মনিরুল হক, কোচবিহার

বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া শেষে কোচবিহার জেলায় বাদ গিয়েছে মোট ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৩৩৫ জন ভোটারের নাম। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাদ পড়া ভোটারদের মধ্যে প্রায় ৫৮ হাজারই মৃত বলে নথিভুক্ত। বাকি ভোটারদের ক্ষেত্রে স্থানান্তরিত, নিখোঁজ কিংবা অন্যান্য কারণ দেখানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, কোচবিহার জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ২৪ লক্ষ ৯০ হাজার। এসআইআর প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর বুথ ভিত্তিক খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে কোন বুথে কার নাম বাদ পড়েছে, তা যাচাই করার সুযোগ পাচ্ছেন ভোটাররা। তবে এই তালিকা প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

কমিশন সূত্রে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভায় ১২ হাজার ২৫৬ জন, কোচবিহার উত্তর বিধানসভায় ১৪ হাজার ৬৫৯ জন, শীতলকুচি বিধানসভায় ১৩ হাজার ৪৮৮ জন এবং মেখলিগঞ্জ বিধানসভায় ৯ হাজার ৬৫৪ জন ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। এছাড়াও মাথাভাঙ্গা বিধানসভায় ১১ হাজার ৩৭৫ জন, সিতাই বিধানসভায় ১৫ হাজার ৯৯৯ জন এবং দিনহাটা বিধানসভায় সর্বাধিক ১৬ হাজার ৪৪৭ জন ভোটারের নাম খসড়া তালিকায় নেই। নাটাবাড়ি বিধানসভায় ১০ হাজার ১২৮ জন এবং তুফানগঞ্জ বিধানসভায় ৯ হাজার ৩৬৪ জন ভোটারও তালিকা থেকে বাদ গিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত খসড়া তালিকা নিয়ে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। তিনি অভিযোগ করেন, জীবিত মানুষকে মৃত দেখানো হচ্ছে এবং যাঁরা কর্মসূত্রে বাইরে রয়েছেন, তাঁদের ‘খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’ বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, কোচবিহার শহরেই এমন বহু ভোটার রয়েছেন যাঁরা নিয়মিত ভোট দেন, অথচ খসড়া তালিকায় তাঁদের নাম নেই।

অভিজিৎ দে ভৌমিক জানান, “জীবিত মানুষকে মৃত বলা হচ্ছে—এটা শুধু ভুল নয়, চরম অসঙ্গতি। আবার যারা বাইরে কাজে রয়েছেন, তাঁদের বলা হচ্ছে নিখোঁজ। কারা কারা আনম্যাপড ভোটার, তার কোনো তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। কোন শ্রেণীর মানুষদের এই নোটিশ পাঠানো হচ্ছে, সেটাও স্পষ্ট নয়।” তাঁর অভিযোগ, সংখ্যালঘুদের টার্গেট করার অভিযোগ থাকলেও বাস্তবে হিন্দু ভোটারদের নামই সবচেয়ে বেশি বাদ যাচ্ছে। কেন এই তথ্য আড়াল করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের মুখোশ খুলে দেওয়া হবে।”

এদিকে নির্বাচন কমিশনের তরফে ভোটারদের নাম যাচাইয়ের জন্য অনলাইন ও অফলাইন—দু’ধরনের ব্যবস্থাই রাখা হয়েছে। ভোটাররা অনলাইনে eci.gov.in, ceowestbengal.wb.gov.in ও ECINET মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে নিজেদের নাম যাচাই করতে পারবেন। অফলাইনে খসড়া তালিকা দেখতে হলে সংশ্লিষ্ট বুথ লেভেল অফিসার (BLO)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। জেলার প্রতিটি বিএলও-র কাছেই খসড়া তালিকার হার্ড কপি রয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলিকেও খসড়া তালিকার সফট কপি দেওয়া হয়েছে, ফলে সংশ্লিষ্ট বিএলএ-দের কাছ থেকেও ভোটাররা তথ্য পেতে পারেন।

এই আবহে খসড়া ভোটার তালিকা নিয়ে কোচবিহারে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। এখন দেখার, কমিশন এই অভিযোগগুলির কী জবাব দেয় এবং চূড়ান্ত তালিকায় কতটা সংশোধন হয়।