মিল্টন সেন, হুগলি,১৪ নভেম্বর: রাস্তার মোড়ে বিলি করা হলো রসগোল্লা। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে রসগোল্লা খেলেন সাধারণ মানুষ। কয়েকজন স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ বললেন, মিষ্টি খেলে সুগার হয়ে যেতে পারে। পাল্টা মিষ্টি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, মিষ্টি খেলে সুগার হয়না, বরং সুগার হলে মিষ্টি খেতে নেই। রসগোল্লার জিআই স্বীকৃতির অষ্টম বর্ষে 'রসগোল্লা দিবস' পালন করল সতন্ত্র হুগলি জেলা মিষ্টি ব্যবসায়ী সমিতি। চুঁচুড়া ঘড়ির মোড়ে পঞ্চাশ হাজার রসগোল্লা বিলি হল। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আট থেকে আশি সকল শহরবাসী সেই রসগোল্লা খেলেন চেটেপুটে।

আজ ১৪ নভেম্বর। বিশ্ব ডায়াবেটিস ডে। মিষ্টি ও মধুমেহ রোগের সম্পর্কের যোগ আর নতুন করে বলার দরকার নেই। কিন্তু এই দিনটি যে অন্য কারণেও বিখ্যাত। কারণ আজ রসগোল্লা দিবস। হ্যাঁ, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এই দিনেই পালিত হয় রসগোল্লা দিবস। কারণটাও বিশেষ। জিআই ট্যাগ। বাংলার মিষ্টি জগতসেরা। ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর জিআই ট্যাগ পায় বাংলার রসগোল্লা। সেই স্বীকৃতিকে সম্মান দিতেই রসগোল্লা দিবস পালন। রসগোল্লা পশ্চিমবঙ্গের না ওড়িশার? এই নিয়ে ধুন্ধুমার লড়াই চলেছিল বহুদিন। শেষমেশ জিতেছে বাংলাই। রসগোল্লা, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি ১৪ নভেম্বর শিশু দিবসও। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর জন্মদিন। 

রসগোল্লা তুমি কার? জি আই স্বীকৃতির দাবি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। সেই নিয়ে দীর্ঘ আইনি টানাপোড়েন চলেছে। অবশেষে আট বছর আগে ওড়িশাকে হারিয়ে জিআই স্বীকৃতি ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলা। তার পর থেকেই রসগোল্লা দিবস পালন করার রেওয়াজ শুরু হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী শৈবাল মোদক ও অমিতাভ দে'রা বলেন, "আমরা সকলে মিলে এই দিনটিকে পালন করছি। এবার তাই মানুষকে আনন্দের সঙ্গে মিষ্টি খাওয়ানো হচ্ছে। আগামী দিনে এভাবেই মিষ্টি বিলি করা হবে। এরপর বৃদ্ধাশ্রম অনাথ আশ্রমেও দেওয়া হবে।" মিষ্টি খেলে সুগার হয় এমন ধারনা আছে অনেকেরই। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের দাবি সেই ধারণা ঠিক নয়। তবে তা বেশি খেলে মোটা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এটি খেতে হবে মেপে। রসগোল্লা যিনি প্রথম তৈরী করেছিলেন সেই নবীন দাসের জন্মদিন আজ। একই সঙ্গে, ডায়াবেটিস ডে, শিশু দিবস। অনেক শিশু খুশি মনে রসগোল্লা খায়। তাই এদিন 'রসগোল্লা দিবস' পালন করা হয় থাকে।

প্রসঙ্গত, রসে ভেসে থাকা তুলতুলে নরম ছানার গোল্লা দিয়ে শতকের পর শতক ধরে বিশ্বের মন জয় করেছে বাঙালি। রসগোল্লার সঙ্গে মিশে গিয়েছে বাঙালির ঐতিহ্য। সেই মিষ্টি নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর জিআই স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছিল। প্রতি বছর শিশু দিবসের পাশাপাশি এই দিনটি বাঙালির কাছে রসগোল্লা দিবস হিসেবেও বিখ্যাত। অভিনব স্বাদের হরেক রসগোল্লা দিয়ে আজ উদযাপনে মেতেছে জেলা থেকে শহর ও শহরতলির ভিয়েনঘরগুলি। কোথাও রাস্তায় রসগোল্লা দিয়ে বিনামূল্যে মিষ্টিমুখের আয়োজনও হচ্ছে। 

১৪ নভেম্বরে বিভিন্ন রকমের রসগোল্লা দিয়ে দিনটি উদযাপনের করেছে জয়নগর, বহুরু, দক্ষিণ বারাসতের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানগুলি। তালিকায় আছে সাদা রসগোল্লার সঙ্গে পেস্তা, কমলা, ব্ল্যাক কারেন্ট, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, কেশর, গন্ধরাজ, বাটারস্কচ, আনারস, আম, চকোলেট, গুড় ও নানা রকম স্বাদের রসগোল্লা। 

সারা বছর রসগোল্লা পাওয়া গেলেও, এই দিনে ক্রেতাদের উৎসাহ থাকে চোখে পড়ার মতো। রসগোল্লা দিয়ে উৎসবের আয়োজন হচ্ছে। রসগোল্লায় কাঁচালঙ্কা, পুদিনার স্বাদ‌গন্ধ নিয়ে ইতিমধ্যেই ক্রেতারা দারুণ উৎসাহিত। এ বিষয়ে জয়নগরের প্রসিদ্ধ মিষ্টি ব্যবসায়ী রঞ্জিত ঘোষ জানান, এই রসগোল্লা দিবস মিষ্টির জগতে বিশেষ একটি দিন। আমরা এই রসগোল্লা দিবস জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করি। এই রসগোল্লা দিবস উপলক্ষে কুড়িটিরও বেশি ভিন্ন স্বাদের রসগোল্লা আমরা প্রস্তুত করি। রসগোল্লা নিয়ে বাংলা এবং ওডিশার দীর্ঘ লড়াইয়ের পর রসগোল্লা নিয়ে জিআই ট্যাগ পায় বাংলা। বাংলা ও বাঙালির কাছে এই দিনটি সেজন্যই একটি বিশেষ দিন । বাঙালি মানেই হল  রসগোল্লা। রসগোল্লা ছাড়া বাঙালির অস্তিত্ব সংকটে। কারণ এই মিষ্টির সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর জন্ম থেকে মৃত্যু। জন্মালেও রসগোল্লা খাওয়ানো হয় আবার শ্মশান থেকে ফিরলেও হাতে দেওয়া হয় রসগোল্লা।