আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের একবার ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে মৃত্যু হল মুর্শিদাবাদের এক পরিযায়ী শ্রমিকের। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা থানার অন্তর্গত ইমামনগর-নয়নসুখ গ্রামের বাসিন্দা কাদের শেখ (৩০) নামে এক যুবক গত বেশ কয়েক বছর ধরে অন্ধ্রপ্রদেশে রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন।
 
মৃত ওই যুবকের পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে ,রাজমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করে কাদের যে টাকা রোজগার করেছিলেন তা তিনি যে কন্ট্রাক্টারের অধীনে কাজ করতেন তার কাছেই রাখা ছিল। সেই টাকা ফেরত চাওয়ার জন্য কাদেরকে অন্ধ্রপ্রদেশে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। 

মৃতের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার অন্ধপ্রদেশের একটি হাসপাতালে কাদেরের দেহের ময়না তদন্ত হচ্ছে। এরপর পরিবারের লোকেরা দেহটি গ্রামের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। মৃতের পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা ইতিমধ্যে গোটা ঘটনাটি লিখিত আকারে অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের কাছে অভিযোগ হিসেবে দায়ের করেছেন। ফরাক্কা তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম বলেন, 'কাদের শেখ আমার বিধানসভা এলাকারই একটি গ্রামের বাসিন্দা।  আমি শুনেছি  অন্ধ্রপ্রদেশে কাজে গিয়ে ওই যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। মৃতের পরিবারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আমার কথা হয়েছে।  আমরা গোটা বিষয়টি তদারকি করছি। আমার তরফ থেকে মৃত ওই যুবকের দেহ গ্রামের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।'

আরও পড়ুন: এবার পাকিস্তান চালাবে সেনাবাহিনী? খবর চাউর হতেই মুনির বলে দিলেন, 'তিনি আমাকে দেশের রক্ষক হিসেবে গড়েছেন'
 
বছর ত্রিশের কাদের শেখ গত বেশ কয়েক বছর ধরেই পরিযায়ী  শ্রমিক হিসেবে অন্ধপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন বলে জানা গিয়েছে। কাদেরের বাড়িতে স্ত্রী তাজলেমা বিবি ছাড়াও রয়েছে তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে। কাদেরের বড় মেয়ের বয়স ১৩ বছর এবং সব থেকে ছোট ছেলের বয়স তিন বছর। পরিবারের আর্থিক হাল ফেরানোর জন্য গত বেশ কয়েক বছর ধরেই সে বছরের বেশিরভাগ সময় অন্ধ্রপ্রদেশে রাজমিস্ত্রির কাজ করত।
 
মৃত কাদের শেখের দিদি গোলতারা বিবি বলেন,' অন্ধপ্রদেশে যে ঠিকাদারের অধীনে আমার ভাই কাজ করত তার কাছে মজুরি বাবদ সে প্রায় ৫ লক্ষ টাকা পেত। দীর্ঘদিন ধরে কাজ করলেও বকেয়া টাকা ওই ঠিকাদার ভাইকে দিচ্ছিল না।'
 
তিনি জানান,' গত ২৩ দিন আগে আমার ভাই মুর্শিদাবাদ ছেড়ে অন্ধপ্রদেশে নিজের কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছিল। তার ইচ্ছা ছিল ঠিকাদারের কাছ থেকে বকেয়া থাকা প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা নিয়ে জেলায় ফিরে আসবে এবং বাড়ির কাছে ছোটখাটো কোনও একটা ব্যবসা খুলবে। কিন্তু গতকাল আমরা জানতে পেরেছি অন্ধপ্রদেশে একটি রেল লাইনের ধারে আমার ভাইয়ের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে।'
 
গোলতারা বলেন,' গত ১৪  অগাস্ট ভাইয়ের সঙ্গে পরিবারের লোকেদের শেষবারের মতো কথা হয়েছিল। সেই সময় ভাই জানিয়েছিল সে ভালো রয়েছে এবং ঠিকাদারের সঙ্গে  বকেয়া  থাকা টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে তার আলোচনা চলছে।'
 
তিনি বলেন,'পরে আমরা জানতে পেরেছি ঠিকাদারের একজন কর্মী আসিফ শেখ আমার ভাইকে ফোন করে একটি জায়গায় দেখা করতে বলে। আমার ভাই সেই সময়ে ঘরে রান্না করছিল বলে সে যেতে রাজি হয়নি। এর কিছুক্ষণ পর আসিফ কয়েকজন লোক নিয়ে এসে আমার ভাইকে একটি গাড়ি করে নিয়ে যায়।'
 
গোলতারার অভিযোগ ,'এরপর ঠিকাদারের লোকেরা আমার ভাইয়ের হাত পা বেঁধে তাকে বেধড়ক মারধর করে এবং ঘটনাস্থলেই কাদেরের  মৃত্যু হয়। তবে এই মৃত্যুকে আত্মহত্যা প্রমাণ করার জন্য ঠিকাদার এবং তার লোকজন কাদেরের   দেহ রেল লাইনের পাশে রেখে দেয়। পরে তারা বিভিন্ন জায়গায় দাবি করেছে কাদের রেল লাইনে আত্মহত্যা করেছে। তবে আমরা নিশ্চিত আমার ভাইকে যাতে টাকা ফেরত দিতে না হয় সেই কারণেই ঠিকাদার -আসিফ এবং তার দলবল কাদেরকে পিটিয়ে খুন করেছে। আমরা এই ঘটনার ন্যায় বিচার চাইছি।'


প্রসঙ্গত চেন্নাইতে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতে গিয়ে দিন দুই আগে মোমিন শেখ নামে হরিহরপাড়ার এক যুবকের বিদ্যুৎপৃষ্ট  হয়ে মৃত্যু হয়।  ওই ঘটনায় আরও ৭ জন পরিযায়ী শ্রমিক জখম হয়ে বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। প্রায় তিন মাস আগে ললিতপুরের গ্রামের বাসিন্দা জনৈক আশিক শেখ চেন্নাইতে কাজ করতে গিয়ে লোহার রড কাটার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। গত মঙ্গলবার চেন্নাইতে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় স্বরুপপুর মাঠপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাদ্দাম শেখের। এবার এই তালিকায় যুক্ত হল ফরাক্কার কাদেরের নাম।