আজকাল ওয়েবডেস্ক: এসআইআর আতঙ্কে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। এর জন্য দায়ী কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি। প্রসঙ্গত বেশ কয়েকদিন আগে ব্যারাকপুর নিবাসী কাকলি সরকারের মৃত্যু হয়েছে এই এসআইআর আতঙ্কেই, এমনটাই অভিযোগ করেছিল ব্যারাকপুরের তৃণমূল নেতৃত্ব। আজ শনিবার ব্যারাকপুর পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে কে জি স্কুল রোডে এসআইআর আতঙ্কে মৃত কাকলি সরকারের বাড়িতে এলেন নারী ও পরিবার কল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী শশী পাঁজা। সঙ্গে ছিলেন বিধায়ক রাজ চক্রবর্তী, সাংসদ পার্থ ভৌমিক, ব্যারাকপুর পুরসভার চেয়ারম্যান উত্তম দাস। 

কাকলির পরিবারের লোকজনের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন মন্ত্রী শশী পাঁজা। তৃণমূলের প্রতিনিধি দল ওই পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। দেখা যায় ২০১৮ সালে ভোটের নাম তোলার জন্য সমস্ত পরিবার দরখাস্ত করেছিল। তাতে এবারে এসআইআর ফর্মে নাম আসে মৃত কাকলি সরকারের। এসআইআর আতঙ্কে এই মৃত্যুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করেন রাজ্যের মন্ত্রী। 

শশী পাঁজার বক্তব্য, 'স্রেফ আতঙ্কের জেরে অসময়ে একটা প্রাণ চলে গেল। কাকলির বাড়ির সবার সঙ্গে কথা বললাম। ওর দুই মেয়ে আছে। ওর স্বামী সবুজের চিকিৎসা চলছে। পরিবারের থেকে শুনলাম, টিভিতে ও বিজেপি নেতাদের ভয় দেখানো সব কথা শুনত আর আতঙ্কে ভুগত, যদি ওকে দেশ থেকে বাইরে চলে যেতে হয়। ভয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আমরা বলেছি যে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির নেতৃত্বে আপনাদের পাশে আছি, থাকব। মেয়েরা পড়াশোনা করুক, ভাল থাকুক। যা যা খরচ দরকার, আমরা দিয়ে গেলাম।' 

প্রসঙ্গত, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির নেতৃত্বে একাধিক টিম গঠন হয়েছে। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) চলাকালীন সব কাজ দেখার জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করেছেন তিনি। সেই দলে রয়েছেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা। 

কী হবে সেই দলের কাজ? তৃণমূল সূত্রে খবর, এই নেতারা এসআইআর উদ্বেগের কারণে যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন এবং কথা বলবেন। অভিষেকের নির্দেশ, এই নেতৃত্বকে সব সময় ভুক্তভোগীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। এর পাশাপাশি সব রকম সাহায্য করতে হবে। ৮ নভেম্বর শনিবার থেকেই ওই দলের সদস্যরা যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের বাড়ি যাবেন। 

আগরপাড়ায় প্রদীপ করের পরিবারের সঙ্গে বিকেল ৫টায় দেখা করবেন সমীরুল ইসমাল এবং পার্থ ভৌমিক। বিকেল ৪ টেয় টিটাগড়ে যাবেন শশী পাঁজা এবং তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। বিকেল ৪টের সময় ডানকুনিতে যাবেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং সুদীপ রাহা। হুগলিতে যাবেন জয়া দত্ত। তাঁর সঙ্গে থাকবে স্থানীয় নেতৃত্ব। উলুবেড়িয়ায় যাবেন অরুপ চক্রবর্তী। সঙ্গে থাকবেন স্থানীয় নেতৃত্ব।

এসআইআর আতঙ্কে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আগরপাড়ায়। প্রদীপ করের মৃত্যুতে প্রতিবেশীরা দাবি করেছিলেন, তাঁর ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। তবুও তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। তাই নিজেকে শেষ করে দেন। গত বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ের জয়পুর এলাকার যুবক সফিকুল গাজি (৩৫) এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। তাঁরা স্ত্রী জানান, গত কয়েক দিন ধরে আতঙ্কে ছিলেন স্বামী। বার বার বলছিলেন, তাঁর কোনও পরিচয়পত্র নেই। ভাই-বাপ কেউ নেই। স্ত্রী বার বার অভয় দেওয়ার চেষ্টা করলেও গত বুধবার সকালে তিনি নিজেকে শেষ করে দেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বহরমপুর থানার অন্তর্গত গান্ধী কলোনী এলাকায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন এক ব্যবসায়ী। সেক্ষেত্রেও পরিবাররে দাবি ছিল, আত্মহত্যার কারণ এসআইআর আতঙ্ক। ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় ‘দেশ ছাড়তে হবে’ এই আতঙ্কে গত ৪ নভেম্বর কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হন মুর্শিদাবাদের কান্দির মোহন শেখ (৫৫)। 

৪ নভেম্বর থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছে এসআইআর কর্মসূচি। চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসআইআর শুরুর দিনেই একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে দলের নেতা কর্মীদের অভিষেক বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কী কী করণীয়। তিনি সে দিন জানিয়ে দিয়েছিলেন। তৃণমূল আগামী এক মাস এসআইআর ক্যাম্প করবে। বুথ ভিত্তিক এজেন্ট (বিএলএ)-দের নির্দেশ দিয়েছিলেন, এনুমারেশন ফর্মের কাজ করার সময় এক মিনিটও বিএলও-দের একা ছাড়া যাবে না। সব সময় ছায়ার মতো তাঁদের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। রাজ্য জুড়ে ৬২০০টি ক্যাম্প, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হেল্পডেস্ক চালানোর নির্দেশও দিয়েছিলেন। এছাড়াও দলের সাংসদ এবং বিধায়কদের ওয়ার রুম তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। ২৯৪টি বিধানসভার প্রতিটিতে একটি করে ওয়ার রুম তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি ওয়ার রুমে ১৫ জন করে থাকবেন।

তিনি বলেন, 'এই ছয় মাস আমাদের অ্যাসিড টেস্ট। এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করে সকল ভোটারের নাম তুলতে হবে। কারও নাম যেন বাদ না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। বিজেপি এসআইআর, এনআরসি করে বাংলা ভাগ করতে চায়। মানুষ যেন বুঝতে পারেন একমাত্র তৃণমূলই তাঁদের পাশে আছে।'