সুদীপ কুমার ঘোষ, বারাসত: উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে মূক ও বধির এক নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় অদ্ভুত ব্যাখ্যা দিলেন ওই এলাকার সিপিএম নেতা আব্দুল হাকিম। তাঁর কথায়, 'নর্মাল ধর্ষণ হলে ঠিক আছে, তবে মূক ও বধির নাবালিকার ধর্ষণ মানা যায় না।' তাঁর মতে প্রশাসন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এরকম কাণ্ড হত না। 

 

সম্প্রতি দত্তপুকুরে ধর্ষণের শিকার হয় এক নাবালিকা। ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় মূল অভিযুক্তকে। ঘটনার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ওই এলাকায় যান। শনিবার এলাকায় যায় শিশু সুরক্ষা কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল। সেইসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। সেখানেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগার পর আব্দুল হাকিম এই মন্তব্য করেন। 

 

হাকিমের এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এলাকার তৃণমূল নেতা গোপাল কাঞ্জিলাল। তিনি বলেন, 'ধর্ষণ কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। নর্মাল ধর্ষণ বলেও কিছু হয় না।' এই বিষয়ে জেলার এবং বারাসত পুরসভায় সিপিএমের বিরোধী দলনেতা বরুণ ভট্টাচার্য বলেন, 'ধর্ষণ কোনওভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আব্দুল হাকিম কী পরিপ্রেক্ষিতে একথা বলেছেন, সেটা আমি বলতে পারব না।' 

 

উল্লেখ্য, গত ২২ অক্টোবর রাজ্যে দীপাবলির উৎসবের আবহে দত্তপুকুরে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মূক ও বধির এক নাবালিকাকে ইটভাটায় নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে এক যুবকের বিরুদ্ধে। ঘটনাকে ঘিরে ওই এলাকায় তৈরি হয় ব্যাপক শোরগোল। নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে দত্তপুকুর থানার পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তকে‌। এই ঘটনায় নিন্দায় সরব হন সকলেই। রাজনৈতিক দলগুলির তরফে তাদের প্রতিনিধিদের এলাকায় পাঠানোর পাশাপাশি দোষীর কঠোর শাস্তি দাবি করা হয়। 

 

আরও পড়ুন: ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্নানঘরে দুই বোন, কোনও সাড়াশব্দ নেই কেন? দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকলেন বাবা, দৃশ্য দেখেই জ্ঞান হারালেন

 

প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে কলকাতায় ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। গত রবিবার সন্ধ্যায় গার্ডেনরিচ থানা এলাকায় এক নয় বছরের শিশু কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। বাবার অফিসে নাবালিকার একা থাকার সুযোগে তার উপর পাশবিক অত্যাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ। নক্কারজনক এই ঘটনায় অভিযুক্ত পলাতক। তাঁকে ধরতে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় পকসো ধারায় অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্যাতিতার বাবা।

 

পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৭(২)/৭৫(২)/৩৫১(২) ধারা এবং পকসো আইনের ৮ নং ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। 

 

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার বাবার সঙ্গে তাঁর কাজের জায়গায় গিয়েছিল ছোট্ট ফুটফুটে মেয়েটি। সেখানেই শৌচাগারে যায় সে। বেরিয়ে আসার পথে ফাঁকা জায়গা ও একা থাকার সুযোগে মেয়েটির উপর পাশবিক বাবার এক সহকর্মী অত্যাচার চালায় বলে অভিযোগ। এমনকী যৌন হেনস্থার কথা সকলকে জানালে পরিনাম ভাল হবে না বলেও হুমকি দেন। 

 

জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের নাম ইমতিয়াজ আলম, সে নির্যাতিতার বাবার অফিসের ম্যানেজার। থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থেকে পলাতক অভিযুক্ত ইমতিয়াজ আলম। নাবালিকাকে চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তবে, নয় বছরের মেয়েটি সুস্থ রয়েছে বলেই পুলিশ জানিয়েছে। এছাড়াও তারা জানায়, অপরাধীকে খুঁজে বের করে বিচারের মাধ্যেম দ্রুত শাস্তি দেওয়া হবে।