আজকাল ওয়েবডেস্ক: শহরজুড়ে একের পর এক চুরির ঘটনায় মাথায় হাত পুলিশের। কখনও মন্দির, কখনও ফাঁকা বাড়ি, কখনও দোকান, চোরেরা যেন এখন নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে বোলপুরের অলিগলিতে।
তবে এই আতঙ্কের মধ্যেই এমন এক ঘটনা ঘটেছে, যা গোটা শহরকে হাসির বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে। কারণ, ধৃত দুই চোরের অকপট ও সরল স্বীকারোক্তি শুনে পুলিশ থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছেন চোরের এই কাণ্ডে।
ঘটনাটি ঘটেছে বোলপুর পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিমবাজার এলাকায়। শনিবার রাতে দুটি স্টেশনারি দোকানে চুরির অভিযোগ ওঠে।
রবিবার সকালে দোকান খুলতেই মালিক শিবশঙ্কর সামন্ত ওরফে শিবু দেখেন, দোকানের তালা ভাঙা, শিকল কাটা আর ভেতরে এলোমেলো অবস্থা।
পাশের দোকানেও ঠিক একই ছবি। অভিযোগ, দুটি দোকান মিলিয়ে কয়েক হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বোলপুর থানার পুলিশ।
সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ শনাক্ত করে দুই অভিযুক্তকে রাজু মেটে ও সঞ্জিত মাল। রাজুর বাড়ি রজতপুরে, সঞ্জিতের কাশিমবাজারে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, দু’জনেই দীর্ঘদিন ধরে চুরির সঙ্গে যুক্ত। শনিবার রাতেই পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
কিন্তু তাদের স্বীকারোক্তি শুনে তদন্তকারীরাও হাসি চেপে রাখতে পারেননি। দুই অভিযুক্ত জানায়, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দোকানের তালা ভেঙে তারা চার প্যাকেট সিগারেট ও নগদ ৫০ টাকা চুরি করেছে।
এমন অকপট স্বীকারোক্তি পুলিশের খাতায় সচরাচর দেখা যায় না। থানার এক সিভিক ভলান্টিয়ার সেই স্বীকারোক্তি ভিডিও করে ফেলেন, যা কিছুক্ষণের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়।
ভিডিওতে চোরদের মুখে শোনা যায়, ‘কাশিমবাজারে শিবু জেঠুর দোকানে তালা ভেঙে চুরি করেছিলাম। চার প্যাকেট সিগারেট নিয়েছিলাম, এক প্যাকেট খেয়েছি। আর ৫০ টাকা নিয়েছিলাম। শিবু জেঠু ভালো মানুষ, কালকে গিয়ে ফেরত দিয়ে দেব।’
এই কয়েকটি বাক্যই এখন বোলপুরের মানুষের কাছে হাসির কারণ। পুলিশের কাছে এটি অপরাধমূলক স্বীকারোক্তি হলেও, সাধারণ মানুষের কাছে যেন এক ব্যতিক্রমী কৌতুকের গল্প।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ লিখেছেন, ‘এরা তো একেবারে নিরীহ চোর, টাকাও ফেরত দিতে চায়!’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘যদি বড় বড় চোররাও এভাবে স্বীকার করত, তাহলে দেশটা অনেক আগেই বদলে যেত!’
তবে বোলপুর থানার এক অফিসার জানিয়েছেন, ‘চুরি ছোট হলেও আইন একই থাকে। মামলা দায়ের করা হয়েছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।’
একদিকে শহরে চুরির ঘটনায় মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে, অন্যদিকে রাজু–সঞ্জিতের এই নির্ভেজাল স্বীকারোক্তি এখন বোলপুরের নতুন আলোচনার কেন্দ্র।
কেউ বলছেন, ‘চুরি করেও বিবেক জেগেছে, এরা আলাদা।’ কেউ আবার রসিকতার সুরে মন্তব্য করছেন, ‘যদি সব চোর এমন সৎ হত, তাহলে চুরিও হয়তো একদিন শিল্প হয়ে উঠত!’ চুরির আতঙ্কের মধ্যেও শহরজুড়ে মানুষ এই দুই চোরের কাণ্ডে হাসছেন।
