আজকাল ওয়েবডেস্ক: গত বেশ কিছুদিন ধরে স্কুল ছুটির পর বা স্কুলে ঢোকার সময় বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্রীদের নিয়মিত 'উতক্ত'  করত এলাকার কিছু যুবক। স্কুল কর্তৃপক্ষ বা অভিভাবকেরা যখনই বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়  থানার দ্বারস্থ হয়েছেন , পুলিশ এসে এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে। কিন্তু সেই নজরদারি কিছুটা শিথিল হলেই ফের 'রোড রোমিও'দের অত্যাচার বেড়ে যায়। 

বহুবার এই  রোমিওদের সাবধান করেও কাজ না হওয়ায় এবার তাদের শিক্ষা দিতে অভিনব পন্থা নিলেন মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা থানার একটি প্রত্যন্ত গ্রামের কিছু বাসিন্দা। 

গত বেশ কিছুদিন ধরে বেলডাঙা থানার অন্তর্গত কুমারপুর ভোলানাথ মেমোরিয়াল হাই স্কুলের বেশ কিছু ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়া এবং সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে  বিভিন্ন গ্রামের কয়েকজন যুবক 'ইভটিজিং' করত বলে অভিযোগ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবকেরা স্কুল শুরু এবং ছুটির সময় বাইক নিয়ে স্কুলের আশেপাশে ঘোরাফেরা করত এবং যখন  যে ছাত্রীকে তাদের ভালো লাগত তার উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিত বিভিন্ন রকমের মন্তব্য। অভিযোগ, কখনও কখনও  এই রোড রোমিওরা কয়েকজন ছাত্রীর হাত পর্যন্ত টেনে ধরেছিল। 

এই ঘটনা দেখতে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা বহুবার প্রতিবাদ করলে তারা এতটাই 'উগ্র আচরণ' করত যে উল্টে  এলাকাবাসীরা তাতে ভয় পেয়ে যেতেন। স্থানীয় কিছু  বাসিন্দা-সহ কয়েকজন ছাত্রীর অভিভাবক বহুবার সাবধান করার পরও রোমিওরা নিজেদের না শোধরানোর কারণে  দিন দুই আগে এরকমই প্রায় ২০ জন যুবককে ধরে তাদের 'উচিত শিক্ষা' দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। 

সমাজমাষ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে (aajkaal.in এর সত্যতা যাচাই করেনি) দেখা যাচ্ছে বেলডাঙার ওই  স্কুলের মেয়েদেরকে উত্তক্ত করার জন্য  কয়েকজন যুবককে স্থানীয় একটি সেলুনে নিয়ে গিয়ে মাথা ন্যাড়া করে তাদের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওই ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে নিজেদের 'কুকীর্তি'  ঢাকতে ব্যস্ত ওই যুবকেরা দ্রুত মোটরসাইকেল চালিয়ে এলাকা ছেড়ে পিঠটান দিচ্ছে। নাম না প্রকাশের শর্তে এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা জানিয়েছেন , রোমিওদের শায়েস্তা করার জন্য স্থানীয় বাসিন্দা এবং কিছু অভিভাবক উদ্যোগ নিলেও সেই উদ্যোগে পূর্ণ সমর্থন ছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের। তাই  একের পর এক রোড রোমিওকে সেদিন সেলুনে বসিয়ে  মাথা ন্যাড়া করানোর সময় তারা কোনও 'ট্যাঁ ফুঁ' করতে পারেনি বলেও এলাকাবাসী দাবি করেছেন। সূত্রের খবর, যে স্কুলের সামনে এই রোমিওদের এই 'অত্যাচার' প্রায় নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল সেখানে প্রায় ৪৮০০ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক ছাত্রী। ছাত্রীদের উত্তক্ত করার জন্য কিছু যুবক বিভিন্ন গ্রাম থেকে ওই স্কুলের সামনে জড়ো  হত বলে স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন। 

বেলডাঙার তৃণমূল বিধায়ক হাসানুজ্জামান শেখ বলেন, ''গোটা ঘটনার কথা আমি শুনেছি। প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত তার বাড়ির ছেলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কী করছে সেদিকে নজর রাখা। তাহলে  সামাজিক পরিবেশ সুস্থ থাকবে।"
তাঁর কথায়,"আমার নজরে এসেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশেষত যেখানে মেয়েরা পড়াশোনা করে তার সামনে প্রায় প্রত্যেক দিনই প্রচুর যুবক সকালে দশটা থেকে বারোটা পর্যন্ত এবং বিকেলে তিনটে থেকে চারটে পর্যন্ত আড্ডা মারে। কেন তারা এই কাজ করে আমার জানা নেই। প্রশাসন নিয়মিত এই ধরণের যুবকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিচ্ছে।''

বেলডাঙার ওই বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মহম্মদ মুস্তফা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরে কিছু যুবক স্কুল শুরু এবং ছুটির সময় মেয়েদের লক্ষ্য করে 'কু-মন্তব্য' করত। ছাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনকেও আমরা জানাতে বাধ্য হয়েছি। তবে কিছু যুবক নিজেদেরকে না শোধরানোর কারণে এলাকাবাসীরা তাদের মাথা ন্যাড়া করে শাস্তি দিয়েছেন।  

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দিন দুই আগে মাথা ন্যাড়া করার এই ঘটনাটি ঘটার পর থেকে ওই স্কুলের সামনে আর রোড রোমিওদের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।  গোটা ঘটনার ভিডিও সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ওই স্কুলের নিকটবর্তী অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকেও রোমিওরা হঠাৎ করে উধাও হয়ে গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।