আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলাদেশের কিছু দুষ্কৃতী এবং জঙ্গিগোষ্ঠীকে আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করতে গিয়ে শুক্রবার সকালে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেন এক মহিলা-সহ দু’জন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত ব্যক্তিদের নাম আলফাজ মণ্ডল এবং মনিকা বিবি। দু’জনেরই বাড়ি জলঙ্গি থানার ঘোষপাড়া গ্রামে। আলফাজ এবং মনিকা দূর সম্পর্কের ভাই-বোন হন। সূত্রের খবর, স্বামী মারা যাওয়ার পর সম্প্রতি মনিকা বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির কারবারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল। 

মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিং বলেন, “ধৃত দু’জনের হেফাজত থেকে মোট আটটি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল, ১৬টি ম্যাগাজিন, ১০০ রাউন্ড গুলি এবং ১০ হাজার টাকার ভারতীয় জাল নোট উদ্ধার হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি ধৃতেরা বিহারের মুঙ্গের থেকে এই আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি নিয়ে ফিরে আসছিল। এই চক্রের সঙ্গে আর কারা জড়িয়ে রয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃত দু’জনের ১০ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করে শুক্রবার তাদের বহরমপুর আদালতে পেশ করা হচ্ছে”

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি কয়েকদিন আগে আলফাজ এবং মনিকা একসঙ্গে মুঙ্গেরের এক আগ্নেয়াস্ত্র কারবারির বাড়িতে যান। সেখান থেকে তাঁরা নগদ টাকা দিয়ে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি কিনে শুক্রবার সকালে ট্রেনে করে মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা স্টেশনে এসে নামেন। এরপর পুলিশের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য পরবর্তী পথ তারা ট্রেনে না গিয়ে ফরাক্কা থেকে বহরমপুর পর্যন্ত বাসে করে আসেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে,  শুক্রবার সকালে দু’জন পায়ে হেঁটে বহরমপুর স্টেডিয়ামের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ দু’জনকে আটক করে। একজন মহিলা সঙ্গে থাকলে পুলিশের চোখে সহজে ধুলো দেওয়া যেতে পারে এমন আন্দাজ করে সম্ভবত আলফাজ তাঁর বোন মনিকাকে সঙ্গে করে নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার করছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মনিকার কাঁধে একটি ঝোলানো ভ্যানিটি ব্যাগ ছিল। সেই ব্যাগের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রগুলি পাওয়া গিয়েছে। জাল নোট এবং গুলি উদ্ধার হয়েছে আলফাজের কাছ থেকে। 

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, আলফাজ এবং মনিকা সম্ভবত কোনও আগ্নেয়াস্ত্র পাচারকারী দলের সদস্য ছিলেন না। তাঁরা নিজেরা আলাদা ভাবে জলঙ্গি, রাণীনগর, ডোমকল-সহ মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকার দুষ্কৃতি দলকে আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি বিক্রি করতেন। এর পাশাপাশি এই দু’জন ব্যক্তি ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের জলঙ্গি এবং রাণীনগর থানা এলাকায় যেখানে এখনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। সেই এলাকা দিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র পাচার করতেন বলেও পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। 

পুলিশের এক আধিকারিক জানান, বাংলাদেশের কিছু ‘কট্টরপন্থী’ ব্যক্তির কাছে আগ্নেয়াস্ত্র পাচারের খবর যাতে বেশি লোক জানতে না পারে তা সুনিশ্চিত করার জন্যই সম্ভবত ধৃত দু'জন কোনও আগ্নেয়াস্ত্র পাচারকারী দলের সদস্য না হয়ে, নিজেরা একলাই কাজ করতেন। 
  
পুলিশের ওই আধিকারিক বলেন, “ধৃত দু’জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে আমরা জানতে পেরেছি বাংলাদেশের কিছু দুষ্কৃতী দল এবং সেখানকার জঙ্গি গোষ্ঠীদের কয়েকজন মাথাকে তাঁরা এর আগে আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রি করেছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “ধৃত দুই ব্যক্তির কী ধরণের বাংলাদেশি যোগ ছিল তা আমরা খতিয়ে দেখছি।” 

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মুঙ্গেরে তৈরি আগ্নেয়াস্ত্রের বিপুল চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশের দুষ্কৃতিদের মধ্যে। মুঙ্গেরে তৈরি ৭.৬৫ এমএম পিস্তলগুলি থেকে একনাগাড়ে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চালানোর পর সহজে এবং ‘লক’ হয়ে যায় না। সেই কারণে বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠীর মধ্যেও মুঙ্গেরে তৈরি এই আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। 

পুলিশ সূত্রে খবর, আলফাজ এবং মনিকা প্রায় তিন লক্ষ টাকা দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি, ম্যাগাজিন বিহারের মুঙ্গের থেকে কিনেছিল। এই আগ্নেয়াস্ত্র এবং গুলি-ম্যাগাজিন বাংলাদেশে দ্বিগুণ দামে বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিল।