আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রায় ৬০ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর মঙ্গলবার সকালে উদ্ধার হল মুর্শিদাবাদের ভরতপুর থানার অন্তর্গত সৈয়দকুলুট গ্রামের আট বছরের এক ছাত্রীর দেহ। শনিবার সন্ধে নাগাদ বাড়ি থেকে খেলতে বের হয়ে ওই নাবালিকা নিখোঁজ হয়ে যায়। তারপর থেকেই তার সন্ধানে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ কুকুর দিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছিল। এর পাশাপাশি এলাকার একাধিক পুকুরে এবং স্থানীয় একটি নদীতে জাল ফেলে এবং ডুবুরি নামিয়েও ওই নাবালিকার সন্ধানে তল্লাশি চালানো হয়। মৃতা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৬০ ঘণ্টায় ভরতপুর থানার পুলিশ যে সমস্ত মাঠে তল্লাশি চালিয়েছিল তার মধ্যে একটি এলাকায় মঙ্গলবার সকালে ওই নাবালিকার দেহ পড়ে থাকতে দেখেন কিছু গ্রামবাসী। ঘটনার খবর পাওয়ার পরই দ্রুত এলাকায় পৌঁছয় ভরতপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। ইতিমধ্যে তারা দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে। 

জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্তে আমরা নিশ্চিত ওই নাবালিকাকে খুন করা হয়েছে। কিন্তু কী কারনে এই খুন তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। 
ছাত্রীকে খুন করার আগে তার উপর কোনও যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছিল কি না সেই বিষয়ে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয়। ভরতপুর থানার এক আধিকারিক জানান, দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে এই বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে। এই খুনের ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেপ্তার না হলেও পুলিশ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে বলে জানা গিয়েছে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সন্ধে নাগাদ সৈয়দকুলুট গ্রামের বাসিন্দা ওই ছাত্রী বাড়ি থেকে খেলতে বের হয়। মিনিট ২০ পর পরিবারের লোকজন তাকে খুঁজতে শুরু করলেও কোথাও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।  এরপর সেদিন রাতেই পরিবারের লোকেরা ভরতপুর থানার দারস্থ হন। 

রবিবার সকাল থেকে ভরতপুর থানার পুলিশ গ্রামের বিভিন্ন মাঠে কুকুর নিয়ে তল্লাশি চালায়। কোথাও ওই নাবালিকার সন্ধান না পেয়ে এলাকার কয়েকটি পুকুরে জাল ফেলে ওই নাবালিকার সন্ধানে পুলিশের তরফ থেকে তল্লাশি চালানো হয়। এর পাশাপাশি চৌরীগাছা ও সালার দু'টি রেল স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশ খতিয়ে দেখে। কিন্তু কোথাও ওই নাবালিকাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

সিজগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য দুলাল শেখ বলেন, "মঙ্গলবার সকালে এক কৃষক আমাকে ফোন করে জানায় তাঁর জমির পাশে একটি নাবালিকার দেহ পড়ে রয়েছে। এরপর দ্রুত আমরা এলাকায় ছুটে আসি। খবর দেওয়া হয় পুলিশে। পরে বাড়ির লোকেরা দেহটি নিখোঁজ ছাত্রীর বলে সনাক্ত করেন।"
 
মৃতার মা বলেন, 'আমার মেয়ের কোনও শত্রু নেই। আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই। আমার ছোট্ট মেয়েকে যারা  খুন করেছে তাদের কঠোর শাস্তি চাই।' স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে যে মাঠ থেকে ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়েছে সেখানে এর আগেও পুলিশের তরফ থেকে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। কিন্তু সেদিন  তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

গ্রামবাসীদের অনুমান, ছাত্রীকে খোঁজার জন্য পুলিশ এবং গ্রামবাসীরা প্রচণ্ড তৎপর ছিলেন এবং বিভিন্ন সমাজ মাধ্যমে নিখোঁজ ওই নাবালিকার সন্ধান চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। সেই কারণে যারা তাকে অপহরণ করেছিল তারা ভয় পেয়ে যায়। সোমবার গভীর রাতে সম্ভবত তারা ওই নাবালিকাকে খুন করে মাঠের মধ্যে দেহটি ফেলে রেখে দিয়ে যায়। 

তবে পুলিশে তরফ থেকে এখনও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। ওই নাবালিকার মৃত্যু কবে হয়েছে। ভরতপুর থানার ওই আধিকারিক জানান, মৃতদেহের ময়নাতদন্তের  রিপোর্ট পেলেই স্পষ্ট হবে ওই নাবালিকাকে নিখোঁজ হওয়ার পরই খুন করা হয়েছিল না পুলিশি অভিযান শুরু হওয়ার পর তাকে খুন করা হয়েছে।