আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাত হলেই এলাকা জুড়ে তাদের ডাক। পাছে যদি হামলা করে সেই ভয়ে ভোরবেলায় ক্ষেতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন কৃষকরা। এতটাই আতঙ্কিত যে এর হাত  থেকে বাঁচতে এলাকাবাসীকে সচেতন করল বন দপ্তর। 

শিয়ালের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তর। শীতের দিনে এই উপদ্রব বাড়ছে গত কয়েক বছর ধরে। শিয়ালের হামলা থেকে বাসিন্দাদের সচেতন করতে বর্ধমানের কুড়মুন ও তার আশপাশের  এলাকায় মাইকিং শুরু  করেছে বন দপ্তর। 

বাসিন্দাদের কাছে বন দফতরের আবেদন, সন্ধ্যার পর একা নয়, দলবদ্ধভাবে থাকুন। ছেলে-মেয়েরা টিউশন পড়তে গেলে তাদের সঙ্গে থেকে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করুন। শিয়ালকে ভয় দেখানোর জন্য হাতে লাঠি রাখুন। একই সঙ্গে জানানো হয়েছে, কখনওই শিয়ালকে লাঠি দিয়ে আঘাত করবেন না। এলাকায় বন্য জীবজন্তু দেখলে বন দপ্তরে খবর দেওয়ার পরমর্শও দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েক দিন ধরে বর্ধমানের কুড়মুন, সোনাপলাশি ও তার আশপাশ এলাকার বাসিন্দারা শিয়ালের ভয়ে আতঙ্কিত। শিয়ালের হামলার ভয়ে ভোরে ধান কাটতে যেতে পারছেন না কৃষকরা। দিনের আলো থাকতে থাকতেই তাদের মাঠ থেকে ঘরে ফিরতে হচ্ছে। সোনাপলাশি গ্রামে দিলীপ সিং নামে এক ক্ষেতমজুর শিয়ালের হামলায় গুরুতর জখম হয়েছেন। এরপর বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গিয়েছে। সেই খবর পেয়ে উদ্বেগ দূর করতে এলাকায় মাইকিং করেছে বন দপ্তর।

রাত হলেই বাড়ছে শিয়ালের উৎপাত। -নিজস্ব চিত্র।

এলাকার বাসিন্দা জ্যোতিপ্রকাশ ব্যানার্জি বলেন, “এই অঞ্চলের বেশ কিছু গ্রামে শিয়ালের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। মাঠে কীটনাশক দেওয়ায় তারা কাঁকড়া, মাছ পাচ্ছে না। আমি নিজেও বাইকে করে আসার সময় শিয়ালের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছি। এজন্যই বন দপ্তর গ্রামে এসেছিল।”

গ্রামের বাসিন্দা দেবাশিস মল্লিক বলেন, “এলাকায় এসে বন দপ্তরের আধিকারিকরা খোঁজখবর নেন। জায়গাগুলি ঘুরে দেখেন। এরপর করণীয় কাজ কী তা মাইকিং করে জানান।”

আতঙ্কিত এলাকার বাসিন্দাদের কয়েক জন জানিয়েছেন, তাঁরা যতটা সম্ভব দল বেঁধে যাতায়াত করার চেষ্টা করছেন। ছেলেমেয়েদের একা ছাড়া হচ্ছে না।

বন দপ্তরের আধিকারিকরা শিয়াল উপদ্রুত এলাকাগুলি ঘুরে দেখেন। সেই সব এলাকার ছবিও তোলেন। শিয়ালের হামলা কীভাবে ঠেকানো যাবে সে ব্যাপারে বাসিন্দাদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন। বন দপ্তর পাশে দাঁড়ানোয় কিছুটা আশ্বস্ত বাসিন্দারা।

প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারি মাসে কোচবিহারে শীতলকুচি এলাকায় শিয়ালের উপদ্রবে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছিল বাসিন্দাদের। শীতলকুচির লালবাজার এবং ছোট শালবাড়ি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। স্থানীয়রা জানান, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে শিয়াল দেখা গেলেও এভাবে কোনওদিন তারা আক্রমণ করেনি। এই শিয়ালটি এদিন আচমকাই তেড়ে এসে আক্রমণ করে। পালাতে গেলে রীতিমতো পিছনে ধাওয়া করে কামড়ে দেয়। ক্ষ্যাপা শিয়ালের কামড়ে আহত হন সাতজন।