আজকাল ওয়েবডেস্ক: সল্টলেকের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে লিওনেল মেসিকে ঘিরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলার রেশ এখনও কাটেনি।

রিষড়ার বাঙুর পার্কে মেসির অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্যোক্তা শতদ্রু দত্তর বাড়ির সামনে রবিরারেও পুলিশ প্রহরা মোতায়েন রয়েছে। ঘটনার পর হতাশ ও ক্ষুব্ধ মেসি ভক্তদের একটাই প্রশ্ন, যে আয়োজন হায়দরাবাদে সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব হল, কলকাতায় তা কেন ব্যর্থ হল?

একই সঙ্গে উঠছে আরও বড় প্রশ্ন, বারবার বিশ্ব ফুটবলের তারকাদের বাংলায় এনে আদৌ কি ভারতীয় ফুটবলের আখেরে কোনও লাভ হচ্ছে?

যুবভারতীর ঘটনার পর সেই বিতর্ক আরও তীব্র হয়েছে। শতদ্রু দত্তর রিষড়ার বাড়িতে থাকেন তাঁর মা, স্ত্রী ও ছেলে। রবিবার তাঁদের কাউকেই দেখা যায়নি।

তবে বাড়ি থেকে বেরোতে দেখা যায় মৌসুমি দাস নামে এক যুবতীকে। তিনি জানান, ‘আমি বৌদির (শতদ্রুর স্ত্রী) মেকআপ আর্টিস্ট। এই ঘটনা সবার কাছেই ভীষণ দুঃখের। দাদা তিন বছর ধরে এই ইভেন্টের পিছনে লেগে ছিলেন। নিজের ছেলে দিয়েগোর অনুশীলনের জন্য বাড়িতেই মাঠ তৈরি করেছিলেন। দাদার অনেক স্বপ্ন ছিল, সব মাটিতে মিশে গেল।’

একসময় কলকাতা ময়দান কাঁপানো বহু ফুটবলারের জন্ম রিষড়ায়। শিশির ঘোষ, সুধীর কর্মকার, সমীর চৌধুরীদের মতো ফুটবলাররা তার উদাহরণ।

সেই রিষড়ারই বাসিন্দা শতদ্রু দত্ত নিজে ফুটবলার না হলেও গত কয়েক বছরে ফুটবল সংগঠক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বিশ্ব ফুটবলের একাধিক নামী তারকাকে কলকাতায় এনেছেন তিনি।

কিন্তু মেসিকে কলকাতায় এনে ঘটে গিয়েছে বড় বিপর্যয়। প্রাক্তন ফুটবলার ও শতদ্রুর প্রতিবেশী সমীর চৌধুরী বলেন, ‘শতদ্রুকে নিয়ে একবার ব্রাজিল গিয়েছিলাম। তখন ব্যবস্থাপনা খুব ভালো ছিল। আগেও বহু ফুটবলারকে এনেছে, কখনও এমন হয়নি। আমরা ভিআইপি বক্সে বসেছিলাম, সেখান থেকেও মেসিকে দেখতে পাইনি। ফুটবলের ভগবান মেসি যে মাঠে নিঃশ্বাস নিয়েছেন, সেই মাঠে আমরাও নিঃশ্বাস নিয়েছি এটুকুই প্রাপ্তি।’

সমীর চৌধুরীর স্ত্রী সোমা চৌধুরী বলেন, ‘এই ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু ইংরেজিতে একটা কথা আছে, কোনও আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর যদি ‘সরি’ বলা হয়, তার কি কোনো মূল্য থাকে? যা হয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। মেসি ফুটবলের আইকন। আমরা ভীষণ মর্মাহত। ইতিহাসে এটা একটা কালো দিন হয়ে রইল।’

মেসি ভক্ত সৌরিশা চৌধুরীর ক্ষোভও এখনও কমেনি। তিনি বলেন, ‘মেসির ভক্ত হিসেবে মেসিকে দেখার জন্য গিয়েছিলাম। ভাল জায়গায় বসেও দেখতে পেলাম না। এত মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করা হয়েছে। হায়দরাবাদে সব কিছু পরিকল্পনা করে করা হয়েছিল বলেই সব ঠিকঠাক হয়েছে। এখানে কোনও পরিকল্পনাই ছিল না। স্বার্থপরের মতো আচরণ করা হয়েছে। গরিব মানুষ টাকা দিয়েছে, বড়লোকরা তার ফায়দা নিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলব, মেসিকে দূর থেকেই ভালোবাসা উচিত। এখানে ভালবাসা দেওয়ার মতো পরিকাঠামো নেই। যে ধরনের নিরাপত্তা থাকা দরকার ছিল, তা ছিল না। যাদের ওপর দায়িত্ব ছিল, তাঁরাই সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন। এক সময় মনে হচ্ছিল জীবন বাঁচিয়ে কীভাবে বের হব।’