আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি এক বাঙালি মহিলার সোশ্যাল মিডিয়া কর্মকাণ্ড ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। একাধিক রিল ভিডিও এবং ‘এন্টারটেইনমেন্ট কনটেন্ট’-এর মাধ্যমে “সামাজিক শালীনতা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত” হানার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ দায়ের করেছেন এক সমাজকর্মী সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী, যিনি নিজের বক্তব্যে জানিয়েছেন, তিনি “সমাজকে কলুষমুক্ত রাখতেই” এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন।
অভিযোগকারী লিখেছেন, “কমপ্লেন করা হয়ে গিয়েছে, সুইটহার্ট। তোমার স্বামী ও তোমার সঙ্গে যুক্ত আর এক মহিলা — তোমাদের সকলের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” তাঁর দাবি, সোশ্যাল মিডিয়া কোনো পতিতালয় নয়, এবং যেভাবে এই ‘রাশিয়ান বৌদি’ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের শরীর প্রদর্শন করছেন, তা ভারতীয় সমাজের মূল্যবোধের পরিপন্থী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, 'debjitsabetri' নামক পেজটি থেকে অশ্লীল ভিডিও পোস্ট করা ওই মহিলা নিজেকে 'রাশিয়ান বউদি' নাম দিয়েই প্রচার করে থাকেন।
তার কন্টেন্টের সবচেয়ে বিতর্কিত অংশটি ছিল একটি “প্র্যাঙ্ক ভিডিও” ঘিরে, যেখানে দাবি করা হয়, এক বয়স্ক ব্যক্তি এই বৌদির বক্ষযুগলের দিকে তাকিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, এবং তাতে তিনি ও তাঁর স্বামী হাসাহাসি করেন। এই ঘটনাটিকে অনৈতিক এবং আইনবিরুদ্ধ বলেই চিহ্নিত করছেন অভিযোগকারী। আরও অভিযোগ করা হয়েছে, ওই মহিলা একটি রিল ভিডিওতে সিঁদুর পরে প্রলোভন দেখিয়ে ভিডিও বানিয়েছেন। যা অভিযোগকারীর মতে, “সিঁদুরের ধর্মীয় পবিত্রতাকে অপমান” এবং “সমগ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের ইমোশনে আঘাত”।
আরও পড়ুন: ভয়ঙ্কর! ধর্মস্থল মন্দিরে ৫০০ জনকে ধর্ষণ, খুন! ভয়াবহ জবানবন্দিতে কাঁপছে গোটা কর্ণাটক
তিনি সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আপনারা যদি মনে করেন আমি ঠিক কাজ করেছি, তাহলে এই তথ্যটা প্রতিটা ঘরের কোণায় কোণায় পৌঁছে দিন। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার রুখতে এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরই।” এই অভিযোগ সামনে আসতেই নানা মত উঠে আসছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কেউ এই পদক্ষেপকে সাহসী ও প্রয়োজনীয় বলে অভিহিত করছেন, আবার কেউ এটিকে ‘মরাল পুলিশিং’-এর এক দৃষ্টান্ত হিসেবেই দেখছেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অভিযুক্ত রাশিয়ান বৌদি বা তাঁর স্বামীর তরফে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় “এন্টারটেইনমেন্ট”-এর নামে অশ্লীল কনটেন্ট তৈরি ও ছড়ানোর প্রবণতা আজ বিপজ্জনক মাত্রা ছুঁয়েছে। বিশেষ করে শরীরপ্রদর্শনমূলক ভিডিও ও প্রলোভনমূলক রিলসের মাধ্যমে যে ভিউ, লাইক ও ফলোয়ার বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে, তা যুব সমাজের মানসিক গঠনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তরুণরা বাস্তব ও কল্পনার সীমারেখা ভুলে যাচ্ছে, সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধা কমছে, এবং নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বিকৃত হচ্ছে। এর ফলস্বরূপ, মহিলাদের প্রতি হিংসা, স্টকিং, সাইবার বুলিং এবং যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়েই চলেছে। সামাজিক মাধ্যম যেখানে সৃজনশীলতা ও সংবেদনশীলতার মঞ্চ হতে পারত, সেখানে আজ তা অনেকাংশে যৌনতা ও ভেকবাজির বাজারে পরিণত হয়েছে। মনোবিদদের মতে, এই প্রবণতা রুখতে সামাজিক সচেতনতা, ডিজিটাল শিক্ষার প্রসার এবং কনটেন্ট রেগুলেশনের প্রয়োগ জরুরি, নইলে আগামীর সমাজ আরও বিপদগ্রস্ত হবে।
