তিনি আগেই দলের নেতা কর্মীদের বার্তা দিয়েছিলেন মানুষ যেন বুঝতে পারেন একমাত্র তৃণমূলই তাঁদের পাশে আছে। সেই কর্মসূচিতে যাতে কোনও খামতি না থাকে সে জন্য ফের উদ্যোগী হলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) চলাকালীন সব কাজ দেখার জন্য একটি বিশেষ দল গঠন করলেন তিনি। সেই দলে থাকবেন দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা।
কী হবে সেই দলের কাজ? তৃণমূল সূত্রে খবর, এই নেতারা এসআইআর উদ্বেগের কারণে যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন এবং কথা বলবেন। অভিষেকের নির্দেশ, এই নেতৃত্বকে সব সময় ভুক্তভোগীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। এর পাশাপাশি সব রকম সাহায্য করতে হবে। ৮ নভেম্বর শনিবার থেকেই ওই দলের সদস্যরা যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের বাড়ি যাবেন।
আগরপাড়ায় প্রদীপ করের পরিবারের সঙ্গে বিকেল ৫টায় দেখা করবেন সমীরুল ইসমাল এবং পার্থ ভৌমিক। বিকেল ৪টেয় টিটাগড়ে যাবেন শশী পাঁদা এবং তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। বিকেল ৪টের সময় ডানকুনিতে যাবেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং সুদীপ রাহা। হুগলিতে যাবেন জয়া দত্ত। তাঁর সঙ্গে থাকবেন স্থানীয় নেতৃত্ব। উলুবেরিয়ায় যাবেন অরুপ চক্রবর্তী। সঙ্গে থাকবেন স্থানীয় নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, বিহারের পর বাংলাতেও চালু হয়েছে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়া। যার জেরে অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক লক্ষ্য করা গিয়েছে। অনেকেই ইতিমধ্যে ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নিজের নাম খোঁজার পাশাপাশি এই সম্পর্কিত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নথি জোগাড় করছেন। এর জন্য সাইবার ক্যাফেতেও সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা গিয়েছে। নথি না জমা দিলে দেশ ছাড়া হতে হবে, এই ভয়ে রয়েছেন অনেকেই। সম্প্রতি রাজ্য জুড়ে কয়েকটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, এসআইআর-এর কারণেই মৃত্যু হয়েছে।
এসআইআর আতঙ্কে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আগরপাড়ায়। প্রদীপ করের মৃত্যুতে প্রতিবেশীরা দাবি করেছিলেন, তাঁর ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। তবুও তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। তাই নিজেকে শেষ করে দেন। গত বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ের জয়পুর এলাকার যুবক সফিকুল গাজি (৩৫) এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। তাঁরা স্ত্রী জানান, গত কয়েক দিন ধরে আতঙ্কে ছিলেন স্বামী। বার বার বলছিলেন, তাঁর কোনও পরিচয়পত্র নেই। ভাই-বাপ কেউ নেই। স্ত্রী বার বার অভয় দেওয়ার চেষ্টা করলেও গত বুধবার সকালে তিনি নিজেকে শেষ করে দেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বহরমপুর থানার অন্তর্গত গান্ধী কলোনী এলাকায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন এক ব্যবসায়ী। সেক্ষেত্রেও পরিবাররে দাবি ছিল, আত্মহত্যার কারণ এসআইআর আতঙ্ক। ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় ‘দেশ ছাড়তে হবে’ এই আতঙ্কে গত ৪ নভেম্বর কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হন মুর্শিদাবাদের কান্দির মোহন শেখ (৫৫)।
৪ নভেম্বর থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছে এসআইআর কর্মসূচি। চলবে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এসআইআর শুরুর দিনেই একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে দলের নেতা কর্মীদের অভিষেক বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কী কী করণীয়। তিনি সে দিন জানিয়ে দিয়েছিলেন। তৃণমূল আগামী এক মাস এসআইআর ক্যাম্প করবে। বুথ ভিত্তিক এজেন্ট (বিএলএ)-দের নির্দেশ দিয়েছিলেন, এনুমারেশন ফর্মের কাজ করার সময় এক মিনিটও বিএলও-দের একা ছাড়া যাবে না। সব সময় ছায়ার মতো তাঁদের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। রাজ্য জুড়ে ৬২০০টি ক্যাম্প, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হেল্পডেস্ক চালানোর নির্দেশও দিয়েছিলেন। এছাড়াও দলের সাংসদ এবং বিধায়কদের ওয়ার রুম তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন অভিষেক। ২৯৪টি বিধানসভার প্রতিটিতে একটি করে ওয়ার রুম তৈরি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। প্রতিটি ওয়ার রুমে ১৫ জন করে থাকবেন।
তিনি বলেন, “এই ছয় মাস আমাদের অ্যাসিড টেস্ট। এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করে সকল ভোটারের নাম তুলতে হবে। কারও নাম যেন বাদ না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। বিজেপি এসআইআর, এনআরসি করে বাংলা ভাগ করতে চায়। মানুষ যেন বুঝতে পারেন একমাত্র তৃণমূলই তাঁদের পাশে আছে।”
