আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিতর্কিত জমিতে ধান চাষ এবং সেই জমি থেকে ধান কাটা নিয়ে সংঘর্ষের জেরে শুক্রবার দুপুরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল মুর্শিদাবাদের কান্দি থানা এলাকার গোকর্ণ -মাঝারের ধার এলাকা।
গ্রামবাসীদের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন কান্দি থানার আইসি মৃণাল সিনহা-সহ কমপক্ষে আরও তিনজন পুলিশ আধিকারিক। অন্যদিকে গ্রাম্য সংঘর্ষে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে দু'পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। আহতদের অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সূত্রের খবর, কিছু গ্রামবাসী আইসি-র মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করেছেন।
ঘটনার পর পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নেতৃত্বে বিশাল কমব্যাট ফোর্স এবং র্যাফ বাহিনী ইতিমধ্যেই গ্রামে প্রবেশ করতে শুরু করে দিয়েছে। কান্দি থানার আইসিকে চিকিৎসার জন্য কান্দি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তাঁর মাথায় এবং শরীরের একাধিক অংশে গুরুতর চোট রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। হামলার ঘটনায় এক হোমগার্ডের হাত ভেঙে গিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাঝারের ধার গ্রামে একটি তিন বিঘা চাষের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাজের আলি নাম এক ব্যক্তির সঙ্গে ওই গ্রামের এক মহিলার বিবাদ চলছে। দু'পক্ষেরই দাবি ওই জমি তাদের পূর্বপুরুষেরা দীর্ঘদিন ধরে ভোগ দখল করে আসছেন এবং এই মুহূর্তে ওই জমির মালিকানার কাগজ তাঁদের কাছে রয়েছে।
জমির মালিকানা সংক্রান্ত বিবাদ মেটানোর জন্য দু'পক্ষই ইতিমধ্যে একাধিকবার কান্দি থানার দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু সেখানে ফল না মেলায় তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
বেনুকা খাতুন নামে এক মহিলা বলেন, "আমার বাবা তাজের আলি তাঁর পূর্বপুরুষের কাছ থেকে এই জমি পেয়েছেন। আমাদের পরিবার কয়েকশো বছর ধরে এই জমির ভোগ-দখল করে আসছে। গ্রামের মাঠে আমাদের প্রায় তিন বিঘা জমিয়ে রয়েছে ,যার মধ্যে ১৮ কাঠা বর্গা জমি।'
তিনি জানান,"বৃহস্পতিবার একটি মামলার রায় আমাদের পক্ষে যাওয়ার পর আজ সকাল থেকে আমার পরিবারের সদস্যরা ওই জমিতে লাগানো ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই সময় বিরোধী পরিবারের সদস্যরা বাইরে থেকে গুন্ডা নিয়ে এসে আমাদের পরিবারের স্ত্রী এবং পুরুষদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমাদের জমিতে লাগানো ধান কেটে নেওয়ার জন্য বিরোধী পরিবারের সদস্যরা ধান কাটার মেশিন মাঠে নিয়ে এসেছিল।"
তিনি দাবি করেন, "পুলিশের উপর হামলার ঘটনার পর আমার বাবা তাজের আলি এবং আমার স্বামী সাদিকুল রহমান-সহ পরিবারের আরও বেশ কয়েকজন সদস্যের খোঁজ পাচ্ছি না। তাঁরা কোথায় রয়েছেন, কী অবস্থায় রয়েছে আমি এখনও জানিনা।"
তৃণমূল পরিচালিত কান্দি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি পার্থপ্রতিম সরকার বলেন,''ওই গ্রামে একটি পরিবারের কয়েকজন সদস্য এক মহিলার জমির দলিল জাল করে সেই জমি জোর করে নিজেদের দখলে রেখে চাষ করছিল বলে আমি শুনেছি। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে, থানায় জাল দলিল দাখিল করে ওই ব্যক্তি নিজেকে জমির মালিক বলে দাবি করেছিলেন। ওই বিতর্কিত জমির একাংশ ইতিমধ্যেই বিক্রিও করা হয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি।''
তিনি জানান, "আজ দু'দল গ্রামবাসী ওই বিতর্কিত জমি থেকে ধান কাটতে যান। সেই সময় তাঁরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ওই গ্রামে গেলে তাঁরা আক্রান্ত হয়ে বলে আমার কাছে খবর রয়েছে।'
জেলা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় জড়িতে থাকার অভিযোগে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে এই গ্রাম থেকে আটক করা হয়েছে। বিশাল পুলিশ বাহিনী ওই গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
কান্দির তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব সরকার বলেন, "পুলিশের উপর হামলার ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। দু'দল গ্রামবাসীর মধ্যে জমি এবং সেখানে থাকা ফসল কাটাকে কেন্দ্র করে বিবাদ থেকে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেই সংঘর্ষ থামাতে গেলে পুলিশের উপর হামলা হয়েছে।''
