আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২০০২ সালের লিস্টে নাম নেই। ডানকুনিতে এসআইআর আতঙ্কে এক বৃদ্ধার মৃত্যু। অভিযোগ তুলল তৃণমূল। এসআইআর আতঙ্কে অসুস্থ আরও এক। ঘটনাটি ঘটেছে ডানকুনি পুরসভার ২০ নং ওয়ার্ডে। মৃতের নাম হাসিনা বেগম, বয়স ৬০। বেশ কয়েক দিন ধরে বৃদ্ধা এসআইআর নিয়ে চিন্তিত ছিলেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয়দের। তিন দিন আগে এসআইআর নিয়ে এলাকায় মিটিং হয়। তারপর থেকেই চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন হসিনা বেগম। তিনি ১৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হলেও মেয়ের সঙ্গে ২০নং ওয়ার্ডের নজরুলপল্লিতে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন।
গতকাল সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনা জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। আজ সোমবার সকালে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে যান ডানকুনি পুরসভার পুর প্রধান হাসিনা শবনম।
হাসিনা শবনম বলেন, এসআইআর নিয়ে যথেষ্ট আতঙ্কিত মানুষ। বিশেষ করে যাঁদের ২০০২ সালের তালিকায় নাম নেই। যিনি মারা গেছেন, তাঁর ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে নাম নেই। সে কারণেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর আরও দাবি এলাকার আরও একজন এসআইআর আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁর চিকিৎসা চলছে।
ডানকুনির ঘটনার পরেই কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, 'এসআইআর আতঙ্কে আরেকটি মৃত্যুর খবর এসেছে। এসআইআর আতঙ্কে মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে উদ্বেগে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৬০ বছরের বৃদ্ধা। এরপর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ, ২০০২ সালের ভোটার লিস্টে তাঁর নাম ছিল না। তিনি এখানকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। সপরিবারে থাকতেন। এসআইআর নিয়ে এই চাপ বিজেপি তৈরি করেছে। ধরে নাম কেটে দেব, বের করে দেব, বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেব, এই চাপেই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, কেউ আত্মহত্যা করেছেন, কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। এই বিজেপি এবং তাদের দ্বারা প্রভাবিত নির্বাচন কমিশন সাধারণ মানুষকে বিপজ্জনক দিকে ঠেলে দিয়েছে। আমরা এই প্রক্রিয়ার, এই আতঙ্ক সৃষ্টির, এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ করছি।'
ডানকুনিতে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর ঘটনার পর সরব হয়েছেন তৃণমূলের সুদীপ রাহা। ভিডিওবার্তায় তিনি জানিয়েছেন, 'এসআইআর আতঙ্কে বাংলায় ফের মৃত্যু। এবার হুগলি জেলার ডানকুনিতে। ডানকুনি পুরসভার ২০ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাসিনা বেগম। তাঁর কাছে ভোটার কার্ড ছিল, আধার কার্ড ছিল। তারপরেও এসআইআর আতঙ্কে তিনি প্রাণ হারালেন। পরিবারের লোকজন আত্মীয়স্বজন সকলেই জানিয়েছেন, আতঙ্কে তিনি জর্জরিত ছিলেন। প্রত্যেকের কাছে অসহায়ের মতো জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'আমার কী হবে, আমার কী হবে? আমি কি এই দেশে থাকতে পারব না? এই বয়সে আমি কোথায় যাব, আমাকে কোথায় পাঠাবে?'
সুদীপের আরও বক্তব্য, 'সারা বাংলা জুড়ে বাংলা বিরোধী বিজেপির জমিদাররা যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, এই মৃত্যুর দায় নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। নির্বাচন কমিশন এসআইআর ঘোষণা করার পর বাংলায় একের পর এক মৃত্যু হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত বাংলার মানুষের জন্য নির্বাচন কমিশনার কোনও বার্তা দেননি। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের, বাংলার জমিদার বিজেপির অঙ্গুলি হেলনে, বাংলা বিরোধী বিজেপির দলদাস নির্বাচন কমিশন যেভাবে বাংলার মানুষের মধ্যে এসআইআর আতঙ্ক ঢুকিয়ে দিয়েছে, তা একের পর এক প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। বাংলায় মমতা ব্যানার্জির সরকার যতক্ষণ আছে, অভিষেক ব্যানার্জির নেতৃত্বে যে আন্দোলন বাঙালি শুরু করেছে, আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন, একজন বৈধ ভোটারকে, বৈধ বাঙালিকে কেউ বাংলার ভিটেমাটি ছাড়া করতে পারবেন না। আপনারা কেউ মানসিক অবসাদে ভুগবেন না।'
এসআইআর ঘিরে আতঙ্কে অসুস্থ রিষড়া পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাকির আলি। আরামবাগের প্রাক্তন সাংসদ, রিষড়ার তৃণমূল নেতা সাকির আলি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন গতকাল। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে। তাঁর দাবি, এলাকায় বস্তি আছে। সেখানে এসআইআর ঘোষণা হওয়ার পর থেকে এলাকার হিন্দু মুসলিম সবাই আসছেন তাঁর কাছে। তাঁদের নাম আছ কিনা, কাগজ ঠিক আছে কিনা, দেখার জন্য, তাঁরা প্রত্যেকেই আতঙ্কে আছেন। তাঁদের নাম বাদ যাবে না তো? সবাইকে বোঝাতে গিয়ে, নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
বিজেপি রাজ্য কমিটির সদস্য স্বপন পাল বলেন, 'সব নাটক। রিষড়া পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শুনলাম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এসআইআর এর ভয়ে। এসব নাটক ছাড়া আর কিছু না। ভারতবর্ষের ১২টা রাজ্যে এসআইআর হচ্ছে। সেখানে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন না। এখানে তৃণমূলের নেতা কাউন্সিলর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সাকির আলির সঙ্গে রিষড়া পুরসভার চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যানের আদায় কাঁচকলা সম্পর্ক। তাই মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য কিছুটা প্রচারে আসার জন্য এইসব নাটক করছেন। কারণ তাঁরা জানেন আগামী নির্বাচনে তাঁরা হারবেন।'
