকে প্রথমে মারধর করেন, তারপর গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হোটেলের ঘর লন্ডভন্ড অবস্থায় ছিল— যা ধস্তাধস্তির স্পষ্ট প্রমাণ বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। মৃতদেহটি বিছানার নিচে লুকিয়ে রেখে রাত ২টো নাগাদ হোটেল থেকে বেরিয়ে যায় ওই যুগল।

হত্যার পর লুট— সিমকার্ড বদলে এটিএম লুট

হত্যার পর আদর্শের ওয়ালেট থেকে দেড় হাজার টাকা, দুটি মোবাইল, এটিএম কার্ড তুলে নেয় অভিযুক্তরা। শুধু তাই নয়— আদর্শের সিমকার্ড নিজেদের ফোনে ঢুকিয়ে পিন নম্বর বদলে ফেলে ধ্রুব ও কোমল। তারপর অ্যাপ–বাইকে চেপে উল্টোডাঙায় গিয়ে একটি এটিএম থেকে ১১ হাজার টাকা তুলে নেয় তারা। মূলত মৃত আদর্শর দুটি ফোন এবং অভিযুক্তের দুটি ফোন, মোট চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের  অপরাধ দমন শাখার যুগ্ম নগরপাল রুপেশ কুমার। পুলিশ আরোও জানিয়েছেন, এই অপরাধ ঘটানোর পর লোকাল ট্রেনে জায়গায় জায়গায় ঘোরাফেরা করে ধৃত যুগল।

শনিবার উদ্ধার রক্তাক্ত দেহ, রবিবার ধৃত যুগল গ্রেপ্তার

শনিবার বিকেলে হোটেল কর্তৃপক্ষ ঘর খুলে দেখেন বিছানার তলায় পড়ে আছে রক্তাক্ত আদর্শের দেহ। সঙ্গে সঙ্গে খবর যায় পুলিশে। তদন্ত শুরু করে রবিবার কসবা এলাকা থেকেই ধ্রুব ও কোমলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ধ্রুব–কোমলের অতীত সম্পর্ক

তদন্তে আরও জানা গেছে, একাদশ শ্রেণি থেকেই একে অপরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন ধ্রুব ও কোমল। দু’জনের পরিবারও সে সম্পর্কে জানত। ধ্রুব কাজ করত একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপে, আর কোমল ছিলেন ফ্রিল্যান্স ভিডিও এডিটর। দমদমে একটি ভাড়া বাড়িতে লিভ–ইনে থাকত তারা।

গোয়েন্দাদের সন্দেহ— ব্ল্যাকমেল নাকি ঘনিষ্ঠতার জট?

দেহ উদ্ধারের সময় আদর্শ বিবস্ত্র অবস্থায় ছিলেন। ফলে ব্ল্যাকমেলের কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার বলেন— “ধৃতদের বয়ানে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। খুনের প্রকৃত মোটিভ এখনও স্পষ্ট নয়। নিহত ও অভিযুক্তদের চারটি মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে পরিষ্কার হবে।”

আদালতে পেশ, ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজত

সোমবার আলিপুর আদালতে ধৃতদের তোলা হলে সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল বলেন—
“ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছে। ঘটনার পুনর্নির্মাণ জরুরি।”

ধৃতদের পক্ষের আইনজীবী প্রসেনজিৎ হালদার জামিনের আবেদন করলেও, বিচারক দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন।