আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরবঙ্গ বন্যায় তছনছ হওয়ার প্রায় এক মাস পর ফের উত্তরবঙ্গ সফরে আসতে চলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সম্প্রতি বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই অঞ্চলটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

এখন জল নেমে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উন্নয়নের কাজ বাকি রয়েছে। সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে গোটা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন বলে জানা গিয়েছে। এমনকি, উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকও করবেন তিনি।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করবেন বলে সূত্রের খবর। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, মমতা ব্যানার্জি কলকাতা থেকে আগামী সোমবার বাগডোগরার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।

সেখান থেকে সড়ক পথে শিলিগুড়ি পৌঁছে তিনি জেলা প্রশাসন এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করবেন। এই বৈঠকটি উত্তরবঙ্গের  সচিবালয় উত্তরকন্যার ভবনে অনুষ্ঠিত হবে।

ইতিমধ্যেই উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলার জেলাশাসকদের সভায় যোগদানের জন্য নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে নবান্নের তরফে। সম্প্রতি ঝড় এবং ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে দার্জিলিং এবং মিরিক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আবার কেউ কেউ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। উল্লেখ্য, মমতা ব্যানার্জি এই দুর্যোগের পরেই দু’বার উত্তরবঙ্গ সফর করেছেন এবং মৃতদের পরিবারকে হোমগার্ডে চাকরির জন্য নিয়োগপত্র হস্তান্তর করেছেন।

সূত্রের খবর, এই সফরে মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ৫ লক্ষ টাকার আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাদের এই সহায়তা দেওয়া হবে।

বৃষ্টি থেমে গিয়ে জল নেমে গেলেও অনেক এলাকাতেই পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। অনেক পরিবার এখনও রাজ্য সরকারের দেওয়া ত্রিপলের নিচে বাস করছে এবং কমিউনিটি রান্নাঘরে খাবার খাচ্ছে।

বন্যায় তাদের বাড়িঘর এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ভেসে গেছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের লক্ষ্য উত্তরবঙ্গে পুনর্বাসন এবং ত্রাণ কাজের অগ্রগতি সরাসরি মূল্যায়ন করা বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

প্রথম দফার সফরে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, ভয়াবহ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি এবং নিহতদের পরিবারগুলিকে কীভাবে, কোন উপায়ে সাহায্য করবে রাজ্য সরকার।

এরপর নাগরাকাটায় দুর্যোগে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রসঙ্গে টানলেন ভুটানের প্রসঙ্গও।

৬ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দুর্যোগে নিহতদের পরিবারগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য সরকার, সঙ্গেই পরিবারের এক সদস্যকে স্পেশ্যাল হোমগার্ডের চাকরি দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা করেন।

পরে নাগরাকাটায় মমতা বলেন, ‘যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবারকে ইতিমধ্যেই আমরা পাঁচ লক্ষ টাকা করে দিয়েছি, আমি বলে গিয়েছিলাম, মৃতদের পরিবারের এক সদস্যকে চাকরি দেওয়া হবে। নাগরাকাটায় আমি চাকরি প্রস্তুত করে নিয়ে এসেছি, আমি আজকে তা দিয়ে দেব।’  

নাগরাকাটার টন্ডু, বামনডাঙা এলাকায় যান মুখ্যমন্ত্রী। এরপর বন্যা বিধ্বস্তদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। নিজে হেঁটে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন সরেজমিনে। পাশাপাশি বন্যা দুর্গতদের হাতে ত্রাণ তুলে দেন।

বন্যা দুর্গতরা এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্কুলের সমস্যা-সহ একাধিক সমস্যার কথা তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী খুব দ্রুত স্কুলের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানান।

দুর্যোগে যাঁদের কাগজপত্র হারিয়ে গিয়েছে, সেসবের জন্য আলাদা ক্যাম্প করছে রাজ্য সরকার, এদিন তাও জানান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘যাঁর যা হারিয়েছে, সেগুলো লেখান, তাহলে আপনারা ডুপ্লিকেট কাগজ পাবেন।’

সাতজন নিহত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের একজনের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন। এদিন নাগরাকাটা থেকে বেরিয়ে চালসায় দাঁড়িয়ে পড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়।

সেখানেও বন্যা দুর্গতদের হাতে ত্রাণ তুলে দেন। এদিনও মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভুটানের জলে এত বড় ঘটনা ঘটেছে। আমরা অনেকদিন ধরে বলছি ইন্দো-ভুটান রিভার কমিশন করা উচিত, যাতে বাংলাকে সদস্য রাখা উচিত। আমাদের চাপেই ১৬ তারিখে একটি বৈঠক হচ্ছে, যতদূর জানি। আমরা অফিসারকে পাঠাব।’

সেইসঙ্গেই মমতা বলেন, ‘কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই যে ভুটানের জলে এত ক্ষতি হয়েছে, আমরা চাই যে ওরা ক্ষতিপূরণটা দিক। সবটাই তো আমাদের করতে হয়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে। না দিল্লি এক পয়সা দেয়, না কেউ।’