শ্রেয়সী পাল, মুর্শিদাবাদ: রাজার বাড়িতে গুপ্তধন লুকিয়ে রাখার কথা সবাই শুনেছে, কিন্তু ভিখারির বাড়িতেও গুপ্তধন? মুর্শিদাবাদের সালার থানার অন্তর্গত হামিদাহাটি-পিলখুন্ডি গ্রামে নূর ইসলাম নামে বছর ষাটেকের এক বাকশক্তিহীন ভিক্ষুকের বাড়ির মাটির তলা থেকে একের পর এক বস্তা ভর্তি  টাকা উদ্ধারের ঘটনায় চক্ষুচড়ক গাছ। 

পিলখুন্ডি গ্রামে, গত বেশ কয়েক বছর ধরে থাকেন নূর ইসলাম। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষাবৃত্তি করে তাঁর জীবন চলে। দিনের শেষে গ্রামের লোকেরা যার যা ইচ্ছে হয় খেতে দেন নূরকে। এবছরের বর্ষায় নূরের কুঁড়েঘরটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শীতকাল পড়েছে, কিন্তু ওই বৃদ্ধ খোলা আকাশের নীচেই দিন কাটাচ্ছেন। নূরের এই অবস্থা দেখে গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি তাঁর ভাঙা বাড়ি মেরামতির উদ্যোগ নেন। সেই কারণেই দিন দু'য়েক আগে ভিক্ষুক নূরের বাড়ি ঠিক করার কাজের জন্য দু'জন  মিস্ত্রিকে কাজে লাগানো হয়। 

মিস্ত্রিরা বাড়ি ঠিক করার জন্য নূরের ঘরের মাটির ঢিবি কেটে সরাতে গেলে রহস্য ফাঁস হয়। ঢিবির মধ্যে মিলল 'গুপ্তধন'-এর খোঁজ। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ভিক্ষাবৃত্তি করে জমানো প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা বস্তায় ভরে ঘরের মধ্যে মাটি চাপা দিয়ে লুকিয়ে রেখেছিলেন নূর। সে কথা কাউকে বুঝতেই দেননি বাকশক্তিহীন ভিক্ষুক বৃদ্ধ। 

নূরের বাড়ির ভেতর থেকে 'গুপ্তধন' পাওয়ার পর গ্রামবাসীরা এখন সেই টাকা গুনতে ব্যস্ত। সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নূরের বাড়ির ভেতর থেকে যে টাকা পাওয়া গিয়েছে তা ব্যবহার করেই তাঁকে একটি সুন্দর ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। 

নূরের প্রতিবেশী মহম্মদ  হানিফ বলেন, "শীতে নূরকে প্রচন্ড কষ্ট পেতে দেখে আমরা সকলে মিলে ওঁর বাড়িটি সারিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিছুদিন আগে এই কাজের জন্য নূর আমাকে ২৬ হাজার টাকা দিয়েছিল। কিন্তু ও বলেনি যে, বাড়ির ভেতরে বস্তা ভর্তি টাকা মাটি চাপা দিয়ে লুকিয়ে রেখেছে। কারিগররা মাটি কাটার কাজ শুরু করতেই ওঁর ঘরের ভেতর থেকে গুপ্তধন উদ্ধার হয়েছে। বস্তার মধ্যে  প্রচুর ১০ , ২০ , ৫০ , ১০০ টাকার নোট এবং কয়েন রয়েছে। আমরা সকলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই টাকা দিয়েই ওঁর বাড়ি সারানোর কাজ হবে।"
 
মামুন কবীর নামে ওই গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, "বছর দু'য়েক আগে 'ছোট বুবা'র (নূর ইসলামের ডাকনাম ) দাদা লুৎফল হকের মৃত্যুর পরও ওঁর বাড়ি থেকে এরকম ভাবেই বস্তার মধ্যে কয়েক লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সেই টাকার কী হয়েছে আমরা জানি না। গ্রামবাসীরা অনেকেই মনে করতেন নূর ইসলামের বাড়িতে অনেক টাকা রয়েছে। কিন্তু এভাবে বস্তার মধ্যে মাটির তলায় যে টাকা লুকিয়ে রাখা থাকবে তা আমাদের অনুমান ছিল না।'

গ্রামবাসীরা জানান, এক সময় তাঁরা গ্রামে নূরের দাদা-বৌদি এবং স্ত্রীকে দেখেছেন। বেশ কিছুদিন আগেই স্ত্রী নূরকে ছেড়ে কোথাও চলে গিয়েছেন। বর্তমানে নূরের দাদা -বৌদি মারা গিয়েছেন। 
 
নাসিরউদ্দিন শেখ নামে ওই গ্রামের অপর এক বাসিন্দা বলেন, "আমাদের  গ্রামে নূর ইসলামকে কেউ 'ফড়িং' কেউ বা 'ছোট বুবা' বলে ডাকে। দুপুরবেলাতে প্রতিদিনই  উনি আমার বাড়িতেই খেতেন। এ বছরের শীতে বাড়ির উঠোনে একটা কাঠের উপর চট পেতে রোজ রাতে ঘুমাতেন। তা দেখে আমরা গ্রামবাসীরা প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলাম। সেই কারণে সকলে উদ্যোগ নিয়ে ওঁর বাড়ি মেরামতি উদ্যোগ নিয়েছি। তখনই ওঁর ঘরের মধ্যে থেকে 'গুপ্তধন' পাওয়া গিয়েছে।"

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, ভিক্ষুক নূরের ঘর থেকে প্রায় দু'লক্ষ টাকার বেশি কয়েন এবং নোট পাওয়া গিয়েছে।