আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহাসপ্তমীর সকালেই শোকের ছায়া নেমে এল বোলপুরে। নানুর থেকে বোলপুর আসার পথে মহকুমা সন্নিকটে একটি যাত্রীবোঝাই বাস ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি টোটোকে বাঁচাতে গিয়ে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে সাত বছরের এক শিশুর। বাসের ধাক্কা খেয়ে পাল্টা খাওয়ায় মাথায় গুরুতর আঘাত লাগতেই তার মৃত্যু হয়। আহত বহু যাত্রীকে দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বোলপুর ও শান্তিনিকেতন থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজে নামে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, বাসটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ছুটছিল। হঠাৎ সামনে টোটো চলে আসায় সেটিকে বাঁচাতে গিয়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে চালক। স্থানীয়দের অভিযোগ, বোলপুর–নানুর সড়কের বেহাল অবস্থাই এই মর্মান্তিক মৃত্যুর বড় কারণ। দুর্গাপুজোর আনন্দমুখর দিনে শিশুর মৃত্যুতে শোকের আবহ ছড়িয়ে পড়েছে শহর জুড়ে।

আরও পড়ুন:  মহাসপ্তমীতেও ঝেঁপে বৃষ্টি, ৬ জেলায় আবহাওয়ার অশনি সংকেত, দিনভর কোন কোন জেলায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি?

তবে, বোলপুর শহরে দুর্ঘটনার এই মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। গত আগস্ট মাসে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নিয়ন্ত্রণহীন ট্রাফিক ও বেপরোয়া গতির কারণে প্রাণ হারিয়েছেন তিনজন। ৬ আগস্ট শান্তিনিকেতন রোডে বাসের ধাক্কায় মৃত্যু হয় স্থানীয় বাসিন্দা দেবরাজ রায়ের। নতুনহাটগামী বাস পিছন থেকে ধাক্কা মারতেই মুহূর্তে বাসের চাকায় পিষ্ট হন তিনি। ১০ আগস্ট জামবুনি সংলগ্ন প্রভাত সরণিতে কাজ সেরে ফেরার পথে চারচাকার ধাক্কায় ঝন্টু ভান্ডারী নামে আরও এক যুবকের মৃত্যু হয়। তার মাথার খুলি ফেটে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে দুর্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। এরপর ২০ আগস্ট জামবুনিতে টিউশন পড়ে বাড়ি ফেরার পথে সিলিন্ডার ভর্তি ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায় দশম শ্রেণির ছাত্রী বৃষ্টি বাউড়ি। প্রত্যেকটি ঘটনাতেই অভিযোগ উঠেছে অতিরিক্ত গতি ও সংকীর্ণ রাস্তা।  বিশেষত রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ার ফলে যানজট যেমন বাড়ছে, তেমনি বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

শহরের মানুষের আক্ষেপ, সময় বাঁচাতে প্রতিদিন বাস ও ট্রাকগুলি শেষ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণহীন গতিতে ছুটে চলে। অথচ ট্রাফিক পুলিশের কোনও নজরদারির অভাব রয়েছে বলে দাবি করছেন অনেকে। আজ, মহাসপ্তমীর সকালে সাত বছরের শিশুর মৃত্যু যেন সেই দুর্নিবার গতি ও অব্যবস্থারই নির্মম প্রমাণ, যা প্রশ্ন তুলছে—আর কত প্রাণহানি হবে অব্যবস্থার কারণে।