আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে কর্নাটকের বেঙ্গালুরুতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হলেন জেলার সাত পরিযায়ী শ্রমিক। গুরুতর আহত অবস্থায় বর্তমানে তাঁরা সকলে বেঙ্গালুরু সিটি মার্কেটের কাছে একটি সরকারি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। 

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত পরিযায়ী  শ্রমিকদের নাম মিনারুল শেখ (৩৫),জিয়াবুর শেখ (৩৫), হাসান মন্ডল (৪২), তাজিবুর শেখ (৩১), নুরজামাল শেখ (২০) ,শাফিজুল শেখ (৩৫) এবং জাহিদ আলী (৩২)। আহত জাহিদ আলীর বাড়ি মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থানা এলাকার খিদিরপুর গ্রামে। বাকি ছ'জন পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়ি বহরমপুর থানার রাজধরপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত পাঁচ পীরতলা গ্রামে।

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুজো মিটিয়ে অফিস খুলতেই মেট্রোয় বিভ্রাট! মঙ্গলেই থমকে গেল দক্ষিণেশ্বর-নোয়াপাড়ার পরিষেবা
 
বেঙ্গালুরুর সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় আহত সাত পরিযায়ী শ্রমিকের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। তাঁদের শরীরের প্রায় ৮০ - ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় এক মাস আগে হাসান মণ্ডল নামে এক ঠিকাদারের অধীনে কাজ করার জন্য মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে বেশ কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক বেঙ্গালুরুর  বিরডি এলাকায় গিয়েছিলেন। 

সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু পরিযায়ী শ্রমিক সেখানে আগে থেকেই একটি বহুতল নির্মাণের কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। যে এলাকায়  ওই বহুতল নির্মাণের কাজ চলছে তার পাশেই একটি ছোট ঘর তৈরি করে মুর্শিদাবাদের পরিযায়ী শ্রমিকেরা থাকতেন।
বেঙ্গালুরুতে কর্মরত  তারিক আজিজ নামে মুর্শিদাবাদের এক পরিযায়ী শ্রমিক বলেন,' বিরডি এলাকায় যে ঘরে আমাদের জেলার ৭ জন পরিযায়ী  শ্রমিকেরা থাকছিলেন সোমবার গভীর রাতে সেখানে কোনওভাবে  আগুন লেগে যায়। আমাদের জেলার পরিযায়ী শ্রমিকেরা গভীর ঘুমে  থাকায় তাঁরা ঘর থেকে বের হতে পারেননি। সকলেই ঘুমের মধ্যেই গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হন।'
 
তিনি বলেন, 'এই ঘটনার খবর পেয়ে অন্যান্য নির্মাণস্থলে কর্মরত মুর্শিদাবাদ জেলার অন্য পরিযায়ী শ্রমিকেরা তাঁদের উদ্ধার করে বেঙ্গালুরুর হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন।' ওই পরিযায়ী শ্রমিক বলেন, 'আহত এক শ্রমিকের কাছ থেকে আমি জানতে পেরেছি গতকাল তাঁরা যে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে রান্না করতেন সেটি সকালে শেষ হয়ে যায়। কাজ শেষে সন্ধে নাগাদ বাড়ি ফিরে ওই সাত শ্রমিক একটি নতুন  গ্যাস সিলিন্ডার লাগিয়ে রোজকার মতো রান্নাবান্নাও করেন।'
 
তিনি বলেন, 'খাওয়া শেষে সমস্ত শ্রমিক যে যার মত করে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত দেড়টা- দু'টো নাগাদ হঠাৎ করেই  শ্রমিকেরা বুঝতে পারেন ঘরের মধ্যে আগুন লেগে গিয়েছে। কিন্তু  তাঁরা নিরাপদে বের হওয়ার আগেই দেহের  বেশিরভাগ অংশই পুড়ে যায়। ঘরে থাকা সমস্ত জিনিসও পুড়ে গিয়েছে।' শ্রমিকদের আশঙ্কা নতুন সিলিন্ডার থেকে কোনওভাবে গ্যাস লিক হয়ে আগুন লাগার ঘটনাটি ঘটেছে। 
 
রাজধরপাড়া অঞ্চলের পঞ্চায়েত সদস্য খাইরুল শেখ বলেন, 'পরিবারের লোকেদের ভাল রাখার জন্য একটু বেশি টাকা রোজগারের আশায় এই গ্রাম থেকে বহু যুবক বর্তমানে বেঙ্গালুরুতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছেন। আমরা জানতে পেরেছি  গতকাল রাতে সাতজন পরিযায়ী শ্রমিক যখন ঘুমিয়ে ছিলেন সেই সময় একটি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে এবং তাতেই সকলে  গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন।' স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে হাসান মণ্ডল নামে পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা বেঙ্গালুরুর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।