আজকাল ওয়েবডেস্ক: এসআইআর আতঙ্কেই, মৃত্যু একের পর এক!  গত কয়তেকদিনে পর পর উঠে আসছে মৃত্যুর ঘটনা। শুক্রবার সকালে ফের সামনে এসেছে আরও এক ঘটনা। অভিযোগ, এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কুলপি বিধানসভার ঢোলা থানায় কালিচরণপুর গ্রামে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন কুলপির বিধায়ক যোগ রঞ্জন হালদার, এবং মথরাপুরের সাংসদ বাপি হালদার। বিধায়কের দাবি, এসআইআর আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শাহাবুদ্দিন পাইকের(৪৫) মৃত্যু হয়েছে।

 মৃত শাহাবুদ্দিনের চার ছেলে, স্ত্রী বর্তমান। স্থানীয় একটি বেসরকারি মাদ্রাসায় পড়াতেন তিনি। গত শনিবার হৃদরোগ আক্রান্ত হন। ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে শনিবার থেকে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত ব্যক্তির বাবা আব্দুল মজিদদের দাবি, কুলপি ব্লকে প্রকাশিত ২০০৩-এর লিস্টে তাঁর নাম আছে, ছেলেরও ভোটার কার্ড রয়েছে। তবে মৃত ছেলের স্ত্রী অর্থাৎ  বৌমার কোনও নাম বা পরিচয় পত্র ছিল না। সব মিলিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন ওই ব্যক্তি, দাবি পরিবারের। 

শাহাবুদ্দিনের মৃত্যুর পর বিধায়ক সংসদ, তাঁর আত্মীয়রা এসআইআর, নির্বাচন কমিশনার ও কেন্দ্রীয় সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। যদিও বিজেপির পক্ষ থেকে ঘটনা সাজানো পরিকল্পিতবলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও চলছে একইসঙ্গে। 

শাহবুদ্দিনের মৃত্যু প্রসঙ্গে, মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ বাপি হালদার বলেন, 'রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে এসআইআর। বেশ কয়েকদিন আগে কুলপি বিধানসভার অন্তর্গত ঢোলাহাট অঞ্চলের কালীচরণপুর এলাকায় শাহাবুদ্দিন পাইকের বাড়িতে যান BLO।  ২০০২-এর ভোটার তালিকায় ওঁর এবং উনার স্ত্রীর নাম ছিল না। এরপর থেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শাহাবুদ্দিন। ঘটনাস্থলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় শাহাবুদ্দিন পরিবারের লোকজন চিকিৎসা করানোর জন্য ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শাহাবুদ্দিনের। গোটা রাজ্য জুড়ে এসআইআর নিয়ে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে কেন্দ্র সরকার। সমস্ত মৃত্যুর দায়ভার নিতে হবে বিজেপিকে।'  

 

এর আগে, ৬ নভেম্বর জানা যায়, এসআইআর আতঙ্কে মুর্শিদাবাদ জেলায় ফের আত্মঘাতী হন এক ব্যক্তি। বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ বহরমপুর থানার অন্তর্গত গান্ধী কলোনী এলাকায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক ব্যবসায়ী। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই ব্যক্তির নাম তারক সাহা (৫৪)। এদিন দুপুরে দোকান থেকে বাড়ি ফিরে এসে একটি গাছের সঙ্গে গামছার ফাঁস গলায় বেঁধে ঝুলে আত্মঘাতী হন ওই ব্যক্তি। খবর পেয়ে বহরমপুর থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। 

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গান্ধী কলোনীর বাসিন্দা পেশায় ঝালমুড়ি বিক্রেতা তারক সাহার ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম ছিল না। এই কারণে গত বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি আতঙ্কে ভুগছিলেন। তারকবাবুর প্রতিবেশী অপু বিশ্বাস বলেন, “গতকাল বিকেলে আমার সঙ্গে যখন তারকের দেখা হয় তখন সে কেঁদে ফেলে। তারক আমাকে বলেছিল তাঁর বাবা-মায়ের মৃত্যু হয়েছে এবং তাঁদের যথাযথ কোনও নথি নেই। তাঁর এক মামা বহরমপুরের কান্তনগরে থাকলেও তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল না থাকায় সে প্রয়োজনীয় নথি পাচ্ছিল না।”

 

প্রসঙ্গত, গত ৪ অক্টোবর রাজ্য জুড়ে এসআইআর শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলার মোট চার জন ব্যক্তির এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। মৃতদের মধ্যে দু’জন আত্মঘাতী হয়েছেন এবং দু’জন দুশ্চিন্তায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে মৃতদের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন।