আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রতি বছর ১৪ নভেম্বর শিশু দিবস উপলক্ষে সারা দেশ যখন আনন্দ ও উৎসবের আবহে মেতে ওঠে, তখন সেই উদযাপনের সুর আরও গভীর অর্থে স্পর্শ করে গুলমা চা-বাগানকে। শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির 'ব্যাচেলর অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইন হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট (BBA-HM)' বিভাগ বৃহস্পতিবার আয়োজন করল বস্ত্রদান ও লেখাপড়ার প্রয়োজনে নানারকম জিনিস বিতরণ কর্মসূচি। যা পরিচিত 'কোশিশ ৩.০’ নামে। এই উদ্যোগ টানা পালিত হয়ে তৃতীয় বছরে পড়ল।

শিশু দিবসের মূল চেতনা ও লক্ষ্য হল, তাদের নিষ্পাপ মুখের উজ্জ্বল হাসি, শিক্ষার অধিকারের দাবি এবং সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্নকে সফল করার প্রচেষ্টা। এই উদ্যোগই যেন এদিন বাস্তবে ধরা দিল চা-বাগানের খোলা মাঠে। এসআইটি শিক্ষার্থীদের থেকে নতুন জামাকাপড়, পড়াশোনার সামগ্রী ও চকোলেট পেয়ে চা-বাগানের শিশু ও পরিবারগুলির মুখে ছিল এক অদ্ভুত আনন্দের হাসি।
আর শুধু তাদের হাতে জিনিস তুলে দেওয়াই নয় একসঙ্গে সময় কাটানো, গল্প করা ও সেইসঙ্গে খেলাধুলা। গোটা দিনটি পরিণত হল এক সুন্দর মানবিক মিলনমেলায়।

শিক্ষার্থীদের কাছে এই কর্মসূচি শুধুমাত্র একটি সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রকল্প নয়, বরং শেখার জন্য একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা। সহানুভূতি, নেতৃত্ব, দলগত কাজ এবং সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের এক মূল্যবান পাঠ।

বিভাগীয় প্রধান শ্রীমতী দেবযানী মুখোপাধ্যায় এই উদ্যোগের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলেন, "আমাদের লক্ষ্য সহানুভূতিশীল, মানবিক ও দায়িত্বশীল স্বাস্থ্যসেবার জন্য নেতৃত্ব তৈরি করা। ‘কোশিশ’ শুধুমাত্র একটি ইভেন্ট নয়—এটি একটি আন্দোলন যা আমাদের শিক্ষার্থীদের শেখায়, নেতৃত্ব শুরু হয় সেবা দিয়ে এবং শেষও সেবাতেই। আজকের আয়োজন সেই দর্শনকেই প্রতিফলিত করেছে।” তিনি আরও বলেন, "এদিন শুধু শিশু নয়, আমরা মোট ১০০জনের হাতে বস্ত্র তুলে দিতে পেরেছি। সেইসঙ্গে ৫০ 'সেট স্টেশনারি' খুদে বন্ধুদের হাতে তুলে দিয়েছি।"

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিব্যক্তিতেও ধরা পড়েছে কৃতজ্ঞতা ও আপ্লুত হয়ে যাওয়া মন। স্থানীয় সন্তোষ ঠাকুর বলেন, “কাপড়ের চেয়েও বেশি মূল্যবান আজ তারা আমাদের শিশুদের সঙ্গে যে ভালবাসা ভাগ করেছে। সেটাই আমাদের কাছে আসল উপহার।” অন্য এক স্থানীয় রমেশ থাপা বলেন, "এই ধরনের উদ্যোগ আমাদের সম্প্রদায়ে আশার আলো জাগায়। শীতের আগে এই সহায়তা সত্যিই অসামান্য।”

শিলিগুড়ি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির প্রফেশনাল স্টাডিজ কলেজের অধ্যক্ষা ডঃ অরুন্ধতী চক্রবর্তী বলেন, “এসআইটি সবসময় সহানুভূতিশীল নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপনে বিশ্বাসী। একটি ছোট্ট অথচ সহৃদয় কাজই বড় পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা আজ শ্রেণিকক্ষের বাইরে এসে মানুষের জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এই অভিজ্ঞতাই ভবিষ্যতে তাদের আরও মানবিক ও দায়িত্বশীল হতে অনুপ্রাণিত করবে।”

বলাবাহুল্য, একদিনের এই মানবিক উদ্যোগ গুলমা চা-বাগান এবং এসআইটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি করল এক অটুট সম্পর্ক। কোশিশ ৩.০ তাই শুধু একটি অনুষ্ঠান নয় — সহানুভূতির হাত ধরে এগিয়ে চলার এক অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে উঠল।