মিল্টন সেন, হুগলি: দেশের জন্য কাজ করেছেন। শান্তি সেনাদলের সদস্য ছিলেন। শ্রীলঙ্কার কলোম্বোয় গিয়ে শান্তিসেনার দায়িত্ত্ব পালন করেছেন। অথচ প্রাক্তন সেনাকর্মীর নাম বাদ গিয়েছে ভোটার তালিকা থেকে। পেলেন না এনুমারেশন ফর্মও। এর ফলে চরম দোটানায় পড়েছেন ওই প্রাক্তন সেনকর্মী। কী করা উচিৎ তা বুঝে উঠতে পারছেন না।
টানা তিন দশক ভারতীয় সেনার মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে কর্মরত ছিলেন হুগলি চুঁচুড়া পুরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের কাপাসডাঙা লিচুতলার বাসিন্দা শশীকান্ত হালদার। বুধবার তিনি জানিয়েছেন, সেনায় কর্মরত থাকাকালীন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, রাজীব গান্ধী দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এলটিটিই দমনে শ্রীলঙ্কায় শান্তিসেনা পাঠানো হয়েছিল। সেই দলের সদস্য ছিলেন শশীকান্ত। ভারতীয় সেনার কাজের সূত্রে ফোর্ট উইলিয়াম থেকে লাদাখ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গেছেন। অবসর নিয়েছেন প্রায় ৩৪ বছর হয়ে গিয়েছে। তাঁর দাবি, ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন একাধিক নির্বাচনে। গত ২০০২ সালের শেষ এসআইআর তালিকাতেও তাঁর নাম আছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও ভোট দিয়েছেন। অথচ বর্তমান ভোটার তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ হয়ে গেছে।
৮৭ বছর বয়সে আবার তাঁকে নতুন করে নাম তুলতে হবে ভোটার তালিকায়। কেন্দ্রীয় সরকারি পেনশন পান তিনি। নাম তুলতে অসুবিধা হওয়ার কথা না। তবে অসুস্থ শরীরে আবার হয়রানির শিকার হতে হবে বলে মনে করছেন শশীকান্ত। তাঁর ছেলে বিনয় হালদার জানিয়েছেন, তাঁর বাবার শারীরিকভাবে অসুস্থ। আবার ছয় নম্বর ফর্ম ফিলাপ করে নতুন করে নাম তুলতে হবে। শুনানিতে যেতে হবে। নানা প্রমাণ দেখাতে হবে। এত হ্যাপা তাঁর অসুস্থ বাবা পোহাতে পারবেন না।
বিনয়ের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের ভুলে বাবার নাম বাদ গিয়েছে তালিকা থেকে। তাঁর দাবি, বাড়িতে এসেই যা করার করে দিতে হবে। যে মানুষটা সারা জীবন দেশের সেবা করল, তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেল কীভাবে। পরিবারের কর্তা যিনি তিনিই এনুমারেশান ফর্ম পাননি। ভাবতেই অবাক লাগছে। বিস্মিত বিনয়ের প্রশ্ন, “বাবা তো জীবিত, তাহলে নাম বাদ দিল কে?”।
শশীকান্ত বাবু বলেছেন, তিনি ১৯৬৪ সালে ভারতীয় সেনায় যোগ দিয়ে ছিলেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছেন। যখন শ্রীলঙ্কায় ছিলেন তখন অবসরের সময় হল। শেষে আগ্রায় কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকেই অবসর গ্রহণ করেছেন। তারপর থেকে সব নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। বিএলও এসে তাঁকে বললেন তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে ডিলিট হয়ে গেছে। কী করে হল তিনি জানেন না।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁর বর্তমান ভোটার তালিকায় নাম নেই তিনি এনুমারেশন ফর্ম পাবেন না। খসড়া তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর যাঁদের নাম বাদ যাবে, তাঁদের উপযুক্ত নথি দেখিয়ে আবেদন করতে হবে।
